মায়ের ইচ্ছা বলে কথা। আর তা তো সন্তানদের রাখতেই হয়। সেটা হতেই পারে মায়ের জীবনের শেষ সময়ে। মা তো এই পৃথিবীর আলোটা দেখিয়েছে। তাই মায়ের ইচ্ছাকে পূর্ণ সম্মান জানানো তো সন্তানদের কর্তব্য। এই কর্তব্যবোধই দেখা গেল বর্ধমানের শ্মশানঘাটে। মা চেয়েছিলেন মেয়েকে বিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করবেন। এটাই ছিল মায়ের ইচ্ছা। কিন্তু সব পরিকল্পনা তো মানুষের ইচ্ছা অনুযায়ী হয় না। তাই মেয়ের বিয়ে না দেখেই তাঁকে চোখ বন্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু মায়ের এই শেষ ইচ্ছা পূরণ করলেন মেয়ে। মায়ের মরদেহ সামনে রেখেই শ্মশানঘাটে মালাবদল করে বিয়ে করলেন মেয়ে। কান্নাভেজা চোখে মায়ের দেহের দিকে তাকিয়ে চোখে জল নিয়ে বিয়ে করলেন মেয়ে। এটাই দেখল পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা শহরের রটন্তী কালীর মন্দিরের পাশে থাকা শ্মশানের মানুষজন।
যে বিয়েতে আনন্দ করে খানাপিনা, আড্ডার মধ্যে দিয়ে কাটা উচিত ছিল সেই বিয়ে শুরু হল শোকের মধ্যে দিয়ে। স্থানীয় সূত্রে খবর, গুসকরা শহরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিবেকানন্দ পল্লির বাসিন্দা ছিলেন নীলিমা মুখোপাধ্যায়। তিনি বুধবার আত্মঘাতী হন। নীলিমা দেবীর স্বামী ভবানী মুখোপাধ্যায় পেশায় একজন ব্যবসায়ী। ওষুধের দোকান আছে তাঁর। নীলিমা–ভবানীর একমাত্র সন্তান পল্লবী মুখোপাধ্যায় স্নাতক পাশ করে কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। নীলিমা দেবী দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। আর তা থেকেই এই আত্মহত্যা। গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশ দেহ ময়নাতদন্তে পাঠায়। আর তারপর বুধবার রাতেই নীলিমা দেবীর দেহ তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। তখন শ্মশানে শেষকৃত্য হয়।
আরও পড়ুন: পুরসভার চেয়ারম্যানদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক নবান্নে, ব্রাত্য থাকল তাহেরপুর–ঝালদা
কিন্তু মা যে চেয়েছিল মেয়ের বিয়ে দেখে যেতে। সেটা তো তাহলে হল না। আর তাই কলকাতা থেকে দ্রুত বাড়ি ফেরেন পল্লবী। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। আর শ্মশান ঘাটেই মালাবদল করে বিয়ে করেন নীলিমা দেবীর মেয়ে পল্লবী। মায়ের ইচ্ছাপূরণ করতে গিয়ে শ্মশানে মায়ের দেহ পাশে রেখে প্রেমিকের গলায় মালা পরিয়ে বিয়ে করেন পল্লবী। চোখের জল ভাসিয়ে মালাবদল করতে দেখলেন শ্মশানে থাকা যাত্রীরা এবং পল্লবীর আত্মীয়স্বজন–বন্ধুবান্ধবরা। একইসঙ্গে সাক্ষী থাকলেন প্রেমিক প্রেমিকার সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে ঘরণী করলেন। আর গভীর শোকের আবহে এভাবেই সারা জীবনের বন্ধনে আবদ্ধ হলেন তাঁরা।