কয়েক বছর আগের কথা। তখন কোভিডের কঠিন পরিস্থিতির গ্রাসে গোটা দুনিয়া। চারিদিকে ত্রাহি ত্রাহি রবের মাঝে মানুষের ভরসা তখন একমাত্র চিকিৎসক ও চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রাণ বাঁচাতে তখন আপ্রাণ চেষ্টায় চিকিৎসক-কূল। নিজের সবটা ভুলে অন্যের সেবায় তখন তাঁরা ব্রতী। সেই সময়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে ছিল চিকিৎসক অনির্বাণ দত্তের গাওয়া ‘ ও ডাক্তার’ গানটি। মূল গানটি নচিকেতার, তবে তার কিছু শব্দ বদলে অনির্বাণ যে গান তুলে ধরেছিলেন, তা মন ছুঁয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই চিকিৎসক অনির্বাণ দত্ত এবার না ফেরার দেশে… বিশ্বাস করতে পারছে না তাঁর শুভাকাঙ্খীরা, বিশ্বাস করতে পারছে না সোশ্যাল মিডিয়া।
মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎই হৃদরোগে আক্রান্ত হন অনির্বাণ। আর সেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক অনির্বাণ দত্তের মৃত্যু। তাঁর সহপাঠী থেকে পরিচিত, শুভানুধ্যায়ী সহ গোটা চিকিৎসক মহলের কাছে এই খবর যেন আচমকা বজ্রপাতের মতে। শোকস্তব্ধ গোটা চিকিৎসকমহল। ৩৭ বছরে এমন এক চিকিৎসকের অকাল প্রয়াণ মেনে নিতে পারছেন না কেউই। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে অনেকেই স্মরণ করেছেন অনির্বণের এই মৃত্যু সংবাদ।
মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির ভূমিপুত্র অনির্বাণ জুনিয়ার চিকিৎসকদের মধ্যেও বেশ জনপ্রিয়। রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরের এই কৃতী ছাত্র, স্কুলের পরই উত্তরবঙ্গে পড়তে যান মেডিক্যাল। রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠান হাসপাতাল থেকে তিনি সম্পন্ন করেন পিজি প্যাথোলজি। রোগীর চিকিৎসায়, তাঁর সেবার পাশাপাশি, অবসরে হাতে গিটার তুলে নিতে ভুলতেন না অনির্বাণ। সেরকম ভাবেই কোভিডকালে নচিকেতার ‘ও ডাক্তার গান’ এর কিছু শব্দ পাল্টে অনির্বাণ গেয়েছিলেন গানটি। যা মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। নেটপাড়ায় তাঁর মুখও ছিল পরিচিত। আর এবার এল তাঁর প্রয়াণ বার্তা। নেটপাড়াও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না ৩৭ বছরের তরতাজা যুবকের এভাবে চলে যাওয়া। গানের মাধ্যমেই তিনি তাঁর প্রতিবাদকে তুলে ধরেছেন বারবার। হয়েছেন সরব। অকালে থেমে গেল তাঁর মতো দৃপ্ত, সরব এক কণ্ঠস্বর।