মার্কিন বিনিয়োগকারী জর্জ সোরোসের মন্তব্য ঘিরে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। তিনি বলেছেন, আদানি কাণ্ডের ফলে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের উপর মোদীর প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। ভারতের গণতন্ত্রে একটি নবজাগরণের সূচনা হবে। পড়ুন: আদানি সাম্রাজ্যের পতনেই ভারতে গণতন্ত্রের নবজাগরণ হবে: মার্কিন ধনকুবেরের মন্তব্যে বিতর্ক
কিন্তু জর্জ সোরোস কে?
জর্জ সোরোস একজন হাঙ্গেরিয়ান-আমেরিকান ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবী। ২০২১ সালের মার্চের হিসাব অনুযায়ী, তাঁর মোট সম্পদ প্রায় $৮.৬ বিলিয়ন। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকার কাছারাথি। তবে, আদতে আরও বেশি টাকা তাঁর। ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে জর্জ সোরোসের। সেই সংস্থায় প্রায় ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি তহবিল দিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ইতিমধ্যেই দান করা হয়েছে। অর্থাত্, নিজের সারাজীবনের মোট সম্পদের বেশিরভাগটাই দান করে দিয়েছেন ৯২ বছর বয়সী এই ধনকুবের।
জর্জ সোরোসের জীবনটা যেন কোনও সিনেমাকেও হার মানাবে। বুদাপেস্টের এক ইহুদি পরিবারে জন্ম তাঁর। অল্প বয়সেই যুদ্ধের ভয়াবহতা, হাঙ্গেরির নাৎসি দখলের সাক্ষী থেকেছেন তিনি। ১৯৪৭ সালে ব্রিটেনে আসেন। মেধাবী জর্জ লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্সে পড়াশোনা করেন। দর্শনে বিএসসি এবং পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
প্রথম জীবনে ব্রিটেন এবং তারপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাঙ্কে চাকরি করেন। প্রথম চাকরি ছিল এক সাধারণ কেরানির পদে। বেশ কয়েক বছর নানা পদে চাকরির মাধ্যমে অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে ডবল ঈগল নামের এক হেজ ফান্ড স্থাপন করে নিজের ব্যবসায়িক জীবন শুরু করেন। পরে সেই নাম বদলে কোয়ান্টাম ফান্ড করা হয়।
জর্জ সোরোস 'দ্য ম্যান হু ব্রোক দ্য ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড' নামেও পরিচিত। কেন? কারণ ১৯৯২ সালে পাউন্ড স্টার্লিংয়ে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের শর্ট সেল করেন তিনি। এর ঠিক পর পরই ব্রিটেনে মুদ্রা সংকট আসায় অবিশ্বাস্য লাভ করেন জর্জ। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মুনাফা করে নেন তিনি।
দর্শনের সঙ্গে পুঁজিবাজারের যোগটাই তাঁর এই সাফল্যের আসল ভিত্তি বলে দাবি করেন এই দুঁদে বিনিয়োগকারী। এটি ব্যাখা করে 'জেনারেল থিওরি অফ রিফ্লেক্সিভিটি' তত্ত্বের প্রণয়ন করেন।
উদারনীতি
মার্কিন মুলুকে জর্জ সোরোস তাঁর প্রগতিশীল এবং উদারনৈতিক রাজনৈতিক মতাদর্শের জন্য পরিচিত। তাঁর ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন দেশের নানা গোষ্ঠী ও ব্যক্তিকে অনুদান প্রদান করেন। ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে পূর্ব ইউরোপে কমিউনিজম বিরোধী শক্তিকে টাকা জুগিয়েছিলেন তিনি। তবে শুধু তাই নয়, ক্ষুধা ও দারিদ্র দূরীকরণ, সর্বশিক্ষার মতো খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিলিয়ে দিয়েছেন এই ধনকুবের।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সমালোচক
২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে 'হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র' তৈরি করার এবং মুসলমানদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ তুলে সমালোচনা করেন। CAA(সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট) নিয়ে প্রতিবাদকে সমর্থন করেই এই মন্তব্য করেন তিনি। প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ট ট্রাম্পেরও কট্টর সমালোচক ছিলেন তিনি।
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক