বাংলাজুড়ে মায়ের পুজোর নানা রীতিনীতি প্রচলিত। তার মধ্যে বহু পুজোর রীতি আমাদের অবাক করে তাদের গুণবৈচিত্র্যে। তেমনই এক পুজো হল নদীয়ার তেহট্টের গঙ্গোপাধ্যায় বাড়ির পুজো। তেহট্ট হাইস্কুলের কাছেই এই বনেদি বাড়ির পুজো সারা তেহট্টের কাছেই এক বড় আকর্ষণ। এই পুজোর মূল বৈশিষ্ট্য তালপাতার পুঁথি দেখে মায়ের মন্ত্র উচ্চারণ। আরেকটি বৈশিষ্ট্য নবমীর দিন ৫৬ ভোগের আয়োজন। আড়াইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই ঐতিহ্য ধরেছে গঙ্গোপাধ্যায় পরিবার।
আরও পড়ুন - সাদা থান পরে নবপত্রিকা, এই পুজোয় লক্ষ্মী-সরস্বতীর বদলে মায়ের সঙ্গী জয়া-বিজয়া
হাওড়া থেকে তেহট্ট
গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের আদিনিবাস ছিল হাওড়া। এক স্বপ্নাদেশই গোটা পরিবারকে তেহট্টে নিয়ে আসে। আর সেই স্বপ্নাদেশ ছিল স্বয়ং মাকে নিয়েই। পুজোর আন্যতম আয়োজক ক্ষিতিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী একবার স্বপ্ন দেখেন, হাওড়ার বাড়িতে মায়ের পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়া জোগাড়। তার কিছুদিনের মধ্যেই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ভিটে ছেড়ে তেহট্টে আসে পরিবার। নিয়ে আসে তালপাতার পুঁথি-সহ মা দুর্গার পুজো সামগ্রী।
স্বপ্নাদেশেই শুরু পুজো
এই বাড়ির পুজো শুরুর কাহিনির সঙ্গেই জড়িত রয়েছে স্বপ্নাদেশের কাহিনি। সাত প্রজন্ম আগে অবিনাশ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্বপ্নাদেশ পাওয়ার মধ্যে দিয়েই শুরু গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের পুজো। হাওড়াতেই তখন পুজো হত। স্বপ্নাদেশে মায়ের যে মূর্তি দেখেছিলেন অবিনাশ, সেই মূর্তিই পূজিত হয়। পুজোর সময় উচ্চারিত হয় তালপাতার পুঁথিতে লিখিত মন্ত্রাদি।
আরও পড়ুন - একাদশীতে বোধন! সিংহ নন, ব্যাঘ্রবাহিনী দেবীই বাংলার এখানে পূজিত হন ৫০০ বছর ধরে
কীভাবে হয় পুজোর আয়োজন
আষাঢ় মাসে রথের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজোর তোড়জোড়। বাঁশ কেটে কাঠামো প্রস্তুতির কাজ শুরু করে দেন কারিগররা। জন্মাষ্টমীর দিন থেকে জোরকদমে শুরু হয়ে যায় প্রতিমা নির্মাণের কাজ। বোধন দিয়ে পুজো শুরু হলেও ষষ্ঠীর বিশেষ আকর্ষণ থাকে আমন্ত্রণ অধিবাস। আবার সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান হলেও এই তিথির বিশেষ আকর্ষণ থাকে অর্ধরাত্র পুজো। অষ্টমীর দিন গঙ্গোপাধ্যায়দের পুজোয় সকাল সকাল ১০৮ ঘড়া জল দিয়ে মায়ের মহাস্নানের আয়োজন করা হয়। নবমীর দিন আয়োজন করা হয় মায়ের ৫৬ ভোগের। দশমীতে মায়ের বিসর্জনের দিন রয়েছে কনকাঞ্জলির রীতি।