গোটা বিশ্ব বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আঁচ ভালমতোই টের পাচ্ছে। ছোট ছোট ইউরোপীয় দেশগুলিও বুঝতে পারছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুধুমাত্র ইউক্রেন দখল করেই থামবেন না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৯ সালে অবিভক্ত সোভিয়েতের আগ্রাসন রুখতে ইউরোপীয় দেশগুলি যে নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন বা ন্যাটো তৈরি করেছিল, সেখানেও ফিরে এসেছে পুরনো আশঙ্কা। নিজেদের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সারাইয়ের কাজে নেমেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)।
বুধবার ইইউ নেতারা রাশিয়ার হুমকিকে সামনে রেখে ইউরোপের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং ইউক্রেনের আর্থিক সহায়তা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করতে ডেনমার্কে বৈঠক করেছেন ইউরোপীয় নেতারা। সাম্প্রতিক ইউরোপের আকাশসীমায় রাশিয়ার অনুপ্রবেশ ও ডেনমার্কের বিমানবন্দরগুলিতে অজ্ঞাত ড্রোন দেখার ঘটনায় ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদারের চাপ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে রয়েছে পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া-সহ পূর্ব সীমান্তের দেশগুলি। পোল্যান্ড ন্যাটোভুক্ত দেশ হলে, তাদের আকাশে রুশ ড্রোনের আবির্ভাবে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এই আবহে ইউরোপের নেতারা কোপেনহেগেনে বৈঠকে বসেন। বেসামরিক ড্রোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং ন্যাটো মিত্ররা ডেনমার্কে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছে। অনুপ্রবেশ করা রুশ ড্রোন দ্রুত শনাক্ত, অনুসরণ ও ধ্বংস করতে ইতিমধ্যে একটি ‘ড্রোন ওয়াল’ গড়ে তোলার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ১০ সদস্য দেশ। এই সম্মেলন ইইউ-এর ২০৩০ সালের মধ্যে সম্ভাব্য রাশিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষের প্রস্তুতির অংশ। ইউরোপজুড়ে এমন সতর্কতা বাড়ছে যে, মস্কো আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আক্রমণ চালাতে পারে।
আরও পড়ুন-‘বন্দে মাতরম’-র সার্ধশতবর্ষ! দেশজুড়ে বিশেষ উদ্যোগ কেন্দ্রের, নেপথ্যে বাংলার ভোট?
ইউরোপের মূল আশঙ্কার কারণ, রাশিয়ার হাতে থাকা অত্যাধুনিক সব ড্রোন। আর তাই এবার ড্রোন-হামলা প্রতিরোধে সীমান্তে ‘ড্রোন ওয়াল’ তুলে ইউরোপকে দুর্ভেদ্য করতে চায় ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই মর্মে ইউরোপীয় দেশগুলির প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা গত শুক্রবার ব্রাসেলসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে একমত হয়েছেন, ইউরোপের আকাশপথকে সুরক্ষিত রাখতে ‘ড্রোন-ওয়াল‘ গড়ে তোলা হবে।লাটভিয়া, নরওয়ে, পোল্যান্ড, এস্তোনিয়া এবং লিথুয়ানিয়া এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করে। ‘ড্রোন ওয়াল’ আসলে এটা বহুস্তরীয় ডিফেন্স ইকো-সিস্টেম। ন্যাটো-র ইস্টার্ন ফ্ল্যাঙ্কে ইউক্রেনকে মূল সহযোগী করে, তাদের কাছ থেকে ড্রোন-যুদ্ধের অভিজ্ঞতাকে গ্রহণ করে রুশ হামলা প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়বে ইইউ। ইউরোপীয় দেশের সীমান্ত জুড়ে বসবে ডিটেকশন ও ট্র্যাকিং সিস্টেম। যেগুলি নিচু দিয়ে হঠাৎ উড়ে আসা ড্রোনের গতিবিধিকে ট্র্যাক করবে। তারপরের ধাপে জ্যামিং ও ড্রোন সিগন্যালকে রুখে দেওয়া হবে। যাতে সেগুলি যারা অপারেট করছে তাদের কাছে ড্রোনগুলির আর কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকে। তৃতীয় ধাপে মাটি থেকে গুলি ছুঁড়ে ড্রোনগুলিকে ধ্বংস করা হবে।
আরও পড়ুন-'দুবাই শেখ সেক্স পার্টনার খুঁজছে!' ফের ফাঁস ‘দিল্লি বাবা’র বিস্ফোরক হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুট বলেন, 'আমাদের আকাশ রক্ষা করতে হবে। এর জন্য আমাদের 'ড্রোন ওয়াল' প্রয়োজন।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য কোটি কোটি ডলার ব্যয় করতে পারি না। ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ড্রোনের মোকাবিলা করা যাবে না। তাই আমরা 'ড্রোন ওয়াল'র প্রভাব নিয়ে আলোচনা করছি, যার খরচও কম হবে।' অন্যদিকে, ২৭ টি দেশের ইইউ ইতিমধ্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধির জন্য ১৫০ বিলিয়ন ইউরোর ঋণ পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে, যার বেশিরভাগই পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলি গ্রহণ করেছে। মঙ্গলবার ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন বলেছেন, ‘আমাদের সীমান্তে রাশিয়ার ড্রোন অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে ইউরোপকে অবশ্যই একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে।’