যুগান্তকারী রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এবার প্রথম পক্ষের স্ত্রী নিঃসন্তান হলেও বাবার মৃত্যুর পর চাকরি পেতে পারেন দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তানও। এমনকী চাকরির জন্য আবেদন বিবেচনার ক্ষেত্রে ‘বৈধ বৈবাহিক’ সম্পর্কে জন্ম না নেওয়া সন্তানের সঙ্গে বৈষম্য করা যাবে না। এবার সাফ জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। একদিকে বৈষম্য অপরদিকে কর্মসংস্থানের নয়া দিশা দেখিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। তার ফলে আর বৈষমষ রইল না। শুধু তাই নয়, যদি ওই বিয়ে স্বীকৃত না থাকে তাহলে দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান চাকরি পাবে। সেক্ষেত্রেও বৈষম্য করা যাবে না। সেক্ষেত্রে অনুকম্পাজনিত চাকরি দেওয়া যাবে না এমন বলা যেতে পারে না।
এই বিষয়টি নিয়ে সোমবার মামলার শুনানি হয় কলকাতা হাইকোর্টে। তার প্রেক্ষিতেই বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই বৈষম্য সম্পূর্ণ নিন্দনীয়। উপার্জনকারীর মৃত্যুর পর ওই পরিবারের আর্থিক সমস্যা মেটাতে এই চাকরি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। সেখানে উপার্জনকারীর বৈধ বৈবাহিক সম্পর্কে জন্ম নেওয়া সন্তান নয় বলে ওই সন্তানকে বঞ্চিত করা যায় না। কোন সূত্রে সন্তানের জন্ম হয়েছে তা বিবেচনা করার প্রক্রিয়াটি নিন্দনীয়। বিশেষ করে যেখানে কোনও সন্তানের জন্ম হয়েছে অস্বীকৃত বিয়ের ফলে।’
আরও পড়ুন: ‘২০২৬ সালের আগে আরও ১৬ লক্ষকে বাড়ি দেব’, ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে বড় ঘোষণা মমতার
কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রে খবর, পূর্ব রেলের আরপিএফ পদের হেড কনস্টেবল ছিলেন গোরক্ষনাথ পান্ডে। তাঁর মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান এই চাকরির দাবি করেন। কারণ প্রথম পক্ষের স্ত্রী লছমিনা দেবী ছিলেন নিঃসন্তান। মৃত্যুর পর পূর্ব রেল আর্থিক সুবিধা দুই স্ত্রীর সন্তানদের মধ্যে ভাগ করে দিলেও ‘ক্যাম্পাসিওনেট’ বা অনুকম্পিত চাকরির ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান চাকরির দাবিদার নয় বলে জানিয়ে দেয়। কারণ তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে বৈধ নয়। এই ঘটনার পর মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। তবে প্রথম স্ত্রী আদালতে এই চাকরি নিয়ে কোন আপত্তি জানাননি। আসানসোলে কর্মরত অবস্থায় ওই কনস্টেবলের মৃত্যু হয়।
প্রথম স্ত্রী নিঃসন্তান হওয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে ওই চাকরির আবেদন জানায়। সেখানে দ্বিতীয় বিয়ে বৈধ না অবৈধ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেয় পূর্ব রেল। কারণ বৈধ আইনি বৈবাহিক সম্পর্কের শংসাপত্র দেখাতে পারেনি দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তাঁর সন্তান। তাই চাকরির আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়। তাই মামলা গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। এদিন মামলার নিষ্পত্তি করে বিচারপতি বৈধতা না থাকলেও দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান এই চাকরির যোগ্য উত্তরাধিকার বলে নির্দেশ দিয়েছেন। বিচারপতির নির্দেশ, ‘দ্ব্যর্থহীনভাবে অসাংবিধানিক একটি সার্কুলার বা সরকারি নির্দেশিকাকে ভিত্তি করে যেভাবে আবেদনকারীকে বঞ্চনা করা হয়েছে সেটা অযৌক্তিক, অবিবেচনাপ্রসূত।’