শহরের ভিড়ে গা ঢাকা দিয়েও শেষরক্ষা হল না। অবশেষে জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদা ইন দ্য ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্টের এই মডিউলের মূল ষড়যন্ত্রকারীকে গ্রেফতার করেছে গুজরাট অ্যান্টি-টেররিজম স্কোয়াড। বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০ বছরের শমা পারভিনকে। গোয়েন্দাদের দাবি, ওই তরুণীই একিউআইএস মডিউলের প্রধান সংগঠক এবং মূল সমন্বয়কারী।
এর আগে গত ২৩ জুলাই একিউআইএস-র সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে চার জনকে গ্রেফতার করেছিল এটিএস। ধৃতদের নাম মহম্মদ ফারদিন, সেফুল্লা কুরেশি, জিশান আলি এবং মহম্মদ ফাইকের। গুজরাত, দিল্লি এবং নয়ডা থেকে একযোগে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। এরপরেই মূল ষড়যন্ত্রকারী শমা পারভিনকে গ্রেফতারি বড় সাফল্য বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
গুজরাটের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হর্ষ সাংভি এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, শমা পারভিন অনলাইন জিহাদি প্রোপাগান্ডা এবং জঙ্গি কার্যকলাপ ছড়ানোর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে উস্কে দেওয়ার কাজ করছিল। তিনি আরও বলেন, 'গুজরাট পুলিশ ও এটিএস একটি অনলাইন জঙ্গি নেটওয়ার্ককে চিহ্নিত করে ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে ভারতে বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ছক বানচাল হয়েছে।'
আরও পড়ুন-'কান খুলকে শুন লে…', সংঘর্ষবিরতিতে মার্কিন হাতযশের তত্ত্ব খারিজ জয়শঙ্করের
সূত্রের খবর, শমা পারভিন মূলত ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা হলেও বর্তমানে বেঙ্গালুরুর একটি এলাকায় বসবাস করছিল। তার একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট গোপনে নজরদারিতে ছিল। সেখান থেকেই উঠে আসে তার সঙ্গে আল কায়েদার সম্পর্ক এবং পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠনগুলির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ধৃতরা একটি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত এবং সারা দেশে একাধিক 'হাই প্রোফাইল' জায়গাকে নিশানা করে হামলার ছক কষছিল। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, এই জঙ্গি গোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ছিল এবং তারা বিদেশে থাকা হ্যান্ডলারের নির্দেশে কাজ করছিল। তাদের টার্গেট ছিল ভারতজুড়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জঙ্গি হামলা চালানো।
তদন্তকারীদের মতে, এই জঙ্গি মডিউলটি আগে চিহ্নিত নেটওয়ার্কগুলির থেকে আলাদা। এদের কোনও নির্দিষ্ট হামলার পরিকল্পনা বা সময়সীমা ছিল না, বরং অনলাইনে প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে তরুণদের মগজধোলাই করে জিহাদি আদর্শে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল মূল লক্ষ্য। তারা ইনস্টাগ্রামে পাঁচটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে ভিডিয়ো ও পোস্টের মাধ্যমে দাবি করত-'জিহাদের জন্য বোমা নয়, একটা ধারালো ছুরিই যথেষ্ট।' এই মডিউল মূলত দেখাতে চেয়েছিল যে খুব সাধারণ অস্ত্র দিয়েও সহিংসতা ঘটানো সম্ভব এবং সন্ত্রাস ছড়ানো যায়। তদন্তকারী সূত্রে খবর, এর আগে ধৃত ফারদিনের কাছ থেকে মৌলবাদী এবং নিষিদ্ধ সংগঠনের বিভিন্ন বইপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-'কান খুলকে শুন লে…', সংঘর্ষবিরতিতে মার্কিন হাতযশের তত্ত্ব খারিজ জয়শঙ্করের
শমা পারভিনকে বেঙ্গালুরু থেকে গ্রেফতার করার পর আদালতে হাজির করা হয়। ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে গুজরাটে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। তদন্তকারীদের মতে, শমা মূল চক্রী, এবং তাঁর মাধ্যমে অন্য কোনও আন্তর্জাতিক বা দেশীয় সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে।তার ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও অনলাইন অ্যাক্টিভিটি পরীক্ষা করে তাঁর সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক ও কার্যকলাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। তদন্তকারীদের মতে, এই গ্রেফতারি দেশজুড়ে সক্রিয় জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।