পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে বিডিও অফিসের হেড ক্লার্ক অভিষেক গঙ্গোপাধ্যায়ের খুনের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই ঘটনায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক প্রাক্তন নেতার নাম জড়াল। তাঁকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। ধৃতের নাম শিবু রাউল। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনীতিতে।
আরও পড়ুন: কেশিয়াড়িতে BDO অফিসের হেড ক্লার্কের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার, ‘খুন’ দাবি শুভেন্দুর
জানা গিয়েছে, ধৃত শিবু একসময় কেশিয়াড়ি গভর্নমেন্ট জেনারেল ডিগ্রি কলেজের দাপুটে ছাত্র নেতা ছিলেন। তাঁকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে কলেজে ভর্তি হয়েছিল শিবু। পরের বছর তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফে তাকে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হয়। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুরে কেশিয়াড়ির একটি ভাড়া বাড়ি থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার হয় অভিষেকবাবুর দেহ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, পাশের ঘরেই থাকতেন শিবু। সন্দেহের ভিত্তিতে তাঁকে আটক করা হয় এরপর তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
সূত্রের খবর, সোমবার রাত প্রায় ১১টা নাগাদ দুইজনের মধ্যে কোনও কারণে তুমুল ঝামেলা বাঁধে। সেই সময় রাগের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে অভিষেকবাবুর উপর একের পর এক কোপ বসায় শিবু। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। এরপর দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত। এই ঘটনায় অভিষেকবাবুর স্ত্রী শিল্পী চট্টোপাধ্যায় গঙ্গোপাধ্যায় কেশিয়াড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। বুধবার তাঁকে খড়গপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তিন দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।
একই ঘটনায় রাজনীতিতে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কেশিয়াড়ি ব্লকের সভাপতি দেবাশিস দে দাবি করেছেন, শিবুর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরেও কলেজের নানা বিষয়ে প্রভাব খাটাতেন শিবু। কলেজ চত্বরে দাদাগিরি চালাতেন। খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে তাঁর নাম উঠে আসতেই অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল।
ঘটনার পরে কেশিয়াড়ি থানায় ছুটে যান এলাকার বিধায়ক পরেশচন্দ্র মুর্মু। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, এই ঘটনা অত্যন্ত নৃশংস। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করুক, দোষীর উপযুক্ত শাস্তি হোক সেটাই সবাই চাই। এদিকে, ঘটনার পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় বিধায়কের সঙ্গে শিবুর একাধিক ছবি। এনিয়ে শাসক দলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। দলের নেতা গৌরীশংকর অধিকারী বলেন, এই ঘটনার পর অভিযুক্তকে আড়াল করতে থানায় ছুটে গিয়েছিলেন বিধায়ক নিজেই। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পুরো বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। একই সুরে সরব হয়েছে সিপিএম ও কংগ্রেসও। তারা ঘটনার নিন্দা করে দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছে।