তিলপাড়া ব্যারাজের সংকট আরও গভীর হচ্ছে। ডিভাইড ওয়ালের ফাটল দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে। আর সেই চাপ সামলাতেই এবার ব্যারাজকে সম্পূর্ণ জলশূন্য করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেচ দফতর। তবে এখনও পর্যন্ত জরুরি সংস্কারের নির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি হয়নি। রাজ্যস্তরের ইঞ্জিনিয়ার ও বিশেষজ্ঞরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছেন এবং সবদিক খতিয়ে দেখেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
আরও পড়ুন: তিলপাড়া ব্যারাজ নিয়ে উদ্বেগ, বাড়ছে ফাটল, জল ছাড়ার পরিমাণ বাড়াল সেচ দফতর
জানা যাচ্ছে, সোমবার সকাল থেকে তিলপাড়ায় ন’টি লকগেট খুলে জল ছাড়ার কাজ শুরু হয়েছিল। দুপুরে আরও দু’টি গেট খুলে দেওয়া হয়। তবে ডিভাইড ওয়ালের ক্ষতি এতটাই গভীর যে, দুটি লকগেট আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। সেচ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এদিন ২৫ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে ব্যারাজ থেকে। একইসঙ্গে ম্যাসাঞ্জোর ড্যাম থেকে জল ছাড়ার মাত্রা কিছুটা হ্রাস করে আনা হয়েছে ১২ হাজার কিউসেকে, যাতে ময়ূরাক্ষী নদীর জল বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সেচ দফতরের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘ব্যারাজ যাতে নতুন করে ভেঙে না পড়ে, সেই কারণেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে জলশূন্য করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ জলস্তর কমলেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ক্ষতিগ্রস্ত ডিভাইড ওয়াল ও অন্যান্য অংশে সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।
বর্ষা আসার আগে কিছুটা সংস্কার হলেও অতিবৃষ্টির কারণে কাজ মাঝপথেই থেমে যায়। এরপর লাগাতার বৃষ্টি ও ম্যাসাঞ্জোর থেকে জল ছাড়ার জেরে ময়ূরাক্ষী নদী ফুলেফেঁপে ওঠে। তার সঙ্গে তিলপাড়া ব্যারাজে প্রচণ্ড চাপ পড়ে, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ডিভাইড ওয়াল। ফাটল এতটাই বড় হয়েছে যে, তার নিচ থেকে বালি ও মাটি সরে গিয়ে নদীগর্ভে বসে যেতে শুরু করেছে। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নিলে ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
রবিবার তিলপাড়া পরিদর্শন করেন রাজ্য সেচ দফতরের অতিরিক্ত সচিব মণীশ জৈন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এবং বাঁধ বিশেষজ্ঞ জুলফিকার আহমেদ। তার পরেই কলকাতায় জরুরি বৈঠক হয় পরিস্থিতি নিয়ে। সেই বৈঠক থেকেই বৃষ্টির মরশুমে কীভাবে প্রাথমিক মেরামতির কাজ চালানো সম্ভব, তার খসড়া সিদ্ধান্ত উঠে আসতে পারে বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। তবে কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, বর্ষা শেষে পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের কাজ শুরু হবে। আপাতত রাজ্য সরকার যে নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ী জরুরি সংস্কার চালানো হবে। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যত দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়, সেটাই সেচ দফতরের প্রথম লক্ষ্য। কারণ ফাটলের গতি ও নদীর জলস্তর যদি একসঙ্গে বাড়তে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।