সিরিজ হোক বা মেগা কিংবা ছবি সর্বত্রই তাঁর অবাধ বিচরণ। গ্রামের দুরন্ত মেয়ে হোক, কিংবা স্নেহময়ী মা বা একেবারে সাদামাটা গৃহবধূ, যে কোনও ভূমিকাতেই তিনি লড়ে যান। নানা কাজ নিয়ে ভারী ব্যস্ততায় নায়িকার সময় কাটে। তারপর আবার ২০ জুন, হইচইয়ের পর্দায় মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর নতুন সিরিজ 'বাতাসে গুনগুন', তাই কাজের চাপ এখন অনেকটাই। এর মাঝেই হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা মানালি দে-র সঙ্গে যোগাযোগ করলে, এত ব্যস্ততার মধ্যেও নায়িকা তাঁর নতুন সিরিজ থেকে কাজ, ব্যক্তিগত ভাবনা সবটা নিয়ে খোলামেলা আড্ডায় ধরা দিলেন।
আগে অনেকবারই হয়েছে ত্রিকোণ প্রেমের গল্প, তবে এবার সেখানে আপনি, কিন্তু এছাড়া দর্শকরা আর কী কী নতুন পেতে চলেছেন?
মানালী: হ্যাঁ, ত্রিকোণ প্রেম নিয়ে এর আগেও প্রচুর কাজ হয়েছে, কিন্তু এটার ফ্লেভারটা ভীষণ আলাদা। সেটা ২০ তারিখ থেকে হইচইয়ের পর্দায় সিরিজটা এসে গেলে দর্শকরা দেখে আরও ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন। সবাই সবার কাজ আলাদাই বলে। কিন্তু এটা সত্যি আলাদা। কারণ এখানে যে প্রেম আছে, যে নীরাপত্তাহীনতা আছে সেটা এই সিরিজে যে ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেটা ভীষণ অন্যরকম। এখানে যেমন একটা প্যাশনেট লাভ আছে, তেমনই একটা ডার্ক রোম্যান্সও রয়েছে। তাই পুরো বিষয়টাই সব মিলিয়ে আলাদা।
আর 'মিথিলা'(সিরিজে মানালীর চরিত্রের নাম), সে কেমন?
মানালী: আমার চরিত্রটাকে ট্রেলারে বা টিজারে খুব বেশি ভাঙা হয়নি। তা অবশ্য গল্পের খাতিরেই। তবে এক্ষেত্রে আমি এই টুকু বলতে পারি যে, এই চরিত্রটার একটা অদ্ভুত গভীরতা রয়েছে। সেটা সিরিজটা দেখলে আরও ভালো ভাবে বোঝা যাবে। ট্রেলারে 'পল্লবী'র চরিত্রের ওঠা-পড়াগুলোর অনেটা স্পষ্ট, কিন্তু 'মিথিলা' তো অরিন্দম'-এর স্ত্রী। ফলে সে কীভাবে রি-অ্যাক্ট করছে, তার গল্পটা ঠিক কেমন সেটা সিরিজেই দর্শকরা ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন। তবে এটুকু বলতে পারি 'মিথিলা'কে দেখে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, চরিত্রটা কিন্তু পুরোটা সেরকম নয়। নিজের ভালোবাসার জন্য সেও কিন্তু অনেকটা পথই হাঁটতে পারে, তা দেখার একটা বিষয় রয়েছে।
ট্রেলারে 'মিথিলা'কে বলতে শোনা গিয়েছে, 'পুরুষ মানুষরা কষ্ট দেয়, আর আমরা মেয়েমানুষেরা সেটাকে গয়না মনে করি...', এই সংলাপটা বাস্তব জীবনেও কি বিশ্বাস করেন?
মানালী: না, আমি তা বিশ্বাস করি না। তবে কী জানেন তো, আমাদের সমাজে এখনও এমন অনেক মেয়ে আছেন, যাঁরা এটা বিশ্বাস করেন। কারণ আমি অনেককে দেখেছি। আসলে আমাদের আশপাশটা দিয়ে তো, সবটা বিচার করলে হয় না। এরকম অনেকেই বলতে দেখেছি যে, 'ভালোবাসে বলেই তো আমাকে আজেবাজে কথা বলে' বা 'ভালোবাসে বলেই তো গায়ে হাত তোলে'। অনেক মহিলাকে তাঁর স্বামী যন্ত্রণা দিলে তাঁরা ভাবেন যে, 'আমাকেই তো বলছে, আর কাকে বলবে'। কিন্তু আমি নিজে অবশ্যই এভাবে ভাবি না কখনও।
তাহলে প্রতিবাদটা দরকার?
মানালী: অবশ্যই
আর 'তৃতীয় ব্যক্তি', গল্পে তো এর প্রভাব বিরাট...
মানালী: হ্যাঁ, গল্পে একটা বড় প্রভাব রয়েছে।
হ্যাঁ, তবে বাস্তবেও তো তৃতীয় ব্যক্তির প্রভাবে বহু সম্পর্ক ভাঙতে দেখা যায়, এখন বোধ হয় একটু বেশি, এই বিষয়টা আপনি কীভাবে দেখেন?
মানালী: আমার জায়গা থেকে বলতে পারি, সম্পর্কে যদি তৃতীয় ব্যক্তি আসে তাহলে সবার প্রথমে আমি বোঝার চেষ্টা করব তৃতীয় ব্যক্তি কেন এসেছে। আর শুধু কী সেই তৃতীয় ব্যক্তির দিক থেকেই আমার পার্টনারের প্রতি কোনও অনুভূতি রয়েছে? আমার পার্টনারের কি তাঁর প্রতি কোনও ফিলিংস নেই? তাহলে তো অবশ্যই আমি আমার সঙ্গীর পাশে থাকব। পুরো বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করব। আর যদি দেখি আমার পার্টনারের দিক থেকেও ওই মানুষটার প্রতি কোনও টান থেকে থাকে, তাহলে আমি সরে আসব। আমি বিশ্বাস করি, জীবনে জোর করে কিছু পাওয়া যায় না। তাই আমি এর মধ্যে আর নিজেকে জড়িয়ে রাখব না।
কিন্তু একটা সম্পর্কে থেকে কি আর একজনের প্রেমে পড়া যায়? যদিও ট্রেলারে দেখা গিয়েছে 'অরিন্দম'-এরও 'পল্লবী'র প্রতি একটা টান রয়েছে...
মানালী: ট্রেলার দেখে 'অরিন্দম'-এর পরিস্থিতিটা পুরোটা বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু বাস্তবে আমি বিশ্বাস করি যে যখনই কোনও সম্পর্কে ফাঁক থাকে, তখনই একজন তৃতীয় ব্যক্তি সেই জায়গায় ঢুকতে পারে। যদি দু'জনের সম্পর্ক খুব ভালো হয়, যদি দুটো মানুষের ভালো বন্ধুত্ব থাকে তাহলে অন্য মানুষের আসাটা খুব একটা সহজ নয়।
আর কাজ, আপনাকে তো সিরিজ, ছবি, মেগা সব মাধ্যমেই দেখা যায়, একসঙ্গে কীভাবে ব্যালেন্স করেন?
মানালী: আমি এত কিছু বুঝি না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি যে আমার উপর অনেক আশীর্বাদ রয়েছে। আর তাই মনে হয় আমি প্রতিনিয়ত ক্যামেরার সামনে কাজ করতে পারি। আমার কাছে তিনটে মাধ্যমই সমান। আমি তিনটে ক্ষেত্রেই যখন ভালো কোনও কাজের সুযোগ পাই, তখন সেটা মন দিয়ে করার চেষ্টা করি। কখনও এটা ভাবিনি যে টেলেভিশন বলে আমি কম মন দেব, আর সিনেমা বা ওটিটি বলে বেশি গুরুত্ব দেব। আর যদি আমার মেগা আর ছবির কাজ একসঙ্গে চলে, তখন আমি অবশ্যই আমার প্রযোজক ও পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলি। ওঁরা পুরো বিষয়টা ব্যালেন্স করে দেন বলেই আমি কাজগুলো করতে পারি। না হলে একটা মেগা করতে করতে সিরিজ বা ছবি করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
আপনাকে কিছুদিন আগে পর্যন্ত 'দুগ্গামণি ও বাঘমামা' মেগায় দেখা যাচ্ছিল, সেই সময়ই কি 'বাতাসে গুনগুন'-এর শ্যুটিং হয়েছে?
মানালী: না না, এই সিরিজের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মেগার কাজ শুরু হয়। যদিও মেগাও খুব দীর্ঘদিন চলেনি। কিন্তু মেগায় কাজ শুরুর আগে 'বাতাসে গুনগুন'-এর শ্যুটিং হয়েছে।
মেগাতে দর্শকরা খুব বেশি দিন আপনাকে পেলেন না, এরপর আবার কবে আপনার দেখা মিলবে ছোট পর্দায়?
মানালী: এই মুহূর্তে আমার আরও কিছু কাজের কথা দেওয়া আছে সেগুলো আগে শেষ করি। তাই এই মুহূর্তেই এটা নিয়ে কিছু ভাবছি না। তবে যখন যে রকম কাজের অফার আসবে সেই অনুযায়ী সকলে জানতে পারবেন।
তবে মেগা বা সিরিজের ক্ষেত্রে আপনাকে নায়িকার ভূমিকায় বার বার নজর কাড়তে দেখা গেলেও, ছবির ক্ষেত্রে তা বেশ কম...
মানালী: আমি এখন এগুলো নিয়ে খুব বেশি ভাবি না। কারণ নন্দিতাদি(নন্দিতা রায়) ও শিবুদা(শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) আমাকে 'গোত্র'-তে নায়িকার ভূমিকায় রেখেছিলেন। তাছাড়াও 'অচিন পাখি'-তেও নায়িকা হিসেবে কাজ করেছি। তবে এগুলো প্রযোজক ও পরিচালকদের উপর নির্ভর করে। তাঁরা যদি মনে করেন যে, আমাকে কোনও কাজে নায়িকা হিসেবে মানাবে তাহলে নেবেন, না হলে নেবেন না। এটা নিয়ে আমার সত্যি কিছু বলার নেই।
তবে আগে হয়তো আমি একটু হলেও এটা নিয়ে ভাবতাম। যে কেন এটা হচ্ছে? কেন এটা হচ্ছে না? তবে এখন আমার কাছে নায়িকা হওয়ার থেকে ভালো অভিনয় করা, ভালো অভিনেত্রী হিসেবে নিজের জায়গা তৈরি করে নেওয়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি সেই ভাবেই এখন চলি। কিন্তু সকলের জীবনেই তো ইচ্ছে থাকে। তবে আমার মনে হয় যে, যে কোনও চরিত্র করি না কেন সেটা যেন দর্শকদের মনে থেকে যায় সেটাই আসল। যদি কোনও ছবিতে আমার তিনটি দৃশ্যও থাকে, তাতেও আমার কোনও সমস্যা নেই, যদি সেই চরিত্র পাওয়ার ফুল হয়।