আইপিএল (IPL)-র ম্যাচে ঘরের মাঠে অবশেষে জয়ের দেখা পেল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ১৯তম ওভারে জোশ হেজেলউডের দুর্ধর্ষ বোলিংয়ের সুবাদে ঘরের মাঠে এবারের আইপিএলের প্রথম জয়ের দেখা পেল বিরাট কোহলিরা। রাজস্থান রয়্যালসকে ১১ রানে হারাল রজত পতিদারের দল। চতুর্থ হোম ম্যাচে এই প্রথম জয় পেল আরসিবি।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আরও একবার নজর কাড়লেন সেই বিরাট কোহলি। আরিসিবির তারকা এবারের আইপিএলের শুরুর দিকে কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে। মনে হচ্ছিল বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়ত কোহলি এই তালিকায় একটু পিছিয়ে পড়বেন, কিন্তু তিনি যে বিরাট কোহিল। আসল সময়ই জ্বলে উঠতে জানেন। তাই তো এবারের আইপিএলে নিজের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি করে অরেঞ্জ ক্যাপের দৌড়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেন কোহলি।
টস হেরে ব্যাট করতে নামে আরসিবি, ওপেনিং পার্টনারশিপে ফিল সল্ট এবং কোহলি তোলেন ৬১ রান। সল্টের ক্যাচ মিড অফে রিয়ান পরাগ মিস না করলে অবশ্য আরও আগেই সল্ট সাজঘরে ফিরতে পারত। আরও একবার বিরাটের মতোই মাস্টারক্লাস ইনিংস খেললেন দেবদূত পাডিক্কাল। তিনি ২৭ বলে ৫০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেললেন। বিরাট আউট হন ৪২ বলে ৭০ রান করে।
টিম ডেভিড শেষদিকে ১৫ বলে ২৩ রান করলেন। জিতেশ শর্মা ১০ বলে ২০ রান করে আরসিবির ইনিংসকে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ২০৫ রানে নিয়ে গেলেন। বল হাতে সন্দীপ শর্মা নিলেন ২ উইকেট। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে এবারের আইপিএলে আজকের আগে পর্যন্ত একটা ম্যাচেও জেতেনি আরসিবি, তাই দর্শকদের আগ্রহ ছিল এই ম্যাচের ফল দেখার। কারণ ২০০ রানের বেশি তুলেও কি আরসিবি তা ডিফেন্ড করতে পারবে না? এই প্রশ্ন উঠছিল।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করে রাজস্থান রয়্যালস। ৪.২ ওভারে ৫২ রানের মাথায় রাজস্থানের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী করেন ১২ বলে ১৬ রান। অন্যদিকে আরেক ওপেনার যশস্বী জসওয়াল পুরো ঝড় তুলে দেন ব্যাটে। মাত্র ১৯ বলেই তিনি ৪৯ রান করেন। এর হেজেলউডের বোলিংয়ে যশস্বী আউট হন রোমারিও শেপার্ডের হাতে ক্যাচ তুলে। ততক্ষণে রাজস্থানকে ভালো জায়গায় নিয়ে গেছেন তিনি। পাওয়ারপ্লের শেষে আরসিবির স্কোর দাঁড়ায় ২ উইকেটে ৭২। হেজেলউডকে একা যশস্বী এদিন পাঁচটি চার এবং একটি ছয় মারেন। নিজের ইনিংসে যশস্বী মোট সাতটি চার এবং তিনটি ছয় মারেন। যশস্বীকে আউট করার পর তাঁকে সেন্ড অফ দেন হেজেলউড, যে দেখে পাল্টা কিছু বলতে দেখা যায় যশস্বীকেও। আম্পায়াররা এসে রজত পতিদারকে এরপর সতর্ক করেন।
৮.১ ওভারের মধ্যেই রাজস্থান ১০০ রান তুলে নেয়। তখন মনে হচ্ছিল রিয়ান পরাগের দলই জিতবে, তবে শেষ দুই ম্যাচে তীরে এসে তরী ডুবেছিল জয়পুরের দলটির। তাই যতক্ষণ না ম্যাচ শেষ হচ্ছিল, ততক্ষণ কিছুই বলা যাচ্ছিল না। রিয়ান পরাগ তেমন নজর কাড়তে পারলেন না, তবে ১০ বলে ২২ রানের ইনিংস খেললেন। নীতীশ রানা করলেন ২৮ রান। সিমরন হেতমায়েরও কম রানেই সাজঘরে ফিরলেন। এরপর আবারও লড়াই চালিয়ে গেলেন সেই ধ্রুব জুরেল।
শেষ তিন ওভারে বাকি ছিল ৪০ রান। ১৮তম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমার বোলিং করতে এলে তাঁর ওভারে আসে ২২ রান। এক্ষেত্রে বলাই বাহুল্য ধ্রুব জুড়েলই ম্যাচের মোড় প্রায় ঘুরিয়ে দিচ্ছিলেন রাজস্থানের পক্ষে। শুভম দুবেও ভুবির ওভারে মারলেন একটি ছয়। এরপর ৩৪ বলে ৪৭ রানের মাথায় ধ্রুব জুরেলকে আউট করে আরসিবিকে খেলায় ফেরান সেই জোশ হেজেলউড। জিতেশ শর্মা ক্যাচ নেন। পরের বলেই জোফ্রা আর্চার ব্যাট করতে এসে তিনিও রজত পতিদারের হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন। ফলে ম্যাচে নিজের চতুর্থ উইকেটের দেখা পান হেজেলউড। ১৯তম ওভারে অজি পেসার দেন মাত্র ১ রান, তাতেই ফের আরসিবির দিকে ম্যাচ ঢলে পড়ে।
২০তম ওভারে রাজস্থানের জয়ের জন্য বাকি ছিল ১৭ রান। প্রথম বলেই শুভম দুবেকে আউট করেন যশ দয়াল। এই ওভারে হাসারাঙ্গাও রান আউট হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত ১১ রানে ম্যাচ জিতে নেয় আরসিবি। ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে চার উইকেট নিয়ে আরসিবির ম্যাচের নায়ক জোশ হেজেলউড। অজি পেসার দেখালেন, ডেথ ওভারে বোলিং কাকে বলে।