টানা ভারী বৃষ্টি এবং হড়পা বানের জেরে বিধ্বস্ত পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরের বেশ কিছু অঞ্চল।অবিরাম বৃষ্টির ফলে ভয়াবহ বন্যায় খাইবার পাখতুনখোয়া জুড়ে কৃষিজমি এবং বেশ কিছু বাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ১৫ অগস্ট থেকে পাকিস্তানে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।এই পরিস্থিতিতে এবার সামনে এল ভয়ঙ্কর দৃশ্য। পাকিস্তানের ইরাবতী নদীর জলস্তর বেড়ে কারতারপুর সাহিব কার্যত ভেসে গিয়েছে। যার জেরে শিখদের পবিত্র গুরুদ্বারে ৫ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত জলে ভরে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, ভারী বৃষ্টির জেরে পাকিস্তানের সাগর বাঁধে অতিরিক্ত জল জমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত জল ছেড়ে দেওয়া হয়। আর যার জেরে ভেসে গিয়েছে কারতারপুর সাহিব। পবিত্র এই গুরুদ্বারের লঙ্গর হল, পরিক্রমা, সরোবর ও সরাম একেবারে ডুবে গিয়েছে। নিচের তলা কার্যত জলের নীচে চলে যাওয়ায় গুরু গ্রন্থ সাহেব নিয়ে যাওয়া হয়েছে দোতলায়। অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থ সুরক্ষিত থাকলেও সার্বিক পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর।স্বেচ্ছাসেবকদের অতিথিশালায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এখন যাতায়াত বন্ধ। রাস্তার উপর দিয়েও জল বইছে, তাই নৌকা ছাড়া উপরের তলায় পৌঁছানোর আর কোন উপায় নেই। পরিস্থিতি অনুকূল হলেই ছাদে লঙ্গরের সরবরাহ মজুদ করা হচ্ছে। বন্যার জেরে ভারত-পাক সীমান্তে জিরো লাইন এলাকা জলের নীচে চলে গিয়েছে। ইরাবতী নদীর জল ধুসি বাঁধের উপর দিয়ে বইছে। যার জেরে আশেপাশের সমস্ত এলাকা বন্যার কবলে পড়েছে। সেই সঙ্গে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। ইতিমদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে, নয়া দিল্লি সম্ভাব্য বন্যা সম্পর্কে ইসলামাবাদকে সতর্ক করেছিল।
ভারত-পাক সীমান্ত থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কারতারপুর গুরুদ্বার। শেষবার সেখানে বড় বন্যা হয়েছিল ২০২৩ সালে। তবে সেবার বন্যা এত গুরুতর ছিল না। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর বলে মেনে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উল্লেখ্য, অপারেশন সিঁদুরের ঠিক আগে এই করিডোর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ভারতের তরফে।তারপর থেকে ভারতীয়দের জন্য এখনও বন্ধ রয়েছে এটি। শিখ ধর্মাবলীদের জন্য অত্যন্ত প্রবিত্র তীর্থক্ষেত্র গুরুদ্বারা দরবার সাহিব কারতারপুর বা কারতারপুর গুরুদ্বার। শিখ ধর্মগুরু গুরু নানক জীবনের শেষ ১৮ বছর কাটিয়েছিলেন এখানেই। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর কারতারপুর সাহিব পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে পড়ে। এরপর থেকে ভারতের শিখ সম্প্রদায়ের দাবি ছিল এই তীর্থক্ষেত্রে যাতে সহজে যেতে পারেন শিখ ধর্মাবলীরা, সরকার যেন তার ব্যবস্থা করে। সেই মতো ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে পাক সরকারের সঙ্গে কারতারপুর করিডর চুক্তি সম্পন্ন করে ভারত সরকার। যার মাধ্যমে ৪ কিমি রাস্তা পার করে ভারত থেকে পাকিস্তানের কারতারপুরে যেতে পারেন শিখ তীর্থযাত্রীরা। এর জন্য ভারতীয় শিখদের কোনওরকম ভিসা লাগে না।
প্লাবিত পাকিস্তান
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় পাকিস্তান শুক্রবার থেকেই বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়া লোকজনের সংখ্যা এরই মধ্যে দেড় লক্ষ অতিক্রম করেছে, ১৪ আগস্ট বন্যা সতর্কতা জারি করার পর স্বেচ্ছায় সরে যাওয়া প্রায় ৩৫ হাজার বাসিন্দাও এরমধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।পাঞ্জাব দিয়ে বয়ে যাওয়া রাভি, চেনব ও সুতলেজ নদীর আশপাশের কয়েক গ্রামের বাসিন্দাদের সেনাবাহিনীর সহায়তায় নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে, বলেছে তারা।এই নদীর কারণে কাছাকাছি অনেক এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।ওই এলাকায় ত্রাণ শিবিরগুলিতে খাবার, ওষুধ, শৌচালয় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে আগামী ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টায় পাঞ্জাব এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আরও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, সেক্ষেত্রে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন।