ওড়িশার বিশ্ববিদ্যালয়ে নেপালের ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার রেশ পৌঁছে গেল কূটনৈতিক স্তরে। সোমবার নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি জানিয়েছেন, ওড়িশার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেপালের যে পড়ুয়ারা আছেন, তাঁদের কাউন্সেলিং করার জন্য নয়াদিল্লির দূত থেকে দু'জন অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে যে পড়ুয়ারা নেপালে ফিরে যেতে চান, তাঁদের ফেরার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হবে। আর যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে থেকে যেতে চান, তাঁরা থেকে যেতে পারবেন বলে জানিয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে আবার নেপালের বিদেশমন্ত্রী আরজু রানা দেউবা জানিয়েছেন যে ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
ছাত্রীর আত্মহত্যা, গ্রেফতার সহপাঠী ছাত্র
আর যে ঘটনা নিয়ে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেটার সূত্রপাত হয়েছে রবিবার দুপুর-বিকেলের দিকে। রবিবার ওড়িশার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজি ইউনিভার্সিটির হস্টেল রুম থেকে ২০ বছরের কম্পিউটার সায়েন্সের এক ছাত্রীর দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, ছাত্রীর পরিবারের এক সদস্যের অভিযোগের ভিত্তিতে সহপাঠী আদ্বিক শ্রীবাস্তবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে যে ওই তরুণীকে ব্ল্যাকমেল করছিল আদ্বিক। তার জেরেই চরম পদক্ষেপ করতে বাধ্য হয়েছেন।
আরও পড়ুন: TCS Employees Salary Increment: মার্চেই TCS কর্মীরা পেতে পারেন ইনক্রিমেন্ট লেটার! কত বেতন বাড়তে পারে? ১০% হবে?
সেই ঘটনার জেরে সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর উত্তাল হয়ে ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের গেট আটকে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন পড়ুয়ারা। তাঁরা দাবি করেন, মাসখানেক আগেই তরুণী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাতে কোনও ভ্রূক্ষেপ করা হয়নি। করা হয়নি কোনও পদক্ষেপ।
হস্টেল দ্রুত খালি না করায় মারধর করা হয়, উঠল অভিযোগ
তারইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে অবিলম্বে নেপালের পড়ুয়াদের হস্টেল খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে যে যাতায়াতের কোনও বন্দোবস্ত করা না থাকলেও অনেককেই কটক স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এক পড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের কোনও টিকিট বা কিছু দেওয়া হয়নি। আমাদের স্রেফ হস্টেলের বাসে তুলে কটক স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়। আর দ্রুত বাড়িতে ফিরে যেতে বলা হয়। স্টাফরা হস্টেলে ঢোকেন। আমাদের জিনিসপত্র খালি করতে বাধ্য করা হয়। এমনকী যাঁরা দ্রুত খালি করছিলেন না, তাঁদের মারধর করা হয়।’
আরও পড়ুন: BJP MLAs suspended from WB Assembly: ‘দুর্গা, কালী ঠাকুর ভাঙা সরকার’, বিধানসভা থেকে সাসপেন্ড হয়েই তোপ শুভেন্দুর
‘নেপালের যা বাজেট…’, বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের অভিযোগ
শুধু তাই নয়, ট্রেনের জন্য কটক স্টেশনে অপেক্ষা করার মধ্যেই নেপালের এক পড়ুয়া অভিযোগ করেন, যখন তাঁরা ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ করছিলেন, সেইসময় তাঁদের নিয়ে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেন দুই অধ্যাপক। তাঁর কথায়, ‘এক অধ্যাপক বলেন যে আমরা যেখানে সুরক্ষিত বোধ করি, সেখানে যেন বিদেয় হয়ে যাই। তিনি বলেন যে নেপালের যা বাজেট, তার থেকে বেশি টাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের কল্যাণে খরচ করে।’
আরও পড়ুন: Dipsita on Hindi language in WB: ‘….৯০% ক্ষেত্রে হিন্দিতে উত্তর আসবে,’ কলকাতায় বাংলার ‘দুর্দশা’ নিয়ে সরব দীপ্সিতা
ঢোক গিলল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ
আর সেইসব বিষয় নিয়ে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চাপের মুখে পড়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নেপালের পড়ুয়াদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। তারইমধ্যে পুলিশ জানিয়েছে যে মৃত ছাত্রীর মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য গ্যাজেট উদ্ধার করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।