মহিলাদের মধ্যে গত কয়েক বছর ধরে যে ক্যানসার দ্রুত হারে বাড়ছে, তার মধ্যে অন্যতম স্তন ক্যানসার। স্তন বা ব্রেস্ট ক্যানসার অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় বেশ গুরুতরও বটে। কারণ এই ক্যানসারের বেশ কিছু ভ্যারিয়ান্ট (প্রকার বা ধরন) আবার ফিরে আসতে পারে। অর্থাৎ দ্বিতীয়বার হতে পারে ক্যানসার। সম্প্রতি পালিত হল বিশ্ব স্তন ক্যানসার গবেষণা দিবস। সেই উপলক্ষেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যানসারের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করলেন চিকিৎসক ধৃতিমান মৈত্র (কনসালট্যান্ট, জেনারেল সার্জারি, ফর্টিস হাসপাতাল, আনন্দপুর)।
১) ক্যানসার নিয়ে সতর্ক থাকতে রোজকার জীবনে কোন কোন জিনিস থেকে দূরে থাকা উচিত?
চিকিৎসক: আলাদা আলাদা ক্যানসারের আলাদা আলাদা ঝুঁকি হয়। যদি ব্রেস্ট ক্যানসারের কথা বলি, তাহলে বয়স ও জিন বড় কারণ। কিন্তু এগুলো কারও হাতে থাকে না। এর বাইরে যেগুলো হাতে রয়েছে, তা নিয়ে কথা বলা যাক।
ক. এই তালিকায় প্রথমেই পড়বে — সেডেন্টারি লাইফস্টাইল অর্থাৎ সারাদিন বসে বসে কাজ। যাদের রুটিন এমন, তাদের অন্তত সপ্তাহে ৩ ঘণ্টা ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করতে হবে। তাহলে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে।
খ. ধূমপানের কথা অনেকেই বলে থাকেন। কিন্তু গবেষণায় এখনও ততটা তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে ধূমপানের জন্য স্তন ক্যানসার হতে পারে, এমনটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
গ. ফাস্টফুড, রেডমিট, তৈলাক্ত খাবারের কারণেও ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটা বাড়ে।
সব ক্যানসারের কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে। এগুলি যত কম হয়, তত ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমে। ম্যামোগ্রামের মতো টেস্ট নিয়মিত করলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে। অ্যান্টিহরমোনাল ট্যাবলেটের মাধ্যমে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। যারা দুই সন্তানের মা, তারা যদি নিয়মিত শিশুকে দুধ খাওয়ান, তাহলে ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। তবে অন্যদিকে যাদের দেরিতে মেনোপজ হয়, তাদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে। যাদের অনেকটা কম বয়সে ঋতুস্রাব শুরু হয়, তাদেরও ঝুঁকি বেশি। আবার যাদের সন্তান অনেকটা বেশি বয়সে তাদের ক্ষেত্রেও ঝুঁকি দেখা যায়।
আরও পড়ুন - Health News: লোহার আলমারি চাপা পড়ে লিভার-অগ্ন্যাশয়ে বড় আঘাত, ৭ বছরের খুদের পেটে বসল স্টেন্ট
২) ব্রেস্ট ক্যানসারকে কেন্দ্র করে কোন কোন মিথ ভাঙা দরকার?
চিকিৎসক: ব্রেস্ট ক্যানসার নিয়ে বহু মিথ রয়েছে। বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জের মানুষের মধ্যে এইসব ভুল ধারণা বেশি। একে একে বলি।
ক. অনেকে বলেন, ব্রা পরলে ব্রেস্ট ক্যানসার হয়। কিন্তু তা কখনই নয়। কোনও সম্ভাবনাই নয়।
খ. স্তনে ব্যথা হলেও অনেকে মনে করেন তা ক্যানসারের লক্ষণ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্তনের ব্যথার সঙ্গে ক্যানসারের কোনও যোগ নেই।
গ. ব্রেস্ট ক্যানসার মানেই অনেকে ভাবেন স্তন কেটে বাদ দিতে হবে। তাই অনেকে রোগ গোপন করে রাখেন। যখন ডাক্তারের কাছে যান, ততক্ষণে রোগ অনেকটাই ছড়িয়ে যায়। আদতে খুব কম ক্ষেত্রেই স্তন বাদ দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। বরং রোগ ছড়িয়ে গেলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গের বিপদ বাড়ে।
৩) IVF বা এমন ধরনের ট্রিটমেন্ট থেকে কি সত্যিই সন্তান বা মায়ের শরীরে ক্যানসার (ব্রেস্ট ক্যানসার) বাসা বাঁধার ঝুঁকি থাকে? গবেষণা কী বলছে?
চিকিৎসক: আইভিএফ বা ওই ধরনের ট্রিটমেন্টের সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যানসারের কোনও সংযোগ এখনও পর্যন্ত গবেষণায় পাওয়া যায়নি। সন্তানের ক্ষেত্রে তো একেবারেই নেই। মায়ের ক্ষেত্রেও ব্রেস্ট ক্যানসারের কোনও সংযোগ রয়েছে, এমন কিছু পরিসংখ্যানে এখনও জানা যায়নি। একটা-দুটো হয়ে থাকলেও তা একেবারেই ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে আইভিএফ থেকে ওভারিয়ান টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পরে যা থেকে ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু সেই ঝুঁকিও অনেকটাই কম। বরং অনেক সময় দেখা যায়, যার সন্তান হয় না, তাঁর ওভারিয়ান ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে।
আরও পড়ুন - Kalyani University: বুধে PG-তে আবেদনের শেষ তারিখ, সোমবার বেরোল কল্যাণীর UG-র ফল, দিশেহারা পড়ুয়ারা
৪) Global Breast Cancer Initiative - এই বিষয়টি আদতে কী? এই নিয়ে ভারতীয়দের মধ্যে কতটা সচেতনতা রয়েছে?
চিকিৎসক: গ্লোবাল ব্রেস্ট ক্যানসার ইনিশিয়েটিভ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বিশেষ উদ্যোগ। এই উদ্যোগে বিভিন্ন দেশের সরকারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে সাহায্য করা হয় ব্রেস্ট ক্যানসারের জরুরি পরিকাঠামো বিভিন্ন হাসপাতালে তৈরি করতে। পাশাপাশি মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যানসার যাতে প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়ে, তার ব্যবস্থা করার জন্যও দেশগুলিকে আর্থিক সাহায্য করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ক্যানসার প্রাথমিক স্টেজে ধরা পড়লে চিকিৎসায় অনেকটাই সুবিধা হয়। স্তন বাঁচিয়ে চিকিৎসা করা যায়, কেমোও অনেক সময় লাগে না। রোগীরও মানসিক অবস্থার অবনতি হয় না এতে। তাই প্রাথমিক স্টেজে রোগটিকে নির্ণয় করা বিশেষভাবে জরুরি।
৫) ব্রেস্ট ক্যানসার যে অবসাদ আনে, সেটা কীভাবে সামাল দেওয়া যেতে পারে?
চিকিৎসক: ক্যানসার হয়েছে জেনেই অনেকে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। রোগ লুকিয়ে রাখেন। চিকিৎসা করাতে চান না। শেষে যখন প্রকাশ করেন, তখন দেখা যায়, রোগ অনেকটাই ছড়িয়ে গিয়েছে শরীরের ভিতর। ক্যানসারের চিকিৎসার পর অনেকে অবসাদে ভোগেন। মূলত শরীরের কোনও অঙ্গ বাদ গেলে বা শরীরের উপর অনেকটা ধকল গেলে এই পরিস্থিতি দেখা যায়। এই সময় বাড়ির লোকেদের সদর্থক ভূমিকা থাকা দরকার। তাঁদের সঙ্গটা খুব জরুরি। বর্তমানে ব্রেস্ট ক্যানসার সারভাইভারদের বিভিন্ন গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে রোগী সময় কাটালে অনেকটাই ভালো থাকবে। অন্যদিকে ক্যানসার কাউন্সিলররা তো রয়েছেনই। তারা এই সময় যথেষ্ট মেন্টাল সাপোর্ট দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে রোগী তাঁদের কাছে নিয়মিত যেতে পারেন।