গোড়ালির চোটের জেরে দীর্ঘদিন ২২ গজের বাইরে থাকতে হয়েছে। চোটের এমনই পরিস্থিতি ছিল যে, একটা সময়ে ভারতের অভিজ্ঞ পেসার মহম্মদ শামি ভেবেই নিয়েছিলেন, তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে। তবু হাল ছাড়েননি। তিনি আরও একবার দেশের হয়ে খেলতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। যে কারণে তিনি ফের ক্রিকেট মাঠে ফিরে এসেছেন। ফের নতুন করে লড়াই শুরু করেছেন।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ চলাকালীন শামি গোড়ালিতে চোট পান। সেই চোটের জন্য তাঁকে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত করতে হয়। তার বাঁ-হাঁটু ফুলে যাওয়ার কারণে তিনি ১৪ মাস আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন। যার ফলে গোড়ালির চোট থেকে সেরে উঠতেও সময় লাগে তাঁর।
আরও পড়ুন: ফের ODI ম্যাচে টসে হারল ভারত, টানা ১১ বার, অবাঞ্ছিত রেকর্ড স্পর্শ, শেষ কবে টস জিতেছিলেন রোহিতরা?
আইসিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামি বলেছেন, ‘বিশ্বকাপের সময় দুর্দান্ত ফর্মে থাকা থেকে হঠাৎ অপারেশন টেবলে নিজেকে খুঁজে পাওয়া, সেই ফর্ম থেকে চোট পাওয়া- সত্যিই কঠিন সময় ছিল।’ তিনি যোগ করেছেন, ‘প্রথম দু' মাস আমার নিজেরই সন্দেহ হত, আবার খেলতে পারব কিনা! এই ধরনের চোট এবং ১৪ মাসের বিরতির পর মাঠে ফেরাটা কঠিন। ’
৩৪ বছরের বাংলার পেসার ২২ গজে ফেরেন ঘরোয়া ক্রিকেটের হাত ধরে। বাংলার হয়ে নিয়মিত খেলার পর ইংল্যান্ড সিরিজে দু'টি করে টি-টোয়েন্টি এবং একদিনের ম্যাচ খেলেছেন। জসপ্রীত বুমরাহের চোটের কারণে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের পেস আক্রমণের নেতৃত্ব দেবেন শামি। তবে সেই যন্ত্রণার দিনগুলির কথা ভুলতে পারেননি তিনি। বলেছেন, ‘ডাক্তারের কাছে আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, কত দিনে আমি মাঠে ফিরতে পারব। ডাক্তার বলেছিলেন যে, তিনি আগে আমাকে হাঁটাতে চান, তার পর জগিং এবং তার পর দৌড় শুরু করা। তবে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলার কথা ভাবা দূরের লক্ষ্য ছিল।’
আরও পড়ুন: বাবর আজম আগে না দেশ?… পাক তারকার স্বার্থপরের মতো স্লো ইনিংস খেলা নিয়ে চাঁচাছোলা প্রশ্ন প্রাক্তনীর
একজন সক্রিয় ক্রীড়াবিদ থেকে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটা- এই পরিবর্তন মেনে নেওয়া কতটা কঠিন ছিল? নিজের যন্ত্রণার কথা উগরেছেন শামি। বলেছেন, ‘আমি সব সময়ে ভাবতাম, কখন আমি আবার মাটিতে পা রাখতে পারব, এমন একজন যিনি ক্রমাগত মাঠে দৌড়তে অভ্যস্ত তিনি এখন ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটছেন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমার মনের মধ্যে অনেক ভাবনা চলত তখন। আমি কি আবার ক্রিকেট খেলতে পারব? আমি কি না খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারব?’
আরও পড়ুন: ব্যাটে-বলে হতশ্রী দশা, ঘরের মাঠে লজ্জার হার দিয়ে অভিযান শুরু করল পাকিস্তান
শামি দাবি করেছেন যে, দু'মাস পর, তিনি অনুভব করেছিলেন, আবার তিনি হাঁটতে শিখছেন। কিন্তু যখন তাঁকে মাটিতে পা রাখতে বলা হয়, তখন তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। শামি বলেছেন, ‘৬০ দিন পর যখন আমাকে মাটিতে পা রাখতে বলেছিল, আপনি আমাকে বিশ্বাস করবেন না, আমি আগে কখনও মাটিতে পা রাখতে এতটা ভয় পাইনি। মনে হচ্ছিল যেন, আমি আবার নতুন করে হাঁটতে শিখছি একটি শিশুর মতো।’
তবে দেশের হয়ে খেলার তাগিদ তাঁকে ফের অনুপ্রাণিত করেছিল। শামি দাবি করেছেন, ‘দেশের হয়ে খেলার সাহস এবং আবেগই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা ছিল। এবং আমার দেশের হয়ে খেলার তাগিদই লড়াই চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। এর জন্য সব ব্যথা সহ্য করে লড়াই করা যায়। আমার দেশের প্রতিনিধিত্ব করার আবেগ আমাকে এতদূর নিয়ে এসেছে। এটি কঠিন ছিল এবং যন্ত্রণার ছিল, কিন্তু স্থিতিস্থাপকতা এবং ধৈর্য্যের সঙ্গে আমি এই কঠিন সময় কাটিয়ে উঠেছি।’