১৯৪৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। ভারতে যখন এসে পৌঁছালেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন, তখন চোখের সামনে এক বিদ্রোহ-বিধ্বস্ত দেশ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে দুর্ভিক্ষ প্রবল। সাধারণ মানুষের দুর্দশা চরমে, স্বাধীনতার জন্য অহরহ আন্দোলন চলছে। এমন এক দেশে লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে পাঠিয়েছিলেন ক্লিমেন্ট অ্যাটলি। ইংল্যান্ডের রাজা ষষ্ঠ জর্জের কাছে তিনিই মাউন্টব্যাটেনের নাম সুপারিশ করেন। মাউন্টব্যাটেনের উপর একটিই নির্দেশ ছিল। ১৯৪৮ সালের ৩০ জুনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
সাধারণত যে কারণটি বলা হয়ে থাকে
হাতে সময় ছিল গোটা একটি বছর। চাইলেই শাসক ব্রিটিশরা নিজেদের আখের আরও কিছুটা গুছিয়ে নিতে পারত। কিন্তু তার বদলে ভারতে পৌঁছেই তোড়জোড় শুরু হয়ে যায় মাউন্টব্যাটেনের। জিন্নার সঙ্গে কথা বলে অখণ্ড ভারতের প্রস্তাব রাখেন তিনি। কিন্তু জিন্না মুসলিম জনগণের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তান গড়ার ব্যাপারে একরোখা। ফলে শেষমেশ মাউন্টব্যাটেন বুঝতে পারেন দেশভাগ অনিবার্য। সেই মতোই শুরু হতে থাকে পৃথক দুটো দেশের সীমানা নির্ধারণ ও তাদের ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ। লর্ড মাউন্টব্যাটেন কেন ১৫ আগস্ট বেছে নিয়েছিলেন? সাধারণত প্রত্যেকেই মনে করেন, ভারতের অবস্থা খুব শোচনীয় বলেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আদতে এর নেপথ্যে ছিল অন্য আরেকটি কারণ। এর জন্য পিছিয়ে যেতে হবে দুটো বছর।
আরও পড়ুন - ভারতের স্বাধীনতার সময় ছিল না কোনও জাতীয় সংগীত, কীভাবে কবে নির্বাচিত হল ‘জনগণমন’?
মিত্রশক্তির কমান্ডার মাউন্টব্যাটেন
১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। জাপানোর হিরোশিমাতে পরমাণু বোমা বিষ্ফোরণ ঘটাল আমেরিকা। ১৯৪৫ সালের ৯ আগস্ট। নাগাসাকিতে দ্বিতীয় পরমাণু বোমা বিষ্ফোরণ। এর ঠিক ছয় দিন পর জাপান আত্মসমর্পণ করে। দিনটি ছিল ১৪ আগস্ট। জাপানের আত্মসমর্পণের সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিত্রশক্তির কমান্ডার ছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন।
আরও পড়ুন - ব্রিটিশ আর্মির এই সৈনিকই বানান ভারতের জাতীয় পতাকা,চেনেন গান্ধীজির এই অনুগামীকে?
আসল কারণ
যুদ্ধের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে জাপানের আত্মসমর্পণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। যার মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি হয়। তাই এই দিনটিই বেছে নিয়েছিলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেন। কিন্তু ভারতের তখন ভাইসরয় বলতে ছিলেন শুধু তিনিই। মাউন্টব্যাটেন প্রথমে পাকিস্তানকে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ১৪ আগস্ট। এর পর ভারতকে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন ১৫ আগস্ট। তাই ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয় এই দিনে।