ভারতের সুনাম নষ্ট করছেন চেষ্টা করছেন বিরোধী দলনেতা। ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন বায়ুসেনার হাত বাধার দাবি প্রত্যাখ্যান হতেই রাহুল গান্ধীকে নিশানা করেছে বিজেপি। সম্প্রতি লোকসভায় বিরোধী দলনেতা দাবি করেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন বায়ুসেনার হাত বাধা ছিল। কিন্তু তাঁর সেই অভিযোগ পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছেন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিং।
রাহুল গান্ধীর বিস্ফোরক অভিযোগ
লোকসভায় 'অপারেশন সিঁদুর' নিয়ে আলোচনার সময় রাহুল গান্ধী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত ছিল। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে ভারতীয় বিমান বাহিনীকে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। কংগ্রেস নেতার কথায়, 'এই সিদ্ধান্তের কারণে আমাদের পাইলটদের হাত বাঁধা ছিল। ফলস্বরূপ, আমরা কিছু বিমান হারিয়েছি।' তিনি সিডিএস জেনারেল অনিল চৌহানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, 'তাঁর হাত পিঠের পিছনে বাঁধা ছিল।' রাহুল দাবি করেন, সামরিক অভিযানের লক্ষ্য ছিল প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি রক্ষা করা। তিনি ইন্দোনেশিয়ায় ভারতের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশের বক্তব্য উল্লেখ করে বলেন, ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলটদের পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উপর আক্রমণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
বায়ুসেনা প্রধানের বক্তব্য
বেঙ্গালুরুর অনুষ্ঠানে অপারেশন সিঁদুর পরিচালনার ক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেছেন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিং। তিনি জানান, সেনাবাহিনীকে পরিকল্পনা ও আক্রমণের জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। ফলে কতটা আক্রমণ করা হবে, তা নিয়ে সেনা নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিন বাহিনীর মধ্যে নির্ভুল সমন্বয় রক্ষার জন্য চিফ অব ডিফেন্স স্টাফকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের একটি মূল কারণ ছিল রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির উপস্থিতি। আমাদের খুব স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আমাদের উপর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি। যদি কোনও বিধিনিষেধ থাকে, পরিকল্পনা এবং কার্যকর করার পূর্ণ স্বাধীনতা আমাদের ছিল। আমাদের আক্রমণগুলি ক্যালিব্রেট করা হয়েছিল কারণ আমরা এটি সম্পর্কে পরিপক্ক হতে চেয়েছিলাম। তিনটি বাহিনীর মধ্যে একটি সমন্বয় ছিল। সিডিএসের পদটি সত্যিই একটি পার্থক্য তৈরি করেছিল। তিনি আমাদের একত্রিত করার জন্য সেখানে ছিলেন, সমস্ত সংস্থাকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে এনএসএও একটি বড় ভূমিকা পালন করেছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'তাদের (পাকিস্তান) কোনও বিমান আকাশ এমনকি এমআরএসএএম-এর সীমানার কাছাকাছিও আসতে পারেনি। তাদের সমস্ত বিমান এলআরএসএএম দ্বারা আক্রমণ করা হয়েছিল, কারণ তারা দূরে থাকার চেষ্টা করছিল, কিন্তু তবুও তারা মাঝে মাঝে আমাদের সীমার মধ্যে ছিল এবং সেই সুযোগই আমরা পেয়েছিলাম। আমাদের আক্রমণের কথা বলতে গেলে, সেই রাতে আমাদের কোনও বাধা ছিল না এবং আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা প্যান ফ্রন্টে আক্রমণ করব, আমরা সম্পদ প্রসারিত করব।'
বিজেপির নিশানা
এরপরেই রাহুল গান্ধীকে আক্রমণ করেছে বিজেপি। তারা বলেছে, কংগ্রেস সাংসদ মিথ্যা কথা বলছেন এবং ভারতের সুনাম নষ্ট করছেন চেষ্টা করছেন। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, 'আপনি (রাহুল গান্ধী) কেন সব সময় মিথ্যা কথা বলেন? আমি অনেক বিরোধী নেতাকে দেখেছি যারা সংসদীয় মান বজায় রাখতেন। আপনি কেবল আপনার সম্মান নষ্ট করেননি বরং ভারতের সুনামকেও নষ্ট করেছেন। অন্যদিকে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, বায়ুসেনা প্রধানের মন্তব্যে কংগ্রেস দলকে লজ্জিত হওয়া উচিত। তিনি বলেন, 'প্রথমত, তাদের নেতারা ভারতের ক্ষতি নিয়ে মিথ্যাচার করেছে। দ্বিতীয়ত, তারা পাকিস্তান-সৃষ্ট বিভ্রান্তিকর প্রচার তুলে ধরে দাবি করেছে যে মোদী সরকার আমাদের সেনাবাহিনীর উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।'