বাংলা নিউজ > ঘরে বাইরে > উপমহাদেশে শান্তি ফিরবে কীভাবে? ‘ধোঁয়াশা’র আড়ালে সাবালকত্ব পাওয়া যুদ্ধই কি একমাত্র পথ? বিশ্লেষণে রণবীর সমাদ্দার

উপমহাদেশে শান্তি ফিরবে কীভাবে? ‘ধোঁয়াশা’র আড়ালে সাবালকত্ব পাওয়া যুদ্ধই কি একমাত্র পথ? বিশ্লেষণে রণবীর সমাদ্দার

উপমহাদেশে শান্তি ফিরবে কীভাবে? ‘ধোঁয়াশা’র আড়ালে সাবালকত্ব পাওয়া যুদ্ধই কি পথ

মহাভারতের যুগেও ছিল Fog of War। এ যুগে বদলেছে তার ধরন। কিন্তু আধুনিক রণকৌশলের অঙ্গ এটি। এটিই ঠিক করে দেয় যুদ্ধে এগিয়ে থাকবে কারা। সাক্ষাৎকারে বললেন রণবীর সমাদ্দার।

ভারত পাকিস্তানের অশান্তি এবং যুদ্ধ পরিস্থিতির সূত্রে একটা বিষয় বারবার আলোচনায় উঠে এসেছে। ‘ফগ অফ ওয়ার’। যুদ্ধ নিয়ে ধোঁয়াশা বা যুদ্ধের ধোঁয়াশা। একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য, যুদ্ধে জয়লাভের জন্য, এই ধোঁয়াশা কেন এত দরকারি হয়ে উঠেছে? কেন এটি আধুনিক রণকৌশলের অবিচ্ছেদ্য অংশ? পাশাপাশি আরও একটা প্রশ্ন ফিরে এসেছে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে। এই উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কি যুদ্ধ ছাড়া আর কোনও পথ নেই? এই সব প্রশ্ন নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা মুখোমুখি হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক, গবেষক এবং শিক্ষাবিদ রণবীর সমাদ্দার-এর।

প্রশ্ন: যুদ্ধ পরিস্থিতি এখন কেটেছে। আপাতত দুই দেশই সিজফায়ারে রাজি হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে আমাদের দেশের মধ্যে পরিস্থিতি একটু ব্যতিক্রমী। অনেকেই বলছেন, এই সময়ে শান্তির চেয়ে যুদ্ধ করাই ভালো। একমাত্র সেই পথেই ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। এই বিষয়ে আপনার কী মনে হয়?

রণবীর: একথা সত্যি যে যুদ্ধ না থাকলে কেউ শান্তির কথা ভাবে না। এ প্রসঙ্গে বারট্রান্ড রাসেলের শান্তি প্রতিষ্ঠার নীতির প্রসঙ্গ ধরে একজন বলেছিলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার মর্ম শান্তি আন্দোলন শেষ হয়ে গেলে বোঝা যায়। শান্তি আন্দোলন যখন চলে, তখন তার গুরুত্ব টের পাওয়া যায় না। যুদ্ধ পরিস্থিতি কেটে যাওয়ার পরে আস্তে আস্তে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একটু একটু করে শান্তি ফিরিয়ে আনার কথা বলছে। এক দিনে পৃথিবীর কোথাও শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় না। এর জন্য সময় লাগে।

প্রশ্ন: এর আগেও ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। কার্গিলের সেই যুদ্ধের পরে শান্তি প্রতিষ্ঠাও হয়েছিল। সেবারের থেকে এবারের পরিস্থিতি কি আলাদা?

রণবীর: সেই সময় দুই দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ‘পাকিস্তান ইন্ডিয়া পিপলস ফোরাম ফর পিস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ শুরু হয়েছিল। ১৯৯৩ সালে। কার্গিল যুদ্ধের সময় এই ফোরাম সক্রিয় ছিল। অতীত ঘাঁটলে দেখা যাবে, সেই যুদ্ধের সময়েও দুই দেশেই জাতীয়তাবাদী স্বর উঁচু মাত্রায় উঠেছিল। কিন্তু এখনকার তুলনায় সেটা অনেক কম। বলা ভালো, দুটোর তুলনাই সম্ভব নয়। সেই সময় ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটা ক্রিকেট ম্যাচও হয় লর্ডসে। দুই দেশের মধ্যে শান্তি আনার জন্য ইমেল বিনিময় হয়েছিল। ফলে সব মিলিয়েই পরিস্থিতিটা ছিল অন্য রকম। সেই সময় শান্তি আন্দোলনে ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’ স্লোগান উঠেছিল। এবারে শুধু সেটুকু বললে, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না।

প্রশ্ন: তাছাড়া সেই সময় সংবাদমাধ্যম বা সমাজমাধ্যমও এতটা সক্রিয় ছিল না…

রণবীর: হ্যাঁ, এই দুই মাধ্যম এখনকার মতো ছিল না। দেশের সীমান্তে যুদ্ধ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই যুদ্ধ হচ্ছিল কার্গিলে। দেশের মূল ভূখণ্ডের অনেকটা উপরের দিকে। নিরাপত্তামূলক আইনও এতটা শক্তিশালী ছিল না। ফলে পরিস্থিতি অনেকটাই অন্য রকম ছিল। পাশাপাশি তিন-চার বছর আগে থেকে ‘পাকিস্তান ইন্ডিয়া পিপলস ফোরাম’ নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন: এবারে ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তে যে সংঘর্ষ হল, তা নিয়ে একদিকে সমাজমাধ্যমে নানা ভ্রান্ত খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। পাশাপাশি এও সত্যি, সংঘর্ষের পুরো ছবি ঠিক কেমন ছিল, তা নিয়েও কিছুটা ধোঁয়াশা রয়েছে। হয়তো দেশের নিরাপত্তার স্বার্থেই। এটা যুদ্ধের কোনও নতুন দিক আমাদের সামনে তুলে ধরছে?

রণবীর: যুদ্ধ নিয়ে ধোঁয়াশা বা Fog of War নতুন কোনও বিষয় নয়। মহাভারতেও এর উদাহরণ রয়েছে। ধর্মরাজ নিজে সেই ধোঁয়াশার পন্থা নিয়েছিলেন। এটা নতুন কোনও কৌশল নয়। তবে বলা যেতে পারে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এর আগে যে যুদ্ধ হয়েছে, সেগুলো একটু সেকেলে ছিল। এখন যুদ্ধ সাবালক হয়েছে। এবারের যুদ্ধ নিয়ে যে ধোঁয়াশা, তা লক্ষণীয়। তবে সেটাকে কীভাবে দেখা হবে, তা নির্ভর করছে দু’টি বিষয়ের উপরে। প্রথমত, যে দুটো দেশ যুদ্ধ করছে, তারা এটিকে যুদ্ধের অংশ হিসেবে কতটা প্রয়োজনীয় মনে করছে। যুদ্ধ করার নানা রকম রীতি থাকে। যেমন আমেরিকা যেভাবে যুদ্ধ করে, চিন সেভাবে করে না। আবার রুশদের পদ্ধতি এদের থেকেও আলাদা। এবার কে কোন পদ্ধতিতে যুদ্ধ করছে, তার উপর নির্ভর করে সে এই যুদ্ধের ধোঁয়াশাকে কতটা কাজে লাগাবে। এর পিছনে সমাজেরও কিছুটা ভূমিকা থাকে। পুরোটাই যে উপর থেকে নিয়ন্ত্রিত হয়, তাও বলা যাবে না। আর সমাজের ভূমিকা থাকলে সমাজমাধ্যমের ভূমিকা থাকবেই।

প্রশ্ন: আপনি কি বলতে চাইছেন সমাজমাধ্যম যুদ্ধের ধরন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে?

রণবীর: যুদ্ধ সম্পর্কে যাঁদের জ্ঞান যত কম, তাঁরা যুদ্ধ নিয়ে যত বেশি আলোচনা করতে থাকে, তত যুদ্ধ সম্পর্কে নানা কথা ছড়িয়ে পড়ে। এবং এর সঙ্গে প্রকৃত যুদ্ধের কোনও সম্পর্ক থাকে না। ফলে সমাজমাধ্যম যুদ্ধের ধরন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলেও যুদ্ধ নিয়ে ধোঁয়াশার অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে। এই ধোঁয়াশাকে কীভাবে দেখা হবে, সেটি নির্ভর করে আরও একটি বিষয়ের উপর।

প্রশ্ন: সেটা কী?

রণবীর: বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে আমরা দেখছি, অন্য একটা কৌশল নিয়ে এখন যুদ্ধ চালানোর চেষ্টা চলছে। যুদ্ধ সেখানে হবে বটে, যুযুধান একটা পক্ষ অন্য পক্ষের সামরিক সামর্থ্যকে শেষও করে দেবে। কিন্তু সাধারণ ভাবে পুরোদস্তুর যুদ্ধ এটাকে বলা যাবে না। অর্থাৎ ‘পুরো যুদ্ধ’ এবং ‘যুদ্ধ নয়’-এর মাঝামাঝি একটা জায়গা যুদ্ধের কৃতকৌশলের ফলে তৈরি হয়েছে। এটাও আধুনিক যুদ্ধের ধোঁয়াশার একটা দিক। ইউক্রেন যেমন দেখিয়ে দিয়েছে, ড্রোন প্রকৃত যুদ্ধের একটা অংশ। ড্রোন শুধু যে উপর থেকে তদারকি করে, তা নয়। ড্রোন বিপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্রের পূর্বাভাস দিতে পারে, প্রতিরক্ষাকে শক্তিশালী করতে পারে এবং অন্যত্র গিয়ে আক্রমণও করে আসতে পারে। চিনও যেমন যুদ্ধাস্ত্র তৈরির বিষয়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে ভারত এখনও যুদ্ধাস্ত্র তৈরিতে অনেকটাই অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল। এবং পাকিস্তানও তাই।

মহাভারতের যুগেও এই ‘যুদ্ধের ধোঁয়াশা’
মহাভারতের যুগেও এই ‘যুদ্ধের ধোঁয়াশা’

প্রশ্ন: তাহলে কি এই যুদ্ধটা শুধুমাত্র দুই দেশে সীমাবদ্ধ থাকছে না?

রণবীর: ইঙ্গিত সে রকমই। অনেকেই মনে করছেন, সমরাস্ত্র তৈরির প্রধান কারিগর যারা, সেই ফ্রান্স, চিন, আমেরিকা এই রণাঙ্গনে নিজেদের অস্ত্রের শক্তিপরীক্ষা করে নিতে চাইছে। ভবিষ্যতে যদি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বড় যুদ্ধ বাধে বা এই শক্তিশালী দেশগুলির নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ লাগে, তার আগে নিজেদের অস্ত্রের পরীক্ষা এই ভূভাগে করে নেওয়ার সুযোগ এরা নিচ্ছে বলে অনেকে দাবি করছেন। এখানেই আবার ফিরে আসছে ধোঁয়াশার প্রসঙ্গ। কার কী অস্ত্র রয়েছে, কার কোথায় শক্তি রয়েছে, সেটা যাতে অন্য কেউ জানতে না পারে, তার জন্য এই ধোঁয়াশা বজায় রাখাটা দরকারি। এভাবেই যুদ্ধের অঙ্গ হয়ে উঠছে ধোঁয়াশা। দুই পক্ষেরই চেষ্টা থাকছে নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি যতটা সম্ভব এড়িয়ে শত্রুর কোমর ভেঙে দেওয়া। কার্গিলের যুদ্ধে এটা কিছুটা দেখা গেলেও একাত্তরের যুদ্ধ এমন ছিল না। একাত্তর বা পঁয়ষট্টির যুদ্ধ ছিল সাবেকি। সেই হিসাবে আমরা এখন সাবালক হয়েছি, তা বলা যায়।

প্রশ্ন: আগের প্রসঙ্গ ধরে একটা কথা জানতে চাই। সমাজমাধ্যম কি যুদ্ধে আলাদা মাত্রা যোগ করছে?

রণবীর: বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্দিষ্ট লক্ষ্য আছে। তারা যেভাবে সমাজকে দেখতে চায়, সেভাবে যাতে দেখতে পারে, তার জন্য সমাজমাধ্যমকে কাজে লাগায়। সেটা তাদের বিষয়। কেউ কেউ বলছেন, এক সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ হয়েছিল বলে যুদ্ধ। এগুলো নানা জনের নানা মত। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যাঁরা যুদ্ধে যাচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু এত রকমের কারণের জন্য যুদ্ধে যান না। তাঁরা যুদ্ধের রীতিনীতি জানেন, পেশাদার ভাবে যুদ্ধ করেন, সেই বিষয়টায় বিশেষজ্ঞ বলে যুদ্ধে যান। কিন্তু তাঁদের একটা কাজ থাকেই। নিজেদের সমর্থনে যাতে মানুষ থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রাখা এবং বিপক্ষের মনোবল ভাঙা। কারণ মনে রাখতে হবে, যুদ্ধ যত ছোট মাত্রারই হোক না কেন, তার খরচ আছে। আর তার বিরূপ প্রভাব যাতে জনমানসে না পড়ে, যুদ্ধের বৈধতা যাতে মানুষের মনে প্রতিষ্ঠা করা যায়, সেটা দেখার জন্যও সমাজমাধ্যম শাসকের কাজে লাগে। তবে আবারও বলব, এই সমাজমাধ্যমের সঙ্গে প্রকৃত রণাঙ্গনের কোনও সম্পর্ক নেই।

প্রশ্ন: এই সংঘর্ষ চলাকালীন সমাজমাধ্যমে বেশ কিছু ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে পড়েছিল…

রণবীর: এটাও ওই যুদ্ধের ধোঁয়াশারই অঙ্গ। আধুনিক যুদ্ধ ব্যবস্থা এই ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে বলেই প্রতিপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আন্দাজ করা কঠিন হয়ে যায়। আর সেখান থেকেই সমাজমাধ্যমের মতো জায়গায় নানা ভুয়ো কথা ছড়িয়ে পড়ে। এমনকী যুদ্ধটা কেন হঠাৎ থেমে গেল, দেশ যে লক্ষ্যে যুদ্ধ করছিল, তার কতটা পূরণ হল, সেই সম্পর্কেও নানা মত ছড়িয়ে পড়ে এসব মাধ্যমে।

প্রশ্ন: গোড়ার প্রসঙ্গে আর একবার আসা যাক। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ– এই কথাটা সবাই বলছেন। কিন্তু যুদ্ধ কি শান্তি এনে দেয়?

রণবীর: বেশিরভাগ যুদ্ধরত দেশই বলে, তারা শান্তির জন্য যুদ্ধ করছে। এর কিছুটা কুযুক্তি, খানিকটা সত্যি কথা। কুযুক্তি কোন দেশ কোন পরিস্থিতিতে দেয়, তেমন উদাহরণ অনেক। পাশাপাশি এমনও পরিস্থিতি রয়েছে, যেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বীকে একেবারে দুর্বল করে দিয়ে দেশে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া উপায় থাকে না। তেমন ক্ষেত্রে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।

প্রশ্ন: তাহলে কি ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করা ছাড়া উপায় নেই? কী মনে করেন আপনি?

রণবীর: যে কোনও দেশের নিরাপত্তা দু’ভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব। এক, আলাপচারিতায়। দুই, যুদ্ধ করে। আমি ধরে নিচ্ছি, ভারত এবং পাকিস্তানের পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার খুব একটা শখ নেই। আমরা ভারতে আছি, এই দেশের কথা বলতে পারি। ভারত মনে করছে, পাকিস্তান আমাদের ক্ষতি করতে এতই উন্মুখ, যে আমরা যদি সেই দেশের যুদ্ধ করার শক্তিটাকে শেষ না করে দিতে পারি, তাহলে আমাদের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে না। সেক্ষেত্রেই যুদ্ধই একমাত্র পথ। কারণ অন্য যে পথটা, আলাপচারিতার পথটা, সেটা এখন বন্ধ। মুশারফ পরবর্তী সময় ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের আর ভালো করে কথাবার্তা হয়নি। কোনও রাজনৈতিক দলেরই কর্মসূচিতে এই আলাপচারিতার উল্লেখ আপাতত নেই। ফলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রশ্নে যুদ্ধের বৈধতা আরও বাড়ে।

প্রশ্ন: এখানে সার্ক কোন ভূমিকা পালন করে?

রণবীর: দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই সার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সার্ক অনেকটাই অকেজো। আর আন্তর্জাতিক ফোরামে যখনই ভারত-পাকিস্তানের ইস্যু উঠেছে, ভারত তখনই বলেছে এটা আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচনার বিষয় নয়, দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয়। হয়তো পাকিস্তানও তাই বলেছে। অথচ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা কখনও হয় না।

প্রশ্ন: এবারের অশান্তির গোড়াতেই রয়েছে সন্ত্রাসবাদীদের হানা। এটা থেকে ভারতের রক্ষা পাওয়ার উপায় কী?

রণবীর: এর মধ্যে সন্ত্রাসবাদের বিষয়টা ঢুকে পড়ে কূটনৈতিক বিষয়টি খুব জটিল হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশের এত জন নিরীহ মানুষ মারা গেলেন, সেখান থেকেই নতুন করে আবার অশান্তির সূচনা হল। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে যত জন মারা যান, পাকিস্তানে তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যান। একের পর এক মসজিদে বিস্ফোরণে শয়ে শয়ে মানুষ মারা গিয়েছেন, তা সংবাদমাধ্যম সূত্রেই জানা গিয়েছে। ফলে পাকিস্তানও নিরাপত্তাহীনতার শিকার। কী করলে ভারত এবং পাকিস্তান উভয়েই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, সেটা নিয়ে কথা বলার দরকার আছে। যেভাবে ইতিহাস দেখিয়েছে ফ্রান্স-জার্মানি, চিন-ভিয়েতনামের মতো দেশ আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে, সেভাবেই ভারত-পাকিস্তানের মধ্যেও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় কি না, তা দেখা দরকার।

প্রশ্ন: এর মধ্যে কাশ্মীর সংক্রান্ত বিবাদও নিশ্চয়ই বড় ভূমিকা নিচ্ছে?|

রণবীর: অবশ্যই। এই বিবাদ এমন একটা জায়গায় গিয়েছে যে, পাকিস্তান মদত দিচ্ছে এবং কাশ্মীর উপত্যকায় সন্ত্রাসবাদীরা জন্ম নিচ্ছে— এই দু’টি বিষয়ের মধ্যে আর তফাত করে দেওয়া যায় না। তা সে পাকিস্তান যতই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করুক না কেন, যতই বলুক না কেন, তারা সন্ত্রাসবাদে মদত দিচ্ছে না, তাদের দেশকে সন্ত্রাসবাদে ব্যবহার করতে দিচ্ছে না– তা মেনে নেওয়া কঠিন। এরকম অবস্থায় যদি কোনও আলোচনার সুযোগ না থাকে, আমরা যদি মেনে নিই, পাকিস্তানের সমরঘাঁটি, ওই দেশের নানা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাসবাদে মদত দিচ্ছে, শান্তি ফেরানোর বাকি সব রাস্তা বন্ধ, যুদ্ধের মধ্যে দিয়েই একমাত্র শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে-- এমন দাবির পক্ষে যুক্তি তৈরি হতে পারে।

প্রশ্ন: অন্য একটা প্রসঙ্গে আসি। বর্তমানে কংগ্রেসের তরফে একটা কথা বারবার বলা হচ্ছে, ইন্দিরা গান্ধী এই সময়ে থাকলে, তিনি পাকিস্তানকে সহজে শায়েস্তা করে দিতেন। এই কথাটা কি ঠিক?

রণবীর: ব্যক্তিগতভাবে কে ক্ষমতায় থাকলে কী করতেন, তা বলা কঠিন। কংগ্রেস রাজনৈতিক ভাবে এমন দাবি করবে, সেটাই স্বাভাবিক। কংগ্রেসের মূল যে নীতি, তার সঙ্গে বিজেপির নীতির কোনও তফাত নেই। একটা কথা ঠিকই, মুম্বইয়ে হামলার পর মনমোহন সিং যুদ্ধের রাস্তায় হাঁটেননি। কিন্তু রাহুল গান্ধী সেই নীতিতে বিশ্বাসী নন। বরং উলটে তিনি নরেন্দ্র মোদীকে এই বলে সমালোচনা করেন যে, তিনি নাকি চিনের সঙ্গে সমঝোতা করে নিচ্ছেন। ফলে তাঁরা ক্ষমতায় থাকলে যে আলাপ আলোচনার কোনও রাস্তা খোলা থাকত, এমন নয়। আইকে গুজরাল এক সময় দেখিয়েছিলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকলে দেশের উন্নতি কঠিন। এই নীতি ‘গুজরাল ডকট্রিন’ নামে খ্যাত। তার সঙ্গে বর্তমানের কংগ্রেসের নীতির বিশেষ মিল আছে বলে মনে হয় না।

প্রশ্ন: দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবগুলো দেশই যেন একটা টাইম বোমের উপর বসে আছে। অশান্তি লেগেই আছে এখানে। এর থেকে মুক্তির উপায় কী? কারাই বা সেই দায়িত্ব নেবে?

রণবীর: এটা খুবই দরকারি একটি বিষয়। প্রথমেই বলি, আমরা যদি ইজরায়েল এবং আরব অঞ্চলের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব, সেখানে অনেক বড় মাপের যুদ্ধ চলছে। বলকান অঞ্চলে এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। ইউক্রেন-রাশিয়ায় যে যুদ্ধ চলছে, সেটাও বেশ বড় মাপের। তার নিরিখে ভারত-পাকিস্তানের নিত্য অশান্তির বিষয় অতটাও বড় নয়। এবার প্রশ্ন হল, উপমহাদেশের শান্তি কীভাবে আসবে। যে যাই বলুন, এখানে ভারতের বড় ভূমিকা থাকবে। কারণ ভারত সবচেয়ে বড় দেশ। কোনও দিক থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার কোনও দেশ ভারতের সঙ্গে পেরে উঠবে না। সাধারণ মানুষের জীবনমানের নিরিখে ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে এগিয়ে নেই ঠিকই, কিন্তু অর্থনৈতিক ভাবে বা অন্যান্য মাপকাঠিতে ভারত এখানে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। তাই এই উপমহাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারত যদি উদ্য়োগ না নেয়, তাহলে তা সফল হবে না। ভারত গর্ব করে তার গণতন্ত্রের, তার স্বাধীন বিচারব্যবস্থার, তার স্বাধীন সংবাদব্যবস্থার। এখানে সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার একটা ইতিহাস আছে। তা নিয়েও ভারত গর্ব করে। ভারতের শান্তি আন্দোলনেরও ইতিহাস আছে। তাই একথা মনে করাই যায়, এই ভূখণ্ডে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ভারতকেই নিতে হবে।

প্রশ্ন: সেই উদ্যোগটা কীভাবে নেওয়া যেতে পারে?

রণবীর: সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এই অঞ্চলটা নিয়ে অন্য ভাবে ভাবতে চান। একটি অঞ্চল নিয়ে ভাবতে গেলে তো শুধুমাত্র ব্যবসা নিয়ে ভাবলে চলবে না, সেখানকার কর্ম সংস্কৃতি, কূটনৈতিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক সম্পর্ক, ঐতিহাসিক সম্পর্ক নিয়েও ভাবতে হবে। যে এলাকায় আমরা বাস করি, তাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এবার দক্ষিণ এশিয়ার কথা যদি বলতে হয়, প্রথমেই বলি, বাংলাদেশ যিনি চালাচ্ছেন, তাঁর এসব বোধবুদ্ধি আছে বলে মনে হয় না। শ্রীলঙ্কায় নতুন বামপন্থী নেতা এসেছেন, কিন্তু তিনিও দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি নিয়ে কী ভাবছেন, বলা মুশকিল। পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের নেতা জেলে বন্দি। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় নৈরাশ্য থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু নৈরাশ্য থাকলে তবেই সেখান থেকে রাস্তা বার করা যায়। আগামী দিনে হয়তো ভারতই সেই রাস্তা দেখাতে পারবে।

পরবর্তী খবর

Latest News

বাংলাদেশের উড়ন্ত বিমানের চাকা কেন খুলে গেল? প্রকাশ্যে এল 'কারণ' কলকাতা পুরনিগমের সমবায় ভোটেও নিরঙ্কুশ ঘাসফুল, শূন্যেই আটকে থাকল বাম-কংগ্রেস! GT-র বিরুদ্ধে আগ্রাসী শতরান, প্রথম প্লেয়ার হিসেবে IPL-এ নয়া ইতিহাস DC-র রাহুলের ছেলের মৃত্যুর ২ মাসের মাথায় সন্দেহ বাবার, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খতিয়ে দেখতেই... সইফ পুত্রের নাক নিয়ে মশকরা, পাকিস্তানি সমালোচককে কী বললেন চর্চিত প্রেমিকা পলক? হাসিনার দেশ ছাড়ার এক বছরের মধ্যে আদৌ কি বাংলাদেশে ভোট হবে? মুখ খুললেন ইউনুস দুর্ভেদ্য সুরজ, টাই-ব্রেকারে বাংলাদেশকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ চ্যাম্পিয়ন ভারত প্লে-অফের পথে PBKS, এদিকে দলের অধিনায়কের চোট নিয়ে চিন্তা, কী আপডেট দিলেন শ্রেয়স? ২০ মে সূর্য ও শনিদেব কী ঘটাতে চলেছেন? কর্কট সহ কোন কোন রাশিতে লাভ! রইল জ্যোতিষমত শিক্ষকদের আন্দোলনে ছোটরা কেন? বিধাননগর পুলিশের কাছে জবাব চাইল কমিশন

Latest nation and world News in Bangla

হাসিনার দেশ ছাড়ার এক বছরের মধ্যে আদৌ কি বাংলাদেশে ভোট হবে? মুখ খুললেন ইউনুস ‘দিল্লির দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়েছি, ওয়াশিংটনের গোলামির জন্য নয়!’ ‘স্পাইং’ এ অভিযুক্ত জ্যোতির সঙ্গে যোগ? স্ক্যানারে বাংলার পড়শি রাজ্যের ইউটিউবার আরও এক ভারত বিরোধী জঙ্গি খুন পাক মাটিতে, নেপথ্যে সেই 'অজ্ঞাত পরিচয় বন্দুকবাজ' বিচারকরা প্রোটোকল ভাঙলেই...! ১৪২ ধারা নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য প্রধান বিচারপতির চাপে পাক? পাকিস্তানের উপর ১১টি শর্ত চাপাল আইএমএফ, দাবি Report-র পহেলগাঁও হামলার পর মিষ্টি বিতরণ! পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা হায়দরাবাদে বিধ্বংসী আগুনে আট শিশু-সহ ১৭ জনের মৃত্যু, দুর্ঘটনার কারণ কী? সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল মাদক সেবনের ছবি, পদ গেল ছাত্র আন্দোলনের নেত্রীর 'পহেলগাঁওয়ের হানার আগে জ্যোতি..,' কী নিয়ে তদন্ত?মুখ খুলল পুলিশ,PIOদের নজরে কারা?

IPL 2025 News in Bangla

GT-র বিরুদ্ধে আগ্রাসী শতরান, প্রথম প্লেয়ার হিসেবে IPL-এ নয়া ইতিহাস DC-র রাহুলের প্লে-অফের পথে PBKS, এদিকে দলের অধিনায়কের চোট নিয়ে চিন্তা, কী আপডেট দিলেন শ্রেয়স? চার বছর পর IPL-এর করোনা আতঙ্ক, যে কারণে LSG-র বিরুদ্ধে খেলতে পারবেন না SRH তারকা সোওয়াই মানসিং স্টেডিয়ামে রেকর্ড রান করে RR-কে হারিয়ে,কার্যত প্লে-অফ পাকা PBKS-এর দলে নিয়েও ফেরত দিতে চেয়েছিল PBKS, ভুল করে কেনা ক্রিকেটার এখন পঞ্জাবের ‘অধিনায়ক’ আঙুলে গুরুতর চোট, তাই নিয়েই PBKS-এর হাল ধরলেন শ্রেয়স, স্পর্শ করলেন বড় মাইলস্টোন PSL-এর ফ্লপস্টার IPL অভিষেকেও ডাহা ফেল, পন্টিংয়ের অজি প্রীতির মাশুল দিচ্ছে PBKS? গিল থেকে লোকেশ রাহুল, DC vs GT ম্যাচে দুর্দান্ত রেকর্ড গড়তে পারেন এই চার তারকা নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়ুল মেরেছে… KKR-এর ভুলগুলো ধরিয়ে দিলেন অজি প্রাক্তনী মুস্তাফিজুর কি DC-তে স্টার্কের অভাব মেটাতে পারবেন? রেকর্ড বলছে কোনও অংশে কম নন

Copyright © 2025 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.