বাংলাদেশে কবে হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন? এই প্রশ্নের নির্দিষ্ট উত্তর আজও অধরা। সেদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস আলগোছে একটা আভাস দিয়েছেন যে চলতি বছরের (২০২৫) ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের (২০২৬) জুন মাসের মধ্যে কোনও একটি সময়ে নির্বাচন হতে পারে! কিন্তু, বিএনপি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দাবি সত্ত্বেও নির্বাচন নিয়ে নির্দিষ্ট রোডম্যাপ তিনি প্রকাশ্য়ে আনেননি। যা নিয়ে বিএনপি আগেই সর্বসমক্ষে উষ্মা প্রকাশ করেছে। এবার বাংলাদেশ জামাত-ই-ইসলামির পক্ষ থেকেও কার্যত ঘুরিয়ে নির্বাচনের জন্য ডেটলাইন বেঁধে দেওয়া হল!কেন বলা হচ্ছে একথা? কারণ, আজই (শনিবার - ৩ মে, ২০২৫) এই ইসলামপন্থী রাজনৈতিক সংগঠন বা দলের পক্ষ থেকে একটি দাবি বা মতামত প্রকাশ্যে পেশ করা হয়েছে। সেই মতামত পেশ করেছেন দলের অন্যতম নেতা বা 'আমির' শফিকুর রহমান। কী বলেছেন তিনি? তাঁর বক্তব্য হল, স্থান, কাল বিচার করা হলে বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য আদর্শ সময় হল, আগামী বছরের (২০২৬) ফেব্রুয়ারি মাস। কিন্তু, যদি একান্তই সেই সময়ের মধ্যে নির্বাচন না করানো যায়, তাহলে তা আগামী বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যে তা অবশ্যই সেরে ফেলা উচিত। কিন্তু, তার বেশি দেরি হওয়া উচিত নয়।বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম অনুসারে - এদিন রাজধানী ঢাকা শহরের মগবাজারে জামাত-ই-ইসলামির জেলা ও মহানগরী আমির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই মঞ্চ থেকেই এই মত প্রকাশ্যে পেশ করেন শফিকুর রহমান।এক্ষেত্রে তাঁর যুক্তি হল, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সময় থেকে মার্চ মাসের প্রথম দুই তৃতীয়াংশ সময় পর্যন্ত রোজা চলবে। তাই সেই রোজা শুরু হওয়ার ঠিক আগে অথবা রোজা শেষ হওয়ার পরে নির্বাচন করানো যেতে পারে। কারণ, রোজা চলাকালীন ভোট প্রক্রিয়া রাখা বাঞ্ছনীয় নয়। কিন্তু, কোনও মতেই এই প্রক্রিয়া সারতে এপ্রিল মাস (২০২৬) পেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়।লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, কিছুদিন আগেই জামাত নেতা সৈয়দ আবদুল্লাহ মহম্মদ তাহের জানিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়েছে। এবং সেই বৈঠকে বিদেশি অভ্যাগতদের তাঁরা জানিয়েছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুসারে - চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবং ইউনুস প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা - অর্থাৎ - বাংলাদেশের জামাত নেতৃত্ব সহমত।কিন্তু, তাহেরে সেই বক্তব্য়ের সঙ্গে শফিকুরের এদিনের বক্তব্য মিলছে না। শফিকুর স্পষ্ট জানিয়েছেন, সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু, দীর্ঘকাল ধরে তা চালিয়ে গেলে চলবে না। সংস্কার প্রক্রিয়ায় গতি আনতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরেই ভোটে যেতে হবে। এমনকী, দ্রুত সংস্কার সারতে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সহযোগিতা করারও আবেদন জানিয়েছেন তিনি।প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি নির্বাচনের প্রশ্নে অবস্থান বদল করল জামাত? ঘুরিয়ে ইউনুস প্রশাসনকে সময় বেঁধে দিল তারা? নাকি এ নিয়ে জামাতের অন্দরেই মতভেদ রয়েছে?