इंदौर :
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ইন্দোরের সুশীল নাথানিয়েল। তার একটাই দোষ তিনি জঙ্গিদের সামনে কলমা পরেননি। জঙ্গিরা তাকে হাঁটু গেড়ে বসতে বলে, তার ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তারপর তাকে কলমা পাঠ করতে বলে। আর কলমা পড়তে না পেরে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এলআইসির রিজিওনাল ম্যানেজার সুশীল জম্মু ও কাশ্মীরে স্ত্রীর জন্মদিন উদযাপন করতে গিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ৩০ বছরের মেয়ে আকাঙ্ক্ষা ও ২১ বছরের ছেলে অস্টিন। পরিবারের অন্য সদস্যরা তার এই সফর সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। খবর লাইভ হিন্দুস্তানের প্রতিবেদন অনুসারে।
সুশীল কাশ্মীরের উপত্যকায় তার পরিবারের সাথে সুখের দুটি মুহূর্ত কাটাতে গিয়েছিলেন, কিন্তু শীঘ্রই তার যাত্রা একটি ভয়ঙ্কর স্বপ্নে পরিণত হয়েছিল যা তার পরিবার কখনও কল্পনাও করতে পারেনি। সর্বত্র চিৎকার ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। জেনিফার কখনো কল্পনাও করেননি যে তার জন্মদিন তাকে সারা জীবনের জন্য এমন একটা গভীর ক্ষত তৈরি করে দেবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেনিফার তার দেওর বিকাশকে ফোনে জানিয়েছিলেন কীভাবে সুশীল আক্রান্ত হয়েছিলেন এবং কীভাবে তিনি এবং তার দুই সন্তান বেঁচে গিয়েছিলেন। বিকাশ জানান, আকাঙ্ক্ষা ও অস্টিন গেটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিল এবং সুশীলকে শৌচাগারে যেতে হয়েছিল। তখনই হামলা চালায় জঙ্গিরা। জঙ্গিদের দেখে সুশীল তার স্ত্রী জেনিফারকে লুকিয়ে থাকতে বলেন এবং একা জঙ্গিদের মোকাবিলা করেন। জঙ্গিরা তাদের হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করে। অতঃপর তিনি তার ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বলেন, তিনি একজন খ্রিস্টান। সন্ত্রাসীরা তাকে কলমা পড়তে বলে। কালমা পড়তে না পারায় তারা তাকে গুলি করে। হামলায় তার মেয়ে আকঙ্খার পায়ে আঘাত লেগেছে।
ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সুশীলের ছেলে অস্টিনও বিকাশকে ফোন করে বলেন, 'বাবাকে গুলি করা হয়েছে। তিনি মারা গেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাবাকে শেষবারের মতো দেখতে চান আকাঙ্খা। এমনকি অস্ত্রোপচারও করাতে চান না তিনি। তিনি বলেন, 'আমি শুধু বাবাকে খুঁজছি। এটুকুই আমার দরকার।
সুশীল নাথানিয়েল ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং একটি খ্রিস্টান পরিবারে ছিলেন। তিনি জেনিফারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি খতিয়াপুরার একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। মেয়ে সুরাটের ব্যাঙ্ক অফ বরোদার প্রথম শ্রেণির অফিসার এবং বেট একজন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। সুশীলের দাদা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিক। তার বয়স এখন ৮৭ বছর।