বিএনপি বারংবার দাবি করেছিল, সরকারে থেকে যেন কোনও রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা না করেন জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র নেতারা। এই আবহে নাহিদ ইসলাম সরকারি উপদেষ্টার পদ ছেড়েছেন। তবে ইউনুসের সরকারে এই ছাত্র নেতাদের প্রভাব সর্বজনবিদিত। এরই মাঝে জানা গিয়েছে, 'জাতীয় নাগরিক পার্টি' বা এনসিপির আত্মপ্রকাশের মঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্যে প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস সহ সরারের সকল উপদেষ্টাকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, আজ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এই দলের আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যে বড় জমায়েতের আয়োজন করা হয়েছে। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশের নয়া দলের নাম চূড়ান্ত, মাথায় নাহিদ, সারজিস-হাসনাতরা কোন পদে?)
এদিকে ছাত্রদের নতুন দলে যোগদানের জন্য সরকার থেকে আগেই পদত্যাগ করেছিলেন নাহিদ ইসলাম। মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের উপদেষ্টার পদে ছিলেন নাহিদ। তবে ছাত্র সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে এখনও সরকারে আছেন মাহফুজ আলম, আসিফ মাহমুদরা। এদিকে ছাত্রদের এই নয়া দলে শিবিরের প্রাক্তন নেতাদের কেউ যোগ দেননি। এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির থেকে সমসংখ্যক নেতাকে শীর্ষ স্থানীয় পদে রাখা হয়েছে।
এদিকে নাহিদরা যখন নয়া দলের ছক কষতে ব্যস্ত ছিলেন, তখন ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার অফিসের গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে সেখানে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেছিলেন তাঁরা। ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর গড়িয়েও জারি ছিল সেই অবস্থান। এদিকে মোটের ওপর এই প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণই ছিল। তবে অফিসের সামনে কোনও সরকারি গাড়ি এলেই অবস্থানকারীরা স্লোগান তুলছেন - 'এক দুই তিন চার, সব শালারা বাটপাড়।'
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কার্যত রাস্তায় নেমে 'যুদ্ধ' করেছিলেন বাংলাদেশের একটা বড় অংশ। প্রাথমিক ভাবে সেই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের হলেও পরে তাতে যোগ দেন রিক্সা চালক থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকরা। এই আবহে হাসিনা জমানায় পুলিশের গুলি এবং লাঠির বাড়িতে জখম হয়েছিলেন বহু 'যোদ্ধা'। হাসিনা পরবর্তী সময়ে সেই সব 'যোদ্ধাদের' যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা ঘোষণা করেছিল ইউনুস সরকার। এদিকে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এখন কেউ সরকারে কেউ নতুন দলে। তবে যে সকল যোদ্ধারা পথে নেমে জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছিলেন, তাঁরা আজও সন্তুষ্ট নন। এই আবহে ইউনুসের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেন হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে জখম ব্যক্তিরা।
অবস্থান বিক্ষোভে সামিল ব্যক্তিদের অভিযোগ, আন্দোলনে আহতদের শ্রেণি বিন্যাসে বৈষম্য হয়েছে। এদিকে শহিদদের পরিবারের সদস্যদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত তারা অবস্থান কর্মসূচি চলিয়ে যাবেন বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। উল্লেখ্য, এর আগেও বিভিন্ন সময় আন্দোলনে আহতরা ঢাকার শাহবাগ, উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অবরোধ করেছিলেন। এই আবহে সম্প্রতি আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ মেটাতে ইউনুসের সরকার ঘোষণা করে, হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে মৃতদের 'জুলাই শহিদ' এবং আহতদের 'জুলাই যোদ্ধা' বলে অভিহিত করা হবে। এদিকে প্রতিটি ‘জুলাই শহিদ’ পরিবারের জন্য এককালীন ৩০ লাখ টাকা ও মাসিক ২০ হাজার টাকা ভাতা প্রদান করা হবে। ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে তিনটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ভাতা দেওয়া হবে তাঁদের। এখানেই অভিযোগ, আহতদের শ্রেণি বিন্যাসে বৈষম্য করা হয়েছে।