পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের জন্য জোরদার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া দল। পার্থে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্ট ম্যাচের জন্যও দল ঘোষণা করেছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। এই দলে ডেভিড ওয়ার্নারকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর এতেই মারাত্মক চটেছেন মিচেল জনসন। মিচেল জনসন শুধু ডেভিড ওয়ার্নারের নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন তোলেননি, নিশানা করেছেন নির্বাচক কমিটির প্রধান জর্জ বেইলিকেও।
ডেভিড ওয়ার্নার সম্প্রতি বিদায়ী টেস্ট খেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর দাবি মেনে নেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। যার ফলে প্রথম টেস্টের দলে রাখা হয়েছে ওয়ার্নারকে। তার পরেই তাঁকে নিশানা করেছেন মিচেল জনসন। এক সময় অস্ট্রেলিয়া দলে ওয়ার্নারের সতীর্থ ছিলেন তিনি। এই প্রসঙ্গে তিনি টেনে এনেছেন ২০১৮ সালে স্যান্ডপেপার গেট কাণ্ডও।
‘দ্য ওয়েস্ট অস্ট্রেলিয়ান’-এ লেখা একটি কলামে অজি দল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মিচেল জনসন। তাঁর সবচেয়ে বড় ক্ষোভ ডেভিড ওয়ার্নারের নির্বাচন নিয়ে। জনসন লিখেছেন, ‘কেন ওর (ওয়ার্নারের) বিদায়ী টেস্ট খেলার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কেন একজন ওপেনারকে বিদায়ী টেস্ট খেলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে, যার গড় গত ৩৬ ইনিংসে ২৬.৭৪?’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমরা এখন ডেভিড ওয়ার্নারের বিদায়ী টেস্ট সিরিজের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। কেউ কী বলতে পারবেন, কেন? কেন ফর্মের সঙ্গে লড়াই করা একজন ওপেনার নিজেই নিজের অবসরের তারিখ ঠিক করে? অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়ের কেন্দ্রে থাকা একজন খেলোয়াড়কে কেনই বা নায়কোচিত বিদায় দিচ্ছি আমরা?’
আরও পড়ুন: পাক ক্রিকেটে তীব্র ক্ষোভ, নির্বাচকমণ্ডলীর উপদেষ্টার পদে নিযুক্ত হওয়ার একদিন পরেই চাকরি গেল সলমন বাটের
মিচেল জনসন ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের সময় ঘটে যাওয়া ‘স্যান্ডপেপার গেট’-এর কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন। জনসন দাবি করেছেন যে, ‘ওয়ার্নার একটি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন, এবং এটি দেশের জন্য লজ্জার ছিল। কিন্তু এই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ওয়ার্নার কখনও নিজের ভুল স্বীকার করেননি। যদিও ওয়ার্নার একা স্যান্ডপেপার কেলেঙ্কারিতে জড়িত ছিল না। তবে ওই সময় ওয়ার্নার দলে সিনিয়র সদস্য ছিল। এমন একজন ছিল, যে নেতা হিসাবে তার ক্ষমতা দেখাতে পছন্দ করত। এখন ও এমন ভাবে অবসর নিচ্ছে, যেটা আমাদের দেশের প্রতি একই রকম ঔদ্ধত্য ও অসম্মান।’
বেইলির সমালোচনা করতে গিয়ে জনসন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক টিম পেইনের প্রসঙ্গও তুলে এনেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সেক্সটিং-বিতর্কে ওই সময়ের অধিনায়ক টিম পেইনের ক্যারিয়ার যখন শেষ হয়ে যাচ্ছিল, তখন পেইনের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তের অংশ বেইলি হতে চায়নি। কারণ, ওরা দু'জন কাছের বন্ধু ছিল। বেইলি তখন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছেড়ে দেয় কোচ জাস্টিন ল্যাঙ্গার ও অন্য নির্বাচক টনি ডডিমেইডের ওপর।’ তিনি যোগ করেছেন, ‘তিন সংস্করণেই বেইলির সঙ্গে খেলেছে ওয়ার্নার। ওয়ার্নারকে যেভাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমালোচিত হতে হয়েছে, তাতে প্রশ্ন জেগেছে, বেইলি খেলা ছেড়ে খুব দ্রুতই দায়িত্ব পেয়ে গেছে কিনা, আর কিছু ক্রিকেটারের সঙ্গে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ কিনা?’
আরও পড়ুন: চেকমেট করার সময়েই শুধু কথা বলা উচিত- অক্ষরের রহস্যময় পোস্ট ঘিরে উঠে আসছে হাজারো প্রশ্ন
জনসনের সমালোচনার জবাবে বেইলি বলেছেন, ‘আমাকে এর কিছু অংশ পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, জনসন সুস্থই আছে। আমি অবশ্য নিশ্চিত নই। কেউ যদি দূর থেকে খেলোয়াড়েরা কীসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, দল ও কোচিং স্টাফদের পরিকল্পনা না জেনে এমন মন্তব্য করে, আর কেউ যদি দেখাতে পারে এটা বেশি লাভজনক, তাহলে এমন কথা শুনতে আমি রাজি আছি।’
২০১৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কেপটাউন টেস্টে স্টিভেন স্মিথ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক, ওয়ার্নার ছিলেন তাঁর সহকারী। সেই টেস্টে বল টেম্পারিং করে ধরা পড়েছিলেন ক্যামেরন ব্যানক্রফট। এর দায়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সেই ম্যাচের অধিনায়ক স্মিথ এবং সহ-অধিনায়ক ওয়ার্নারকে এক বছরের জন্য সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করেছিল। ব্যানক্রফটকে নিষিদ্ধ করেছিল ৯ মাসের জন্য। ওয়ার্নারের সাজা হয় আরও মারাত্মক। কোনও রকম ক্রিকেটে কখনও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কত্ব করতে পারবেন না তিনি। সংবাদমাধ্যমে সেই সময় এমনও খবর এসেছিল যে, পুরো ঘটনাটাই ওয়ার্নারের পরিকল্পনায় হয়েছিল।