আজ শুক্রবার সকালে ২০২৫ সালের মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এ বছর মাধ্যমিকে পাশের হার ৮৬.৫৬ শতাংশ। বিভিন্ন জেলা থেকে নজরকাড়া ফল করেছে অনেকেই। সেরকম ভালো ফল করেছে আসানসোল উমারানি গড়াই স্কুলের ছাত্রী থৈবি মুখোপাধ্যায়। এদিন সকালে ফল প্রকাশিত হতেই দেখা যায়, মাধ্যমিকে স্কুলের টপার হয়েছে থৈবি। কিন্তু, এত ভালো ফল হওয়ার পরেও শোকের ছায়া পরিবারে। থৈবির ভালো ফল শুনে তার ছবি সামনে নিয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সকলে। কারণ যে ভালো ফল করেছে. সেই ছাত্রীই আর নেই। আসলে ফল প্রকাশের মাত্র ১৭ আগে জন্ডিস প্রাণ কেড়েছিল থৈবির। তাই মেয়ের ভালো ফল জানার পরেই তার ছবি হাতে নিয়ে কেঁদে চলেছেন বাবা মা।
আরও পড়ুন: এবারও মাধ্যমিকে নজর কাড়ল নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন, কত ঘণ্টা পড়ে মেধাতালিকায়?
মাধ্যমিকে থৈবির প্রাপ্ত নম্বর হল ৬৭৪। তার বাবা বিবেকানন্দ মুখোপাধ্যায় পেশায় হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও মেয়েকে বাঁচাতে পারেননি। মা পিউ মুখোপাধ্যায় হলেন একজন গৃহবধূ। জানা যায়, এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার ঠিক আগেই জন্ডিস ধরা পড়েছিল থৈবির। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয় সে। কিন্তু, পরীক্ষার পরেই শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসার জন্য বাবা মা তাকে ভেলোরে নিয়ে যান। জন্ডিসের ফলে লিভার অকেজো হয়ে গিয়েছিল থৈবির।
চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, তার লিভার ট্রান্সফার করা প্রয়োজন। কিন্তু, এর জন্য যে বিপুল খরচ তা জানতে পেরে কার্যত মাথায় হাত পড়ে থৈবির বাবা-মায়ের। তা জানতে পেরে তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে স্কুল থেকে শুরু করে শহরবাসী। সোশ্যাল মিডিয়াতেও অর্থ সাহায্য চাওয়া হয়। সব মিলিয়ে এক কোটির মধ্যে মাত্র ৪৫ লক্ষ টাকা জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু, এতকিছুর পরেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। গত ১৬ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়।
এদিন ফলপ্রকাশ প্রকাশ হতেই দেখা যায়, মাধ্যমিকে ৬৭৪ নম্বর পেয়েছে থৈবি। পেটে অসহ্য ব্যাথা নিয়ে পরীক্ষা দিয়েও তার সাফল্য অবাক করে দিয়েছে সকলকে। জানা যাচ্ছে, বাংলায় সবচেয়ে বেশি নম্বর পেয়েছে থৈবি। বাংলায় তার প্রাপ্ত নম্বর হল ৯৯। সে অঙ্কে পেয়েছে ৯৮, জীবন বিজ্ঞানে পেয়েছে ৯৮, ফিজিক্যাল সায়েন্সে পেয়েছে ৯৭, ইতিহাস পেয়েছে ৯৫ এবং ভূগোলে পেয়েছে ৯৫। ফলপ্রকাশের পর থেকেই থৈবির ছবি হাতে নিয়ে কেঁদে চলেছেন পরিবারের সদস্যরা। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও শোকাহত। পরিবারের সদস্যরা জানান, পড়াশোনার পাশাপাশি আঁকা, গানেও সে ভালো। তাঁদের কথায়, সুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা দিলে হয়ত সে রাজ্যে প্রথম হত।