আরজি কর নিয়ে উত্তাল রাজ্য। আর তাই হয়ত অনেকেই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের খবর থেকে চোখ সরিয়েছেন। তবে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর প্রতিবেশী দেশেও ঘটে চলেছে একের পর এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। উত্তাল বাংলাদেশ এখনও যে শান্ত হয়নি, তা সোশ্যাল মিডিয়া এবং সেদেশের কিছু সংবাদমাধ্যম এবং লেখিকা তসলিমা নাসরিনের ফেসবুকের পাতায় চোখ রাখলেই সেকথা স্পষ্ট হয়ে যায়।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েই নাকি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুল বাছির ও চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন। তবে এই খবর পড়ে বিষয়টা যতটা সহজ-স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে, ঘটনা কিন্তু এক্কেবারেই তেমন নয়। তসলিমা নাসরিনের ফেসবুকের পাতায় চোখ রাখলেই দেখা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিনকে পদত্যাগ করানোর জন্য হাত রয়েছে সেদেশে মাথাচারা দিয়ে ওঠা মৌলবাদের।
Du Expresss-একটা ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন তসলিমা। যেখানে দেখা যাচ্ছে ডিনকে জোর করে পদত্যাগ করিয়ে তাঁর ঘরেই কোরান পাঠ করছে জিহাদিরা। এই পদত্যাগের কারণ হিসাবে লেখা হয়েছে, ডিন নিসার হোসেন নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় কোরান পাঠে বাধা দিয়েছেন তাই নাকি তাঁকে পদত্যাগ করিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এই ভিডিয়োর নিচে কমেন্টের বন্যা বয়ে গিয়েছে। একজন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ধীরে ধীরে মৌলবাদীদের গ্রাসে চলে যাচ্ছে’। কারোর কথায়, ‘দখলের শেষ পর্যায় আসতে খুব বেশি দেরি নেই।’
এখানেই শেষ নয়। তসলিমা আরও একটা পোস্টে লিখেছেন বাংলাদেশের চিকসা গ্রামে ইসলাম ধর্মালম্বী কিছু মানুষের জমায়েতের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার চিকসা গ্রামের মোল্লা মাতব্বররা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে চিকসা গ্রামে গান বাজনা নিষিদ্ধ। চিকসা থেকেই শরিয়ার অন্ধকার যাত্রা শুরু হলো। অন্ধকারের সৈনিকেরা খুব শীঘ্রই অন্ধকারে মুড়ে ফেলবে গোটা দেশ। মানুষ আর শ্বাস নেবার কোনও হাওয়া পাবে না। চারদিক ছেয়ে থাকবে শুধু কালো ধোঁয়ায়। কেউ কারও মুখ আর দেখতে পাবে না।’
এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের চিত্রটা আরও ভয়ঙ্কর। যাদের হাত থেকে মুক্তি পেতে ৭১-এ লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল বাংলাদেশীরা সেই মৌলবাদী পাকিস্তানিরাই নাকি বাংলাদেশের পতাকা হাতে তুলে নিয়ে বলছে, ‘তুমি কে, আমি কে? রাজাকার রাজাকার ভাই ভাই।’ তসলিমা তাই লিখেছেন, ‘যারা ৩০ লক্ষ বাঙ্গালিকে একাত্তরে হত্যা করেছিল, ২ লক্ষ বাঙালি নারীকে ধর্ষণ করেছিল, সেই হানাদারদের বাচ্চা হানাদারেরা বাংলাদেশের রাজাকারের বাচ্চা রাজাকারদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছে। একাত্তরে পাকি হানাদারদের খুন ধর্ষণের সহকারী ছিল এদেশি রাজাকারেরা। মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই।’
এই ভিডিয়ো দেখে নেটিজেনদের দাবি, ‘কিছু শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন বাংলাদেশী নাগরিকরা বাংলাদেশকে হাসিনার হাত থেকে মুক্তি দিতে গিয়ে যে মৌলবাদীদের হাতে তুলে দিয়েছেন’। কারের কথায়, ‘হাসিনা ছিলেন মন্দের ভালো, এবার বাংলাদেশের অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর হতে চলেছে।’
নির্ভিক তসলিমা তাই লিখেছেন, ‘NGOcracy. এঞ্জিওতন্ত্র। মুখোশের জন্য। মগজধোলাই হওয়া মূর্খ শিশু কিশোর ডিসপ্লের জন্য। দেশ চালাচ্ছে জিহাদিরা। সমর্থনে পাকিস্তানি আইএসআই। শীঘ্র আসছে শরিয়া আইন। মেয়েদের ঢুকে যেতে হবে বোরখায়। বাংলাস্তানে ঠাঁই নেই অমুসলিম, আহমদিয়া, সেক্যুলার, মুক্তচিন্তক, প্রগতিশীল, নাস্তিক, শিল্পী সাহিত্যিকদের।’