ফের অশান্ত মণিপুর। বুধবার রাত ১১টা বেজে ১০ মিনিট নাগাদ আবারও একবার বন্দুকের শব্দে কেঁপে উঠলেন পশ্চিম ইম্ফলের কৌত্রুক চিং লেইকাইয়ের বাসিন্দারা। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, নতুন করে এই হামলার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই ওই গ্রামে পৌঁছে ড্রোনের মাধ্যমে বোমাবাজির ঘটনার তদন্ত শুরু করেন এনআইএ গোয়েন্দারা।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, মেইতেই অধ্যুষিত এই গ্রামে রাতের অন্ধকারে হামলা চালিয়েছে কুকি সন্ত্রাসবাদীরা। হামলাকারীরা গ্রাম লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং বোমাবাজি করে।
এর জবাবে পালটা সেখানে মোতায়েন থাকা নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরাও কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন। কিন্তু, শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, বুধবারের ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কেউ হতাহত হয়েছেন বলে জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩ মে থেকেই মণিপুরে অশান্তির আগুন জ্বলছে। যার জেরে এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ২২১ জনের প্রাণ গিয়েছে। ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। ১৩ হাজারেরও বেশি ঘর, বাড়ি ও অন্য়ান্য নির্মাণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি বিভিন্ন অস্ত্রাগার থেকে হাজার-হাজার অস্ত্র এবং গোলা-বারুদ লুট করা হয়েছে। যা এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যদিও পুলিশের তরফে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এদিকে, বুধবারই মণিপুর পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে কৌত্রুক গ্রামে ড্রোনের মাধ্যমে বোমাবাজির ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ। উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট ঘটনার তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার পর বুধবার প্রথম কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন।
উল্লেখ্য, ড্রোনের মাধ্যমে বোমাবাজির এই ঘটনাটি ঘটেছিল গত ১ সেপ্টেম্বর। প্রাথমিক অনুমান, কুকি জঙ্গিরাই এই হামলা চালিয়েছিল। যার জেরে ৩১ বছরের এক গ্রামবাসীকে প্রাণ হারাতে হয়। গুরুতর জখম হন তাঁর নাবালিকার কন্যাও।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, গত ১ সেপ্টেম্বরই প্রথম সেখানে এমন হামলার ঘটনা ঘটে। নিরাপত্তার কারণে তাঁরা গ্রামের আকাশে মাঝেমধ্যেই ড্রোন উড়তে দেখেন। কিন্তু, ১ সেপ্টেম্বরের আগে কখনও তাঁদের উপর ড্রোনের মাধ্যমে বোমাবাজি করা হয়নি।
প্রথমে পশ্চিম ইম্ফল পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও, পরে সেই তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর এজেন্সির পক্ষ থেকে বিশেষ এনআইএ আদালতে আরও একটি আবেদন জমা করা হয়। সেই আবেদনে বলা হয়, এই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের কাছে যা-যা তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তা যেন অবিলম্বে এনআইএ-কে হস্তান্তরিত করা হয়।
বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন এনআইএ তদন্তকারীরা। সেই দলে ছিলেন - স্থানীয় মহকুমা পুলিশ আধিকারিক এন ইঙ্গোচা। তাঁর সঙ্গে ফরেন্সিক দলের বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন। দুপুর ২টো পর্যন্ত তাঁরা ঘটনাস্থলে তদন্ত ও নমুনা সংগ্রহের কাজ চালান।