পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (পিএনবি) কেলেঙ্কারিতে পলাতক হীরা ব্যবসায়ী মেহুল চোকসিকে ভারতে প্রত্যর্পণের বিষয়ে বেলজিয়াম সরকারের সঙ্গে দ্রুত কাজ করছে ভারত সরকার। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ভারতের প্রত্যর্পণের অনুরোধের ভিত্তিতে তাঁকে বেলজিয়ামে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই ইস্যুতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছি। তাঁকে যাতে ভারতে ফিরিয়ে আনা যায় এবং বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে যেতে পারে সেই কারণে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।' (আরও পড়ুন: ২৬/১১ মুম্বই হামলার চক্রী তাহাউরকে নিয়ে পাকিস্তানকে 'রিমাইন্ডার' দিল ভারত)
আরও পড়ুন: এপারের সংখ্যালঘুদের নিয়ে ঢাকার 'উদ্বেগের' আবহে ওয়াকফ নিয়ে কী বলল ভারত?
এর আগে বেলজিয়াম সরকার নিশ্চিত করে জানিয়েছিল যে ভারতের কাছ থেকে প্রত্যর্পণের অনুরোধের পরই ৬৫ বছর বয়সি চোকসিকে অ্যান্টওয়ার্প শহর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ১২ এপ্রিল। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভারত থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন চোকসি। সূত্রের খবর, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মেহুল চোকসির প্রত্যর্পণের জন্য প্রথম বেলজিয়ামের কাছে আবেদন জানায় ভারত। এরপর চলতি বছরের গোড়ায় বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে ফের সেই অনুরোধ পাঠায় সিবিআই।
আরও পড়ুন: ২৪৫% শুল্ক চাপিয়ে চিনের সঙ্গে 'ভালো চুক্তির' বার্তা ট্রাম্পের,উঠল ভারত প্রসঙ্গও…
পলাতক চোকসি বেলজিয়াম যাওয়ার আগে অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডায় থাকতেন। এদিকে তাঁর স্ত্রী প্রীতি বেলজিয়ামের নাগরিক। সেই সুবাদে সম্প্রতি মেহুল চোকসি 'এফ রেসিডেন্সি কার্ড' পান বেলজিয়ামের। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে প্রত্যর্পণ এড়িয়ে বেলজিয়ামে বসবাসের অনুমতি পেতে বিভ্রান্তিকর নথি ব্যবহার করেছিলেন মেহুল চোকসি। বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষের কাছে জাল নথি জমা দিয়েছিলেন এই পলাতক ব্যবসায়ী। তিনি নাকি তাঁর আগের ভারতীয় এবং অ্যান্টিগার নাগরিকত্ব গোপন করেছিলেন। এদিকে জানা গিয়েছে, ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ড যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন মেহুল। এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে অ্যান্টিগা থেকে নিখোঁজ হয়ে যান চোকসি, কিন্তু পরে তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়।
এদিকে মেহুল চোকসির আইনজীবী বিজয় আগরওয়াল জানিয়েছেন, তাঁদের জামিনের আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আইনজীবী বলেন, 'যেহেতু তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন, তাই মূলত তার শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করেই আমরা জামিনের আবেদন করব। একই সময়ে, আমরা আরও যুক্তি দেব যে তারা ফ্লাইট ঝুঁকি নয়। পিএনবি ১৩,০০০ কোটি টাকার পিএনবি কেলেঙ্কারির মূল অভিযুক্ত মেহুল চোকসি ও তাঁর ভাইপো নীরব মোদী। ২০১৮ সালে সিবিআই এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা নথিভুক্ত করেছিল। মুম্বইয়ের ব্র্যাডি হাউস শাখায় এই কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছিল। নীরব মোদী বর্তমানে লন্ডনের জেলে রয়েছেন। ভারত তাঁর প্রত্যর্পণের চেষ্টা করছে। ২০১৯ সালে ইডি ও সিবিআইয়ের অনুরোধে নীরব মোদীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই তাঁকে পলাতক অর্থনৈতিক অপরাধী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মুম্বইয়ের একটি বিশেষ আদালত পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের জালিয়াতি মামলায় পলাতক ব্যবসায়ী মেহুল চোকসির বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের তদন্তে বড় নির্দেশ দেয়। ২০১৮ সাল থেকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট মেহুলের যে ২,৫৬৫.৯ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল, তা বিক্রি করার অনুমোদন দেয় আদালত। ইডির সহায়তায় পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এই রায় দিয়েছিল। ফলস্বরূপ, মুম্বইয়ের ফ্ল্যাট এবং আন্ধেরির এসইপিজেডে গীতাঞ্জলি জেমস লিমিটেডের দুটি কারখানা সহ ১২৫ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয় লিকুইডেটরের কাছে।