খড়গপুর আইআইটি চত্বরে এবার থেকে ইংরেজি ও হিন্দির পাশাপাশি বাংলা ভাষাতেও লেখা থাকবে দিকনির্দেশ, নামফলক ও তথ্যচিত্রের সাইনবোর্ড। প্রতিষ্ঠানটির নতুন পরিচালক সুমন চক্রবর্তীর উদ্যোগে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান জানাতে এবং স্থানীয় কর্মীদের সুবিধার্থে এই পদক্ষেপ বলে জানান তিনি। (আরও পড়ুন: 'কিছু হলেও মিটিয়ে দিন' বলার মানে তো ভিক্ষা! ডিএ মামলায় 'অপমানিত' সরকারি কর্মীরা)
আরও পড়ুন: আত্মহত্যার ঘটনা থামছেই না, পড়ুয়াদের মনোবল বাড়াতে পদক্ষেপ আইআইটি খড়গপুরের
সুমনের বক্তব্য, এই প্রতিষ্ঠান বাংলার মাটিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অথচ এতদিন ক্যাম্পাসে বাংলা প্রায় অনুপস্থিত ছিল। এখানে কাজ করা বহু অশিক্ষক কর্মী কেবলমাত্র বাংলা ভাষাতেই স্বচ্ছন্দ। হিন্দি বা ইংরেজি অনেকের পক্ষেই দুর্বোধ্য। তাঁর মতে, এটি শুধুমাত্র ভাষার প্রশ্ন নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক অবস্থানও। ক্যাম্পাসের অডিটোরিয়াম, বিভাগীয় ভবন, প্রশাসনিক দফতর থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্প সব কিছুর নাম, নির্দেশ ও পরিচিতি এবার বাংলাতেও লেখা হবে। নির্দেশকের দফতর এবং তাঁর সরকারি বাসভবনের নামফলকেও ইতিমধ্যেই বাংলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০২০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে তিন ভাষার ব্যবহারের উপর যে জোর দেওয়া হয়েছে, সেই নীতিকে অনুসরণ করেই এই সিদ্ধান্ত।
খড়গপুর আইআইটি-র জন্মস্থল হিসেবে বিবেচিত হিজলি ডিটেনশন ক্যাম্পে বিপ্লবীদের অবদানের উল্লেখ আগে কেবলমাত্র ইংরেজি ও হিন্দিতে ছিল। বাংলা ভাষায় কিছুই লেখা ছিল না। এই প্রসঙ্গে সুমন বলেন, এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক। এই ভূমিতে যাঁরা রক্ত ঢেলেছেন, তাঁদের কৃতিত্ব তাঁদের মাতৃভাষায় স্বীকৃতি পাবে না, তা হতে পারে না। আগামী ১৮ অগস্ট প্রতিষ্ঠা দিবসে যে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিলান্যাসের কর্মসূচি রয়েছে, সেখানেও ত্রিভাষিক ফলক ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজভাষা বিভাগকেই এই বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
বাংলাভাষীদের প্রতি দেশজুড়ে বারবার বৈষম্য ও হেনস্থার অভিযোগ উঠে আসছে বিশেষত বিজেপি শাসিত রাজ্যে। এমন সময়, খড়গপুর আইআইটির এই পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। সুমন চক্রবর্তী দায়িত্ব নেওয়ার কিছু মাসের মধ্যেই যে ভাবে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা খড়গপুর আইআইটির ইতিহাসে নজিরবিহীন। পূর্বতন কোনও নির্দেশক বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে এ ধরনের স্পষ্ট ও প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেননি বলেই জানা গিয়েছে।