অনেকেই বাড়িতে রঙিন বোলে মাছ পুষতে চান। কিন্তু জায়গা ও সময়ের অভাব। তাই বড় অ্যাকোয়ারিয়ামের বদলে কাঁচের বোল কেনেন অনেকেই।
কিন্তু বোলে আদৌ মাছ ভালো থাকে?
না। হয় তো আপাতভাবে টেবিলের উপর বোলে রঙিন মাছ দেখতে ভালো লাগছে। কিন্তু কোনও রঙিন মাছই ভালো থাকে না। বিশেষত অনেকেই বোলে গোল্ডফিশ, অ্যাঞ্জেলের মতো মাছ রাখেন। এই মাছগুলির জন্য অনেক বেশি জল প্রয়োজন। বোলের সামান্য জলে মাছ কখনই ভাল থাকে না। এমনকি অল্প জলে থাকে বলে দাবি করে যে ফাইটার মাছ বিক্রি করা হয়, সেগুলিও বোলে ভাল থাকে না।
যে কোনও প্রাণীরই বৃদ্ধি ও ভালো থাকার জন্য নূন্যতম চলাফেরার স্থানটুকু প্রয়োজন। বোল বা ছোট অ্যাকুয়ারিয়ামে সেটা কখনই সম্ভব নয়। ফিল্টার, হিটার দেওয়াও সম্ভব হয় না। ছোট জায়গায় মাছদের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায় এবং রঙিন পাথর এবং প্লাস্টিকের গাছগুলি থেকে বিষাক্ত কেমিক্যাল নিঃসৃত হয়। এটি মাছের শরীরে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
গুগলে 'Freshwater fish care' সার্চ করলেই এ বিষয়ে জানতে পারবেন।
তাহলে সঠিক পদ্ধতিটি কি?
অন্তত ২ ফুট বাই ১ ফুট সাইজের অ্যাকোয়ারিয়াম দিয়ে শুরু করুন। এই সাইজে মাছের অনেক অপশন পাবেন। মেনটেন করাও সহজ। জায়গাও কম লাগে।

'অনেক জল অনেক মাছ রাখা যাবে,' এই ভাবনা থেকে দূরে চলে আসুন। যত সম্ভব কম মাছ রাখুন। এতে অ্যাকোয়ারিয়াম নোংরাও কম হবে। মাছের মৃত্যুর সম্ভাবনাও কমবে।
টিভি বা সাউন্ড সিস্টেমের ঠিক সামনে বা পাশে অ্যাকোয়ারিয়াম রাখবেন না।
সাজানো:
প্রকৃতিতে কোথাও সাধারণত উজ্জ্বল লাল নীল হলুদ সবুজ বেগুনি পাথর থাকে না। প্রকৃতিতে থাকে মাটি কিংবা বালি বা ছোট ছোট নুড়ি পাথর। সাজানোর জন্য পরিষ্কার, বড় দানার কনস্ট্রাকশনের বালি ব্যবহার করতে পারেন। দোকান থেকেও অ্যাকোরিয়ামের বালি, ছোট নুড়ি কিনতে পারেন। তলায় সাবস্ট্রেট হিসাবে বড় নুড়ির থেকে ছোটই বেশি ভাল। বড় পাথর সাজানোর জন্য ব্যবহার করা যায়।
সাজানোর জন্য শুকনো কাঠ বা ড্রিফট উড ব্যবহার করতে পারেন। এগুলি অ্যাকোয়ারিয়ামের দোকানেই পাবেন। নয় তো কোনও আঠাহীন গাছের ডাল জোগাড় করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, সেটি সম্পূর্ণ শুকনো করতে হবে রোদে রেখে। এরপর গায়ের ছাল তুলে নিতে হবে।

এছাড়া নারকেলের মালা, ভাঁড়, ভাঙা টব ইত্যাদিও ব্যবহার করা যায়।
জলজ উদ্ভিদ:
সম্ভব হলে দোকান থেকে কেনা জ্যান্ত গাছ ব্যবহার করুন। কিছু সহজ গাছ হল আমাজন সোর্ড, রেড আমাজন (ক্রিপ্ট), ভ্যালিসনেরিয়া, হাইগ্রোফিলা ডিফর্মিস, কাবোম্বা ইত্যাদি। গাছগুলির নাম গুগলে ইমেজে সার্চ করে চিনে নেবেন। তারপরেই কিনবেন। পুকুর থেকে ছোট পানা তুলে এনেও দিতে পারেন।
গাছের বৃদ্ধির জন্য আলো প্রয়োজন। আন্ডারওয়াটার আলো, লাল-নীল আলো থেকে দূরে থাকুন। এতে মাছের স্ট্রেস বাড়ে। গাছও হয় না।
২ ফুট বাই ১ ফুট অ্যাকোয়ারিয়ামের জন্য ২ ফুটের LED ব্যাটন (টিউব) সবচেয়ে ভাল। এতে উপরে উল্লেখিত গাছগুলিও বাড়বে। রোজ ৭-৮ ঘণ্টা জ্বালানো প্রয়োজন।
জল তৈরি :
নতুন অ্যাকোয়ারিয়ামের জল ভরেই মাছ ছাড়বেন না। জল কিভাবে সিজন করতে হয়, সেটাও 'ফিশট্যাঙ্ক সাইকেল' বলে গুগল করলেই পাওয়া যাবে।
নতুন অ্যাকোয়ারিয়ামে জল ভরার অন্তত ৩০ দিন পর মাছ ছাড়ুন। অল্প সংখ্যায়।
বিভিন্ন মাছ বিক্রেতা সাধারণত মিথিলিন ব্লু জাতীয় ওষুধ দিতে বলেন জলে। এটি অপ্রয়োজনীয় তো বটেই, বরং ক্ষতিকর। কোনও ওষুধ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এতে হিতে বিপরীত হবে।
মাছ কেনা :
মাছ কেনার আগে ইন্টারনেটে ভালো করে দেখে নিন সেই মাছটি অন্য কোন কোন মাছের সাথে থাকতে পারে, কি ধরনের জলে এবং পরিবেশে থাকে, এবং সবচেয়ে বড় অবস্থায় কত সাইজ হয়। এর থেকে জানতে পারবেন যে মাছটির ঠিক কত পরিমাণ জল লাগে ভালো ভাবে থাকতে। গাছ রাখলে কোন মাছ গাছের ক্ষতি করবে না সে বিষয়ে জেনে নিয়ে তবেই কিনবেন।

তবে চেষ্টা করবেন পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ৩-৪ ইঞ্চির বেশি হয় এমন মাছ না কেনার। দোকানে যেগুলি বিক্রি হয় সবই জুভেনাইল মাছ। বাড়িতে আনার পর তা বেড়ে গেলে পরে সমস্যা হয়।
আর অন্তত ৩-৪ ফুটের অ্যাকোয়ারিয়াম না হলে গোল্ডফিশ, শার্ক, অস্কার, ডিসকাস নৈব নৈব চ। এর বদলে অনেক ছোট মাছের অপশন পাবেন মাছের দোকানে। যেমন ফ্যান্সি গাপ্পি, মলি, বিভিন্ন জাতের টেট্রা (একই জাতের অন্তত ৮টি রাখতে হয়), প্ল্যাটি, ডোয়ার্ফ গৌরামি ইত্যাদি।
ফাইটার কিনলে অন্তত ১ ফুট বাই ১ ফুট কিউবে সম্পূর্ণ একা রাখুন।
ফিল্টার :
২ ফুট বাই ১ ফুটের জন্য ছোট পাওয়ার ফিল্টার, হ্যাং অন ফিল্টার নিতে পারেন। এগুলি থাকলে আর এয়ার পাম্প কেনার প্রয়োজন নেই। পাম্প ২৪ ঘণ্টা চালিয়ে রাখতে হবে। দিনে ১২ ঘণ্টা অন্তর ৩০ মিনিট বন্ধ রাখতে পারেন সর্বোচ্চ।
হিটার :
শীতকালে থার্মোস্ট্যাট দেওয়া হিটার লাগাতে হবে। হিটার কেনার সময়ে একটু দামি ও ভালো মানের নেবেন। সস্তার হিটার বেশিদিন টেকে না।
খাবার :
ছোট মাছ পরিমাণে খুবই কম খায়। তাই অতিরিক্ত খাবার দেবেন না। আর একটু দামি খাবারই কিনুন। এতে সত্যিই পার্থক্য হয়।
অনেকে অ্যাকোয়ারিয়ামের দোকান থেকে কেঁচো কিনে এনে খাওয়ান। তাতে মাছের বৃদ্ধি অনেক ভালো হয়। তবে অনেকের সেই সময় থাকে না। সেক্ষেত্রে ফ্রিজ-ড্রাইড ওয়ার্ম খাওয়ানো যেতে পারে।
রক্ষণাবেক্ষণ :
সর্বোপরি, খালি গৃহসজ্জার উদ্দেশ্যে মাছ পুষবেন না। অ্যাকোয়ারিয়াম করা কঠিন নয়। কিন্তু একটু হলেও যত্ন ও সময় দিতে হয়।
জল পাল্টাতে সব ঢেলে মাছ বের করে দক্ষযজ্ঞের প্রয়োজন নেই। মাছ থাকা অবস্থাতেই প্রথমে নরম স্পঞ্জ দিয়ে ভিতরের কাঁচে শ্যাওলার আস্তরণ মুছে দিন। এরপর ডেকরেশনগুলিও একইভাবে আলতো করে মুছে নিন স্পঞ্জ বা পুরনো ব্রাশ দিয়ে। এরপর অর্ধেক জল ফেলুন পাইপে সাইফন করে। মগে করেও করতে পারেন(বাগানে গাছে দিতে পারেন এই জল)। ফের নতুন জল ভরে দিন।
প্রথম ১ মাস সপ্তাহে ১ বার করে এটি করুন। তারপর থেকে ২-৩ সপ্তাহ অন্তর একবার এটি করলেই যথেষ্ট।
ফিল্টারের স্পঞ্জও অ্যাকোয়ারিয়ামেরই জল ভরা বালতিতে অল্প নিংড়ে নিন। সাবান বা কিছু দিয়ে একদমই সাফ করতে যাবেন না। ফিল্টার বেশি পরিষ্কার করবেন না।