'প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহে নির্ধারিত সময়সীমা মানা হচ্ছে না।' এমনই অভিযোগ তুলে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল অমরপ্রীত সিং। বৃহস্পতিবার দিল্লিতে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি সম্মেলনে বক্তৃতা দিয়েছেন এয়ার চিফ মার্শাল। সেখানে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ভারতের সাফল্য এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেশের আত্মনির্ভরশীল হয়ে ওঠার কথা বর্ণনার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বায়ুসেনা প্রধানের মতে, প্রতিরক্ষা চুক্তিতে এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, যা পূরণ করা সম্ভব নয়। তিনি প্রশ্ন তোলেন, 'কেন আমরা এমন কিছু প্রতিশ্রুতি দেব, যা অর্জন করা সম্ভব নয়? চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ই আমরা কখনও কখনও জানি যে এটি সময়মতো বাস্তবায়িত হবে না, তবুও আমরা চুক্তি স্বাক্ষর করি। এতে পুরো প্রক্রিয়াটি বিকৃত হয়।'
এই প্রসঙ্গে তিনি হতাশাপ্রকাশ করে উল্লেখ করেন, তেজস এমকে১এ যুদ্ধবিমান সরবরাহে বিলম্বের কথা। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)-এর সঙ্গে ৪৮ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল সরকারের। চুক্তি অনুসারে ৮৩টি যুদ্ধবিমান দেওয়ার কথা ছিল ওই সংস্থার। প্রাথমিকভাবে ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে যুদ্ধবিমানগুলি সরবরাহ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত একটিও সরবরাহ হয়নি।তিনি এএমসিএ এবং তেজস এমকে২-এর প্রোটোটাইপ তৈরিতেও বিলম্বের সমালোচনা করেন।
এয়ার চিফ মার্শাল সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সহজাত আস্থার উপর জোর দিয়ে বলেন, 'আমাদের মধ্যে আস্থা একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। প্রথম মিশন থেকেই আমাদের একে অপরের উপর ভরসা করতে হয়, কারণ আমাদের জীবন একে অপরের উপর নির্ভর করে।' তিনি বলেন, 'আমরা সকলেই একটি বৃহত্তর শৃঙ্খলের অংশ। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের কোনও গোষ্ঠী দুর্বল না হয়, যার কারণে এই শৃঙ্খল ভেঙে পড়ে। আমরা সকলেই দক্ষতা অর্জনের জন্য সমানভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর উন্নতি করতে হবে।'
বায়ুসেনা প্রধান আরও বলেন, 'আমাদের এখন প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি। যুদ্ধ জয়ের জন্য আমাদের বাহিনীকে ক্ষমতায়ন করতে হবে।' তিনি প্রতিরক্ষা শিল্পে আত্মনির্ভরতার উপর জোর দিয়ে বলেন, 'আমাদের শুধু উৎপাদন নয়, ভারতে ডিজাইন এবং উন্নয়নের কাজও করতে হবে।'
তাঁর এই বক্তব্য ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বেসরকারি শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতা এবং সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে।এই সম্মেলনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের উপস্থিতিতে এয়ার চিফ মার্শাল সিংয়ের বক্তব্য ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর আলোকপাত করে। তাঁর মন্তব্য, ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং আত্মনির্ভরতার প্রয়োজনীয়তার দিকে ইঙ্গিত করে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।