স্টার জলসার পর্দায় ৩০ জুলাই অর্থাৎ বুধবার থেকে সঞ্চয়ের গল্প বলতে আসছে নতুন মেগা 'লক্ষ্মী ঝাঁপি'। শুক্রবার হয়ে গেল মেগার গ্র্যান্ড লঞ্চ। ধারাবাহিকের 'ঝাঁপি'র চরিত্রে দেখা যাবে শুভস্মিতা মুখোপাধ্যায়কে, আর নায়কের ভূমিকায় থাকবেন সৌরভ চক্রবর্তী। ধারাবাহিক প্রসঙ্গে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে নানা কথা ভাগ করে নিলেন তাঁরা।
সম্প্রতি ছবি ও সিরিজেরই বেশি নজর কাড়তে দেখা যাচ্ছিল সৌরভকে। তাছাড়াও তিনি পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। পরিচালনার পাশাপাশি ছবি ও সিরিজের কাজ সামলে ফের হঠাৎ মেগায় ফেরার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন সৌরভ? এই প্রশ্নে তিনি জানান, হঠাৎ নয় বরং অনেক দিন থেকেই নির্মাতাদের সঙ্গে তাঁর কথা হচ্ছিল। তবে খানিকটা দ্বন্দ তাঁর মধ্যেও ছিল। তাই সেই দ্বন্দ কাটিয়ে, ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
নায়কের কথায়, ‘আমি শুরু দিকে একটু টেনশনে ছিলাম। অনেকদিন ধরে একটা দ্বন্দ কাজ করছিল। তারপর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। তবে একটা ভয় অবশ্যই কাজ করেছিল শুরুতে। কারণ মেগা থেকে দূরে এত দিন। ফলে মেগায় কাজ করার একটা ক্লান্তি আছে, সেটা নিতে পারব কিনা। সোজা কথায় টানতে পারব কিনা। কিন্তু এখানের পরিবেশ এতটাই ভালো, সকলের সঙ্গে এত সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে যে, কাজটা আরও সহজ বলে মনে হচ্ছে। ক্লান্তি আসছে না।’
কিন্তু মেগার কাজ সামলে সৌরভ পরিচালনার কাজ কি পাশাপাশি চালিয়ে যেতে পারবেন? এই প্রশ্নে তাঁর জবাব, ‘পরিচালনার ক্ষেত্রে হয়তো আমাকে একটু বিরতি নিতে হবে। কিন্তু প্রযোজক হিসেবে আমার কাজটা চলবে।’
তবে সৌরভ মেগায় ফিরতে অনেকটা সময় নিলেও শুভস্মিতার জন্য তা বেশে কম। তবে এ কথা উঠতেই নায়িকা আপত্তি জানিয়ে বলেন, ‘কে বলেছে এটা কম। প্রতিটা দিন অপেক্ষা করেছি। এক বছর সময় কেটেছে আমার আবার ফিরে আসার জন্য।’
নায়িকাকে এর আগে 'হরগৌরী পাইস হোটেলে' দেখা গিয়েছিল। সেই মেগা টানা অনেকটা সময় ধরে চলেছিল। টিআরপি তালিকাতেও বেশ ভালো ফল করেছিল সেই ধারাবাহিক। তাই হিট মেগা উপহার দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর কাঁধে অনেকটাই দায়িত্ব। ফলে সবটা নিয়ে কি টিআরপির চিন্তা তাঁকে ভাবাচ্ছে? প্রশ্নে শুভস্মিতার সাফ উত্তর, ‘টিআরপির বিষয়টা আমার হাতে নেই। পরীক্ষার আগে পড়াশোনা করা আমার দায়িত্ব। কিন্তু ফলাফল নিয়ে ভাবার দায়িত্ব আমার নয়। আর টিআরপির বিষয়টা পুরোটা দর্শকদের হাতে, তাই আমি তাঁদের আমাদের ধারাবাহিক দেখার জন্য অনুরোধ করতে পারি।’
তবে টানা অনেকটা সময় তাঁকে 'ঐশানী' হিসেবে পর্দায় দেখেছেন দর্শকরা। ফলে তাঁদের মনে নায়িকার একটা ছবি তৈরি হয়ে গিয়েছে। সেই ইমেজ ভেঙে ‘ঝাঁপি’ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে কীভাবে প্রস্তুতি নিলেন নায়িকা? এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রস্তুতি বলতে প্রতিদিন, প্রতিটা দৃশ্যের আগে আমি আমার ইমোশানগুলো আলাদা ভাবে কী করে ফুটিয়ে তুলতে পারি সেটাই চেষ্টা করি। তবে ‘ঐশানী’, ‘ঝাঁপি’, ‘শুভস্মিতা’ সবার মধ্যেই তো শুভস্মিতা আছে, তাই সবটা তো আলাদা করা সম্ভব নয়। তবু একটা পার্থক্য রাখার চেষ্টা করছি। আর সেটাই আমার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।’
তবে কেবল অবিনয় নয়, এই মেগায় প্রপসেরও একটা বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কারণ সেই বিশেষ প্রপসই এই ধারাবাহিকের হৃদপিন্ড। এই মেগায় লক্ষ্মীর ঝাঁপি বা ভাঁড়ের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। তবে বর্তমান দিনে এই ভাঁড়ের গুরুত্ব অনেকটাই কমেছে। কিন্তু ছোটবেলায় কি শুভস্মিতা বা সৌরভ কখনও মাটির ভাঁড়ে পয়সা জমিয়েছেন? প্রশ্নে শুভস্মিতাই অগ্রণীর ভূমিকা পালন করে বেশ উত্তেজনা নিয়ে বলেন, 'হ্যাঁ, অবশ্যই। আর সব থেকে বেশি আনন্দ পেতাম যেদিন ভাঁড় ভাঙা হত।'
তবে এখন তো আর ভাঁড়ে টাকা জমানোর চল সেভাবে নেই। কিন্তু সঞ্চয় তো মানুষের জীবনে আজও খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেটা থেকে নানা স্বপ্নপূরণও হয়। তেমন কোনও স্বপ্নপূরণের ইচ্ছে কি ভবিষতের জন্য তুলে রেখেছেন তাঁরা? প্রশ্নে প্রথমের শুভস্মিতা বলেন, মানসিক শান্তি। কারণ সঞ্চয় এক প্রকার মানসিক শান্তি আনে। জীবনে চাপ কমে।' তাঁর কথার রেশ ধরেই পাশ থেকে সৌরভ বলে ওঠেন, ‘সঞ্চয় থাকলে এমন কিছু করতে হবে না যেটা অপছন্দের।’
তবে কেবল তো অর্থ না ভালোবাসাও অনেকেই জমিয়ে রাখে। আর মেগায় নায়ক-নায়িকা মানেই সেখানে প্রেম তো আসবেই। তবে এই প্রেম পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য বাস্তবেও দু'জনের মধ্যে একটা ভালো রসায়ন থাকা দরকার। এই প্রসঙ্গে শুভস্মিতা বলেন, ‘সত্যি বলতে এটা যাঁরা কাস্টিং করেন তাঁরা বুঝে শুনেই করেন। তাঁদের কোথাও দেখে মনে হয়, এটা হয়ে যাবে হয়তো। আর সেটা হয়েও গিয়েছে, তাই সকলে খুশি, আমরাও খুশি। তাছাড়া একজন শিল্পী অন্যজনকে একটা স্বাভাবিক হওয়ার জায়গাও দেন। সেটাও আমাদের মধ্যে রয়েছে।'
ধারাবাহিকে পাড়ার বন্ধুদের মধ্যে একটা প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হতে দেখা যাবে। কিন্তু বাস্তব জীবনে কি তাঁরা কখনও পাড়ার কারুর প্রেমে পড়েছেন? প্রশ্নে একরাশ হেসে সৌরভ বলেন, ‘না না, প্রচুর বন্ধুদের পাড়ায় প্রেম হতে দেখেছি, কিন্তু আমার কখনও হয়নি।’ অন্যদিকে শুভস্মিতা বলেন, ’না আমার পাড়ায় প্রেমটা করা হয়নি। কিন্তু এটাই তো মজা, যেগুলো যেগুলো করা হয় না জীবনে, সেগুলো আমারা মেগা সিরিয়ালে বা অভিনয়ের মাধ্যমে করতে পারি।'