কুম্ভ মেলা। সেই কুম্ভমেলাতেই মৃত্যু মিছিল। পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন অন্তত অনেকে। সেই কুম্ভমেলাতে মারা গিয়েছিলেন খড়্গপুরের বাসিন্দা উর্মিলা মাইতি। এই সময় অনলাইনে সেই উর্মিলা মাইতির আত্মীয়া মৌমিতা মাহাতো তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন।
তিনি জানিয়েছেন, মহাকুম্ভে মৌনি অমাবস্যার রাতে হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়ে ৬বার পালটি খেয়ে মাটি আঁকড়ে যখন উঠলাম তখন বাঁ পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারছি না। পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা। সঙ্গীদের কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। ফোনেও পাচ্ছি না কাউকে। পরে একজনের সঙ্গে যোগাযোগ হল। ….ভোর নাগাদ দিদাকে ছাড়া একে একে সবার খোঁজ পেলাম।
তিনি জানিয়েছেন, …প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য় সঙ্গমঘাট থেকে হাঁটতে হাঁটতে সকাল ১০টা নাগাদ মায়ের সঙ্গে দিয়ে পৌঁছলাম স্থানীয় মোতিলাল নেহেরু মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে পুলিশ, স্বাস্থ্য়কর্মীদের কত করে বললাম আমার পায়ে চোট লেগেছে। কিছু ওষুধ দিন কেউ একটা ওষুধ পর্যন্ত দিল না।
এরপর তিনি জানিয়েছেন, কী মনে হল ওই অবস্থাতেই হাসপাতালে আহতদের মধ্য়ে দিদার খোঁজ শুরু করলাম। ভাবলাম দেখি যদি পাওয়া যায়। আহত প্রায় শ খানেক হবে। তাঁরা হাসপাতাল জুড়ে এদিক ওদিক শুয়ে আছেন। আমি তো দিদাকে খুঁজে যাচ্ছি। পুলিশ প্রশাসনের লোকজন হিন্দিতে জিজ্ঞাসা করলাম, উর্মিলা মাইতি বলে কেউ এসেছেন? তখন তারা বললেন নাম তো বলতে পারব না। জিজ্ঞাসা করলেন মেল না ফিমেল। বয়স কত?
বললাম ফিমেল ৭৯ বছর হবে।
'তাঁরা জানালেন মৃতদের মধ্য়ে এই বয়সের পুরুষ কয়েকজন আছেন। তারপর আমাকে নিয়ে গেলেন মর্গে। মা তখন মর্গের বাইরে। মর্গের ভেতরে একের পর এক মৃতদেহ আমাকে দেখানো হল। শেষ পর্যন্ত ত্রিশ বত্রিশটি দেখানোর পরে দিদাকে খুঁজে পেলাম। দৌড়ে বাইরে এসে মাকে নিয়ে মর্গের ভেতরে গেলাম।
ফোন করলাম খড়্গপুরে। বাকি আত্মীয়দেরও জানালাম। সবাইকে ধরাধরি করেও ময়নাতদন্ত করানো গেল না। শেষে আধিকারিকদের বললাম আমাদের অন্তত একটা বড় অ্য়াম্বুল্যান্স দিন। আমরা সাতজন আছি। না হলে সবাই ফিরতে পারব না। দিদাকে নিয়ে অ্য়াম্বুল্যান্সে শুক্রবার ফিরেছি। ২৪ ঘণ্টা পথ আসতে সময় লাগল ৪৪ ঘণ্টা।
দেহ পচন শুরু হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছিল। পরে আলাদা গাড়ি করা হয়। তিনি বলেন, আমি যে পোশাক পরে গেছিলাম সেই পোশাকেই ফিরলাম। সঙ্গে এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা বয়ে নিয়ে এলাম বুকের মধ্য়ে। '