হরিয়ানার ফরিদাবাদের এক মহিলাকে খুন করে বাড়ির বাইরে গোপনে কবর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। প্রায় দু মাস ধরে ওই পরিবার দেহটি লুকিয়ে রেখেছিল। তাদের অপরাধের ব্যাপারেও কেউ টের পায়নি। তবে ওই মহিলার বাবা বাড়ির বাইরে সদ্য ভরাট করা একটা গর্ত নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
এখন স্বামী সহ পরিবারের চার সদস্য পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন এবং মহিলার দেহ কবর থেকে তোলা হয়েছে এবং ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। এর আগে হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৫ বছর বয়সি তন্নু রাজপুতকে পাল্লার রোশন নগরে তার শ্বশুরবাড়ির বাইরে মাটি খুঁড়ে গোপনে কবর দেওয়া হয়েঠিল।
২০২৩ সালে ২৮ বছরের অরুণ সিংয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তন্নু রাজপুত। তার মৃতদেহ তিনতলা বাড়ির সামনের রাস্তা খুঁড়ে ৮ থেকে ১০ ফুট গভীর গর্ত থেকে উদ্ধার করা হয়।
আদতে উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদ জেলার খেরা গ্রামের বাসিন্দা তন্নু রাজপুত।তিনি গত ২৫ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিলেন৷ তাঁর স্বামী পাল্লা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন৷ তাঁর স্বামী দাবি করেন, তিনি( বধূ) মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন এবং আগের দিন নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন৷ পরে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, খুনের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই এই দাবি। ফরিদাবাদে তন্নু রাজপুত হত্যাকাণ্ডের ৮টি চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা গিয়েছে।
সন্দেহের সূত্রপাত হয় যখন নিখোঁজ মহিলার তদন্তের সময় তন্নু রাজপুতের পরিবারের সঙ্গে পুলিশ যোগাযোগ করলে তারা জানান স্বামী বধূর পালিয়ে যাওয়ার যে দাবি করছেন তার সঙ্গে তারা একমত নন। তাদের সন্দেহ কিছু একটা গোলমেলে ব্যাপার আছে। তাঁদের দাবি, তন্নু রাজপুত বিনা বাক্যব্যয়ে উধাও হয়ে যাবেন না। তাদের ভয়: সে পালিয়ে যায়নি - তাকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে কোনও উত্তর মেলেনি।
এরপর শুক্রবার সকালে পুলিশ অরুণ সিংয়ের বাবা ভূপ সিংকে (৫০) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসে। কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর সে স্বীকার করে যে তন্নুকে মেরে ফেলা হয়েছে – এবং তার দেহটি বাড়ির ঠিক বাইরে পড়ে ছিল, গভীর রাতে কবর দেওয়া হয়েছিল যাতে কেউ লক্ষ্য না করে।
মাটি খুঁড়ে দেহ বের করার জন্য একটি জেসিবি মেশিন ডাকা হয়েছিল।তন্নুর পরিবার অসহায়ের মতো তাকিয়ে ছিল। আট ফুট নিচে তার দেহাবশেষ পাওয়া যায়। দুমাস তার খোঁজ ছিল না। অবশেষে তার দেহ মিলল মাটির অনেকটা নীচে। শুক্রবার বাদশা খান সিভিল হাসপাতালে একটি মেডিকেল বোর্ড ময়নাতদন্ত করেছে এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, তন্নুর দেহ কীভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানা গিয়েছে। অভিযোগ, তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন একটি কভার স্টোরি তৈরি করে প্রতিবেশীদের জানিয়েছিলেন, এলাকায় যাতে জল না জমে সেকারণে তাঁরা গেটের বাইরে গর্ত খুঁড়ছেন। আসলে তারা তার কবর প্রস্তুত করছিল। সেদিন গভীর রাতে, রাস্তা শান্ত হওয়ার পর, তারা গর্তের গভীরে তার মৃতদেহ পুঁতে দেয় এবং একটি আর্থমুভার দিয়ে দ্রুত তা ঢেকে দেয় - পরিবারের মধ্যে গোপন রাখার জন্য শ্রমিকদের এড়িয়ে চলে।
প্রতিবেশীদের বক্তব্য অনুসারে জানা গিয়েছে, গত ২২ এপ্রিল গলিতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। পরের দিন, তারা একটি মেশিন ব্যবহার করে তাদের বাড়ির ঠিক বাইরে খনন শুরু করে। এমনকি দুর্ঘটনা এড়াতেই গর্তের ওপর প্লাস্টিকের চাদর বিছিয়ে দেন তাঁরা। পাল্লা থানার এসএইচও ইন্সপেক্টর সত্য প্রকাশ বলেন, গর্তটি মূলত এপ্রিল মাসে নর্দমা সংযোগের জন্য খনন করা হয়েছিল, কারণ এই অঞ্চলে জল বা নিকাশি পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। পরিবারের লোকজন তা বালি দিয়ে ভরাট করে এবং হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পর অন্ধকারের আড়ালে তার দেহ সেখানে পুঁতে রাখে। প্রতিবেশীদের কারোরই কোনও ধারণা ছিল না যে কী ঘটেছিল। (গুরুগ্রামের দেবাশিস কর্মকারের ইনপুট সহ)