প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সম্প্রতি মন্দিরে পুজো দেওয়া নিয়ে বিবাদের অবসান ঘটেছিল পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার গীধগ্রামে। সাময়িক উত্তেজনার পর সেখানকার সুপ্রাচীন একটি শিব মন্দিরে পুজো দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন বিশেষ একটি গোষ্ঠীর মানুষজন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এবং সকলের সহমতের ভিত্তিতেই সেই মন্দিরের দরজা সকল ভক্তের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল।
এবার ঠিক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল নদিয়ার বৈরামপুরের একটি শিব মন্দিরে। অভিযোগ ছিল, প্রথার আড়ালে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর মানুষকে বহু যুগ ধরে তাঁদের আরাধ্যের আরাধনা করতে দেওয়া থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু, শেষমেশ কলকাতা হাইকোর্টের ধমক খাওয়ার পর সেই বৈষম্যের অবসান ঘটল।
এই বিষয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা-র অনলাইন সংস্করণে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, সেই অনুসারে - এই ঘটনায় আদালতে সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে যে মামলা রুজু করা হয়েছিল, সেই মামলায় উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল - দেবালয়ে যদি এমন বৈষম্য করা হয়, তাহলে তা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ভূমিকাতেও ক্ষুব্ধ ছিল হাইকোর্টে। যার জেরে তাদের আদালতের কাছে ধমকও খেতে হয়েছিল।
এরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। দফায় দফায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে প্রশাসনের তরফে বৈঠক করা হয়। তাতেই মেলে সমধানসূত্র। স্থির হয়, এবার থেকে সকল ভক্তরই মন্দিরে পুজো দিতে পারবেন। সেই অনুসারে, বহু বছরের বৈষম্য ভেঙে আজ (বৃহস্পতিবার - ২০ মার্চ, ২০২৫) প্রথমবার পুলিশের পাহারায় এই মন্দিরে পুজো দেন এত দিন ধরে বঞ্চিত থাকা গোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারের পাঁচজন প্রতিনিধি। স্বভাবতই এতে তাঁরা খুশি।
তাঁদেরই একজন হলেন জয়া দাস। সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে তাঁকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, 'আমার দাদু-ঠাকুরদা এই মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়েও ভিতরে যেতে পারেননি। আজ আমরা ইতিহাস গড়লাম। এটা শুধু মন্দিরে প্রবেশ নয়, আমাদের মর্যাদার লড়াইয়ে জয়। আজ প্রথমবার মনে হল, আমরা এই সমাজেরই অংশ।'
কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার উত্তমকুমার ঘোষ এই প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, 'শিব মন্দিরে প্রবেশ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে। নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মানুষজনও আজ পুজো দিতে পেরেছেন। কোনওরকম বাধার মুখে পড়তে হয়নি তাঁদের। সর্বসম্মতিতেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল।'
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য উজ্জ্বল দাস বলেন, 'শতাব্দী প্রাচীন এই প্রথা বন্ধ করা এত সহজ ছিল না। প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ঈশ্বর সকলের জন্য। এত দিনে আমরা সুবিচার পেয়েছি।'
যদিও মন্দিরের সেবায়েত আশিস কুন্ডু এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন, 'পৃথিবীর সব মন্দিরের একটা নিজস্ব রীতি থাকে। সমস্ত ধর্মীয় স্থানের নিজস্বতা থাকে। সেখানে হস্তক্ষেপ করা কতটা যুক্তিযুক্ত, বুঝতে পারছি না।'