আবার তোলপাড় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটের সামনের পুকুর থেকে বৃহস্পতিবার তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী অনামিক মণ্ডলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।আপাতত চার নম্বর গেটের সামনের তিনটি সিসি ক্যামেরায় নজর রয়েছে। রাতে কী ঘটেছিল, তা সেখানে ধরা পড়ে থাকতে পারে। ইতিমধ্যে ওই ছাত্রীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনায় ফের একবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এর আগে ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্র মূল হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে মারা যান। সেবার ব়্যাগিংয়ের অভিযোগে তোলপাড় হয়ছিল রাজ্য। এবার ফের ছাত্রীর মৃত্যুতে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। জানা গেছে, অনামিকা মণ্ডল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে স্নাতক স্তরে পড়াশোনা করছিলেন। তাঁর বাড়ি বেলঘরিয়া নিমতা এলাকায়। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। অনামিকাও সেখানে ছিলেন। চার নম্বর গেটের কাছে ইউনিয়ন রুমের পাশ দিয়ে পুকুরপাড় বরাবর একটি সরু রাস্তা রয়েছে। সেখান দিয়ে গেলে শেষ প্রান্তে রয়েছে দু’টি শৌচাগার। অনামিকা সে দিকে গিয়েছিলেন কিনা, সেখান থেকে পুকুরে পড়ে গিয়েছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। রাত ১০টা ২০ নাগাদ পুকুরে তাঁকে ভাসতে দেখেন ক্যাম্পাসে উপস্থিত পড়ুয়ারা। তারপর উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় নিকটবর্তী কেপিসি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে অনামিকাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
নজরে সিসি ক্যামেরা
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেট দিয়ে ঢুকেই বাঁ দিকে কলা বিভাগের বিল্ডিং। সেখানে ইংরেজি বিভাগও রয়েছে। ওই বিল্ডিংয়ের মুখেই রয়েছে একটি সিসি ক্যামেরা। তা চার নম্বর গেটের দিকে তাক করা। এছাড়াও, সিকিউরিটি রুমের কাছে একটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে এবং কলা বিভাগের দিকে রয়েছে আরও একটি সিসি ক্যামেরা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কী ঘটেছিল, তা এই সমস্ত ক্যামেরায় ধরা পড়ে থাকতে পারে। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে ওই ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।
হাসিখুশি ‘মিষ্টু’ আর নেই
শুক্রবার সকাল থেকে বিষন্নতা ছেয়ে গিয়েছে নিমতার ললিত গুপ্ত স্ট্রিট সংলগ্ন গোটা এলাকায়। পাড়ার মেয়েটার মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউই। ললিত গুপ্ত স্ট্রিটে অনামিকা মণ্ডলের বাড়ির উল্টোদিকেই পুজোর প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। শেষ মুহূর্তে পুজোর প্রস্তুতি চলছিল জোরকদমে। এক লহমায় সে সবই এখন বন্ধ। পাড়ার সকলের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, ‘মেয়েটার মৃত্যু হল কী ভাবে?যাদব বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝিলে কোনওভাবে পড়ে গিয়েছিল অনামিকা, নাকি অন্য কোনও রহস্য?’ সন্দিহান সকলেই। অনামিকাকে পাড়ায় সকলে ‘মিষ্টু’ বলেই ডাকে। হাসিখুশি স্বভাবের মিষ্টুর সঙ্গে পরিচিতি ছিল সকলেরই। অনামিকার বাড়ির পাশেই থাকেন পুষ্পিতা ভট্টাচার্য। হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে পুষ্পিতা বলেন, ‘কিছু বলার নেই। এত ভালো মেয়ে ছিল। সব সময়েই পড়াশোনা নিয়ে থাকত। ইংলিশ নিয়ে পড়তো। আমার দু'টি বাচ্চা মেয়ে আছে। ওদের জন্মদিন হোক বা মাঝেমধ্যেই আমাদের বাড়ি আসা-যাওয়া করত। ভাবতেই পারছি না। স্কুল-কলেজে কি বাচ্চাদের আর কোনও নিরাপত্তা থাকবে না?’