তাঁর সৎ ভাই নোয়েল টাটার আরও বেশি করে কাজের সুযোগ, অভিজ্ঞতা এবং তার প্রচার পাওয়া উচিত। তাঁকে আরও বেশি করে জটিল পরিস্থিতি সামাল দিতে শিখতে হবে। তবেই তাঁর পক্ষে আগামী দিনে টাটা গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব হবে। সৎ ভাই নোয়েল সম্পর্কে নাকি এমনটাই ভাবতেন রতন টাটা।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বইয়ে, সৎ ভাই নোয়েল টাটা সম্পর্কে সদ্য প্রয়াত শিল্পপতি তথা টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্য়ান রতন টাটার এমনই মনোভাব ছিল বলে দাবি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রতন টাটার মৃত্যুর পরই টাটা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করা হয় নোয়েল টাটাকে। টাটা ট্রাস্ট হল সেই সংস্থা, যা পরোক্ষে টাটা গোষ্ঠীর ১৬,৫০০ কোটির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে।
তথ্য বলছে, ২০১১ সালে যখন টাটা গোষ্ঠীতে রতন টাটার উত্তরসূরি নিয়োগের জন্য একাধিক ব্যক্তির ইন্টারভিউ করা হয়েছিল, সেই তালিকায় নোয়েল টাটাও ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট বইটির নাম - 'রতন টাটা আ লাইফ'। ইংরেজি ভাষায় রচিত এই বইয়ের লেখক - থমাস ম্যাথিউ। বইটটির প্রকাশনার দায়িত্ব সামলেছে 'হার্পারকোলিন্স পাবলিশার্স'।
এই বইয়ের প্রকাশ করা তথ্য়াবলী অনুসারে, ২০১১ সালে তাঁর উত্তসূরি নির্বাচনের প্রক্রিয়া থেকে রতন টাটা নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। যদিও অনেকেই চেয়েছিলেন রতন টাটা নিজে সেই কমিটিতে থাকুন। এমনকী, অনেকেরই ধারণা ছিল - এর জন্য তাঁকে ভবিষ্যকে আফশোস করতে হতে পারে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বইটিতে দাবি করা হয়, রতন টাটার এই কমিটিতে সংযুক্ত না থাকার নেপথ্য়ে বেশ কিছু কারণ ছিল। তিনি চেয়েছিলেন, যাঁকেই তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে বেছে নেওয়া হোক না কেন, তিনি যেন সর্বসম্মতিক্রমে অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নিযুক্ত হোন।
এক্ষেত্রে বর্তমান চেয়ারম্য়ানের উপস্থিতি নির্বাচকদের মতামতের প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। তাছাড়া, যাঁদের ইন্টারভিউ করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে অনেকেই টাটা গোষ্ঠীতে সেই সময় কর্মরত ছিলেন।
তাঁরা সকলেই যাতে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এবং সাবলীলভাবে ইন্টারভিউ দিতে পারেন, সেটাও রতন টাটা নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন।
দ্বিতীয় কারণটি ছিল আরও ব্যক্তিগত। কারণ, এই প্রতিযোগীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নোয়েল টাটা। পার্সি পরিবার বা পার্সি যে কোনও সংস্থায় এটা ধরেই নেওয়া হয় যে পরিবারের সংশ্লিষ্ট পরবর্তী সদস্যই বর্তমান প্রধানের উত্তরসূরি নির্বাচিত হবেন।
রতন টাটা এই বিষয়টি জানতেন বলেই নিজের উত্তরসূরি বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন একজন ব্যক্তিকে শুধুমাত্র তাঁর ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও দোষ-গুণ দিয়েই বিচার করা উচিত।
এক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির পারিবারিক, বংশগত, ধর্মীয় বা অন্য কোনও পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। এমনকী, যোগ্যতার বিচারে সেরা হলে তাঁর উত্তরসূরি হিসাবে কোনও বিদেশি নাগরিককে বেছে নিতেও আপত্তি ছিল না রতন টাটার।
এমনকী, রতন টাটা বিশ্বাস করতেন, সর্বসম্মতিক্রমে নোয়েল টাটা তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচিত না হওয়ায়, তার অর্থ এই হয় না যে সেটা কোনও 'নোয়েলবিরোধী' মানসিকতার প্রকাশ।
একইসঙ্গে, সংশ্লিষ্ট বইয়ে রতন টাটাকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, 'সম্ভবত, নোয়েলের যদি কঠিন কাজগুলি পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা থাকত, তাহলে তিনি আরও জোরালোভাবে তাঁর যোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে পারতেন।'
এই প্রসঙ্গেই রতন টাটা মন্তব্য করেছিলেন, সংস্থার 'শীর্ষ পদের জন্য সফলভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে, নোয়েলের কাছে যে পরিমাণ সুযোগ ও তা প্রকাশের অবকাশ ছিল, তা আরও বেশি থাকা উচিত ছিল।'
প্রসঙ্গত, প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট সিলেকশন কমিটির অংশ ছিলেন প্রয়াত সাইরাস মিস্ত্রী। সেই সময় তাঁকেই রতন টাটার উত্তরসূরি হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল। ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে রতন টাটা, টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দেন।