অরুণ দেব
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া রবিবার দাবি করেছেন যে, ৪ জুন বিকেল ৫.৪৫ মিনিটে চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর বিষয়ে তিনি জানতে পেরেছিলেন। সেদিন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) তাদের আইপিএল জয় উদযাপন করেছিল। এই ট্র্যাজেডির ফলে ১১ জন নিহত এবং ৫৬ জনেরও বেশি আহত হয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে আমি জানতে পারি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিকেল ৩.৫০ মিনিটে হাসপাতালে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও আমি বিষয়টি জানতে পারি বিকেল ৫.৪৫ মিনিটে। এর আগে পর্যন্ত পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। সিদ্দারামাইয়া বলেন, যে অন্যায় করেছে, তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নিয়েছি। তাঁর বক্তব্য থেকে বোঝা যায় যে বিধান সৌধে উদযাপন শেষ হওয়ার পরেই তিনি ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত হন। উল্লেখযোগ্যভাবে, তিনি চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে যোগ দেননি, যা সন্ধ্যা ৬.১০ নাগাদ শুরু হয়েছিল এবং উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার উপস্থিত ছিলেন। বিধান সৌধের নিরাপত্তা আধিকারিক এমএন কারিয়াসভানার লেখা একটি চিঠিতে রাজ্য বিধানসভার বাইরে এই অনুষ্ঠান আয়োজন নিয়ে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার একদিন পরেই তিনি এই মন্তব্য করেন।
কর্নাটকের মুখ্য়মন্ত্রী বলেন,অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে তিনি বলেন, 'ক্রিকেট স্টেডিয়ামের কাছে ঘটনাটি ঘটেছে। এর সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটা হওয়া উচিত হয়নি। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে এই অনুষ্ঠানটি ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন দ্বারা আয়োজিত হয়েছিল এবং তিনি কেবল আমন্ত্রণ পাওয়ার পরেই উপস্থিত ছিলেন। শীর্ষ নেতাদের কোনো পরিকল্পনা, বৈঠক বা সম্পৃক্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘উপমুখ্যমন্ত্রী কেউই ... (তারপর নিজেকে সংশোধন করে বললেন), না, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা আমি কেউই এটা (পরিকল্পনা সভা) সম্পর্কে জানি না। ’এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ছিল। ডিপিআর সচিব আমাকে অনুষ্ঠানের বিষয়ে অবহিত করেন। আমি মুখ্যসচিবকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, বিশেষত যেহেতু পুলিশ রাজি হয়েছে। পরে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব ও কোষাধ্যক্ষ আমার সঙ্গে দেখা করে আমন্ত্রণ জানান। অনুষ্ঠানটি তাদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল- আমি কেবল উপস্থিত ছিলাম। তারপর রাজ্যপালও এসেছিলেন।
পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গে তিনি আগের নানা ঘটনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন: 'একটি সেতু ভেঙে পড়েছিল, তখন কি কেউ পদত্যাগ করেছিলেন? কুম্ভমেলায় ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, বিজেপি বা কুমারস্বামী কি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছিলেন?
এদিকে, এই মর্মান্তিক ঘটনায় কংগ্রেস সরকারের সমালোচনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিরোধী দলনেতা আর অশোক এবং বিধায়ক প্রভু ভামলা চবন সহ বিজেপির প্রবীণ নেতারা বিধান সৌধের পদক্ষেপে প্রতিবাদ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া, উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জি পরমেশ্বরকে দায়ী করেছেন এবং তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘আসল অপরাধী হলেন মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনজনেরই পদত্যাগ করা উচিত। সাসপেন্ডেড পুলিশ অফিসারদের বলির পাঁঠা বানানোর অভিযোগ তুলে চৌহান বলেন, গোটা রাজ্যের দাবি। মন্ত্রীদের আড়াল করার জন্য তাদের বলি দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ দেবেন না। বরং নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করুন। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়াই অনুষ্ঠান তাড়াহুড়ো করায় সরকারের সমালোচনা করেন অশোক। তিনি বলেন, 'এটা সরকার নয়, তুঘলকি দরবার। সিদ্দারামাইয়া ও ডি কে শিবকুমারের পদত্যাগ করা উচিত,’মৃতদের প্রত্যেকের জন্য এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে এবং জবাবদিহিতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন। প্রথম মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর উৎসব অব্যাহত রাখার সমালোচনাও করেন তিনি। বিকেল সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটা নাগাদ যখন অনুষ্ঠান শুরু হয়, ততক্ষণে সাত থেকে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তা সত্ত্বেও উপমুখ্যমন্ত্রী অন্য একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন, যেখানে এক কোটি টাকার বাজি ফাটানো হয়েছিল। ১১ জনের মৃত্যুর পর পটকা ফাটানো হয়েছে, আপনাদের কি মানবিকতা আছে? অশোক প্রশ্ন তোলেন।
বেঙ্গালুরুর তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বি দয়ানন্দ-সহ পুলিশ আধিকারিকদের সাসপেন্ড করার বিরোধিতা করে বিজেপি দাবি করে, কুচকাওয়াজের অনুমতি না পাওয়ায় পুলিশের কোনও দোষ নেই। অশোক বলেন, বিজেপি পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের হয়ে লড়াই করবে। এই ঘটনাকে 'সরকার মদতপুষ্ট খুন' বলে উল্লেখ করে অশোক বলেন, কংগ্রেস নেতারা সমস্ত নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। এগারো জনের মৃতদেহের ওপর দিয়ে রাষ্ট্র শাসন করা যায় না। আপনি আইনের চোখে অভিযুক্ত। বিজেপি রাজ্যপাল থাওয়ারচাঁদ গেহলটের সাথে দেখা করে তাঁর হস্তক্ষেপ চাওয়া এবং সরকার বরখাস্তের জন্য চাপ দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রীকে 'বেঙ্গালুরুর আসল দোষী' আখ্যা দিয়ে কংগ্রেস নেতাদের কটাক্ষ করেন অশোক। তিনি বলেন, ব্যবসায়ী বিজয় মালিয়া এর আগে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দল আরসিবি-র প্রমোশন করেছিলেন, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন বেঙ্গালুরুর নতুন আরসিবি।