বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে বর্বরতার ভয়ঙ্কর তথ্য প্রকাশ্যে এনেছেন বিদেশ রাষ্ট্রমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং। সংসদে তিনি জানান, ২০২১ সাল থেকে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩৩৪টি এবং বাংলাদেশে অন্তত ৩,৫৮২টি নির্যাতনের ঘটনার কথা জানতে পেরে প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত সরকার।
রাজ্যসভায় ওঠা এক প্রশ্নের জবাবে বিদেশ রাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার নিয়মিতভাবে পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান-সহ প্রতিবেশী দেশগুলিতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা ও নৃশংসতার বিষয়টি নজরে রাখে। ইসলামাবাদ সম্পর্কে কীর্তি বর্ধন সিং বলেন, '২০২১ সাল থেকে, ভারত সরকার পাকিস্তান সরকারের কাছে সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কিত কমপক্ষে ৩৩৪টি ঘটনার বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। পাকিস্তানকে ভারত সরকার মনে করিয়ে দিয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়-সহ তার সকল নাগরিকদের প্রতি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা পালন করার কথা। সেই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক হিংসা, কুসংস্কার এবং ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।' তিনি আরও বলেন, ভারত জেনেভায় রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের অবস্থা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিও তুলে ধরেছে।
আরও পড়ুন-নোবেল চাই-ই! ভারত-পাক 'শান্তিতে' সরাসরি জড়িত ছিলেন ট্রাম্প, দাবি আমেরিকার
জুলাই মাসে, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনারের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, 'রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা আজ পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে চলমান হিংসা ও বৈষম্যের মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেফতার এবং উপাসনালয় ও সমাধিক্ষেত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ প্রতিরোধে দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।' বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'বিশেষজ্ঞরা জানান যে ধর্ম বা বিশ্বাসের ভিত্তিতে দুর্বল সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার খবরে আমরা হতবাক। পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় তাদের বিরুদ্ধে শত্রুতা এবং ঘৃণার প্রচারের প্রেক্ষাপটে কয়েক মাস ধরে অবিরাম আক্রমণ, হত্যা এবং হয়রানির সাক্ষী হয়েছে।'
অন্যদিকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশ রাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল থেকে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩,৫৮২টি হিংসাত্মক ঘটনার রিপোর্ট করা হয়েছে। তাঁর কথায়, 'ভারত সরকার এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই ভেবেই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে যে সে দেশের সরকার হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।'
এদিকে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, নোবেল জয়ী মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনকে উৎখাত করেছে। কিন্তু হাসিনার সরকারের পতনের এক বছর পরও প্রতিশ্রুত মানবাধিকার সংস্কার এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশে এখনও নির্বিচারে আটক এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। যদিও নিরাপত্তা খাতের সংস্কার এখনও স্থগিত রয়েছে। রাজনৈতিক সহিংসতা এখনও অনেক বেশি ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। জুলাই মাসে একদল উন্মত্ত জনতা রঙপুর জেলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তত ১৪টি বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।যদিও সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে এবং বলপূর্বক অন্তর্ধান সংক্রান্ত রাষ্ট্রসংঘের কনভেনশন অনুমোদন করেছে।
আরও পড়ুন-নোবেল চাই-ই! ভারত-পাক 'শান্তিতে' সরাসরি জড়িত ছিলেন ট্রাম্প, দাবি আমেরিকার
উল্লেখ্য, গণআন্দোলনের কারণে বাংলাদেশ ছাড়েন সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। তারপর থেকেই সেখানকার পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে। সে দেশে বারবার হিন্দু এবং সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগও উঠেছে। বাংলাদেশে এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নোবেলজয়ী মহাম্মদ ইউনুস। তাঁর আমলেই সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম পুলিশ।