আনন্দের দিনেও বিষাদের ছায়া উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলে। আনন্দের কারণ হল - এই প্রথমবার শতাব্দীপ্রাচীন এই স্কুলের কোনও ছাত্র মাধ্যমিকে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সেটা বিরাট কৃতিত্ব। পাশাপাশি, আরও এক ছাত্র মাধ্যমিকে দশম হয়েছে। অন্যদিকে, সরু সুতোয় ঝুলছে এই স্কুলেরই বায়োলজি বিভাগের একমাত্র স্থায়ী শিক্ষিকার ভবিষ্যৎ!
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, রায়গঞ্জ তথা উত্তরবঙ্গের অন্যতম নামজাদা স্কুল রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের বর্তমান পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ১,৮০০। স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপঠনের ব্যবস্থা রয়েছে। স্থায়ী শিক্ষক শিক্ষিকা রয়েছেন ৩৭ জন। অস্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন আরও ছ'জন। এঁদের মধ্যে বায়োলজি বিভাগে একজনই স্থায়ী শিক্ষিকা রয়েছেন। আর একজন অস্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন।
সমস্যা হল, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যে ২৬ হাজার (প্রায়) শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েয়েছে, তার মধ্যে রায়গঞ্জ করোনেশন হাইস্কুলের একমাত্র স্থায়ী বায়োলজি শিক্ষিকাও রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক কালীচরণ সাহা। তিনি জানান, তাঁদের স্কুল বরাবর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ভালো ফল করেছে।
২০১৪ সালে এই স্কুলের পড়ুয়াই উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছিল। এর আগেও বহুবার মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় নাম উঠেছে এই স্কুলের। কিন্তু, মধ্যমিকে প্রথম হওয়া এই প্রথম। এই প্রেক্ষাপটে স্কুলের একমাত্র বায়োলজি শিক্ষিকার পেশা সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা প্রধান শিক্ষক-সহ তাঁর সমস্ত সহকর্মী ও ছাত্রদেরও চিন্তায় রেখেছে।
তবে, একটিই স্বস্তির বিষয়, তা হল - ওই শিক্ষিকার নাম রয়েছে 'যোগ্য' তালিকায়। অর্থাৎ - শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুসারে - তিনি আগামী ৩১ ডিসেম্বর (২০২৫) পর্যন্ত কাজ করে যেতে পারবেন। কিন্তু, তারপর কী হবে? জানা নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের।
মন ভালো নেই স্কুলের পড়ুয়াদেরও। এবারের মাধ্যমিকে ৬৮৬ নম্বর পেয়ে দশম হয়েছে এই স্কুলেরই পড়ুয়াা কৌস্তভ সরকার। সে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের জানিয়েছে, বায়োলজি শিক্ষিকা তাদের অত্যন্ত যত্ন সহকারে পড়ান। তারা সকলেই তাঁর পড়ানোর সঙ্গে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে যদি তিনি না থাকেন, তাহলে তাদের নিঃসন্দেহে সমস্যা হবে। তাছাড়া, বায়োলজি ম্যামকে স্কুলের বাচ্চারা যথেষ্ট পছন্দও করে, তাঁকে ভালোবাসে। তাই, তাঁর এভাবে চাকরি চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারছে না কিশোর কৌস্তভরাও।
উল্লেখ্য, এবছরের মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে আদৃত সরকার। এই কৌস্তুভেরই সহপাঠী সে এবং রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের কৃতী পড়ুয়া। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৬। মোট ৭০০ নম্বরের মধ্য়ে ওই নম্বর পেয়েছে সে।