ভূপেন হাজারিকার পর তিনি অসমের সবচেয়ে বড় সঙ্গীত আইকন। জুবিন গর্গের অকাল মৃত্যুর ধাক্কা এখনও সামলে ওঠতে পারেনি অসম। রবিবার সকালে শেষবারের মতো অসমের মাটি ছুঁলেন জুবিন। অভিশপ্ত সফর শেষে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরল তাঁর কফিনবন্দী দেহ। এয়ারপোর্টে এদিন স্বামীর মরদেহ আগলে কান্নায় ভেঙে পড়েন গরিমা।
জুবিনের সুখ-দুঃখের সাথী গরিমা। মাঝপথে এভাবে গরিমাকে একা ফেলে চলে যাবেন জুবিন, তা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। এদিন জুবিনের কফিনের উপর গোমোছা রেখে হাহাকার করে কাঁদতে দেখা গেল গরিমাকে।
অসমিয় শিল্প-সংস্কৃতির আইকন জুবিন গর্গকে শেষবারের মতো দেখতে গুয়াহাটির রাস্তায় মানুষের বন্যা। লোকপ্রিয় গোপীনাথ বরদলোই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র পর্যন্ত চারিদিকে শোক, ভালোবাসা উপচে পড়ছে, একটাই উদ্দেশ্য ছিল তাদের প্রিয় ছেলেকে বিদায় জানানো। ফুল হাতে থাকা ছোট স্কুলের বাচ্চারা থেকে শুরু করে অশ্রু ভরা চোখের প্রবীণরা পর্যন্ত, কিংবদন্তি শিল্পীর অন্তিম যাত্রায় কার্যত স্তব্ধ গুয়াহাটি। লোকেরা বাড়ির ছাদে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিল, কেউ জানালা দিয়ে ঝুলছিল এবং প্রতিটি মোড়ে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল, জুবিনের নাম জপ করছিল এবং সেই গানগুলি বাজছিল যা একসময় তাঁদের জীবনে আনন্দ, সান্ত্বনা এবং গর্ব নিয়ে এসেছিল।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী ভিড়ের ছবি শেয়ার করেছেন তার এক্স অ্যাকাউন্টে (পূর্বে টুইটার নামে পরিচিত)। অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার লোকের রাস্তায় ভিড় করার ছবি শেয়ার করেছেন তিনি। হিমন্ত আরও লেখেন, ‘মানবতার সমুদ্র, তাঁদের প্রিয় ছেলেকে বিদায় জানাতে একজোট হয়েছে অসম। তিনি একজন রাজার মতো জীবনযাপন করেছিলেন, তাঁকে রাজার মতোই শ্রদ্ধার্ঘ্য জ্ঞাপন করে স্বর্গে পাঠানো হচ্ছে’।
অসমের রত্ন হিসাবে পরিচিত, জুবিন কেবল একজন গায়কের চেয়েও বেশি ছিলেন - তিনি ছিলেন এমন একটি সাংস্কৃতিক সেতু যিনি তাঁর সংগীতের মাধ্যমে সম্প্রদায় এবং প্রজন্মকে একত্রিত করেছিলেন। এক ভক্তের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে লেখা হয়েছে, ‘অসমের রত্ন, লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়স্পন্দন, সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রদূত জুবিন… যিনি সম্প্রদায় এবং প্রজন্মের সেতুবন্ধন করেছিলেন, আর নেই।’ আরেকজন লেখেন, ‘তাঁর হাসি, তাঁর সঙ্গীত এবং তাঁর উত্তরাধিকার চিরন্তন থাকবে, এমন একটি আলো যা আগামী প্রজন্মকে পথ দেখাবে এবং অনুপ্রাণিত করবে। ওম শান্তি’।
জুবিন গর্গ গত ১৯শে সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে একটি স্কুবা ডাইভিং দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মারা যান। তিনি নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া উৎসবে অংশ নিতে সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন, যেখানে ২০ সেপ্টেম্বর পারফর্ম করার কথা ছিল তাঁর। একজন প্রসিদ্ধ এবং প্রিয় শিল্পী, জুবিন একাধিক ভাষায় নিজের গায়েকীর ছাপ রেখে গেছেন, অসমীয়া, হিন্দি এবং বাংলা ভাষায় আইকনিক গান পরিবেশন করেছেন। তাঁর সবচেয়ে স্মরণীয় হিন্দি গান গ্যাংস্টারের চার্ট-টপিং হিট ইয়া আলি, যা সারা দেশের সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে আজও সমান জনপ্রিয়।
রবিবার,সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অর্জুন ভোগেশ্বর বরুয়া স্পোর্টস কমপ্লেক্সে (সরুসাজাই স্টেডিয়াম) শায়িত থাকবে জুবিনের নিথর দেহ। শেষকৃত্য নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পরিবার, জানিয়েছে রাজ্য সরকার।