ছোটপর্দার বড়ো নাম শোলাঙ্কি রায়। ইচ্ছেনদীর মেঘলা হিসাবে আজও বাঙালির মনের মণিকোঠায় পাকা জায়গা করে রেখেছেন শোলাঙ্কি। যাদবপুরের এই কৃতি ছাত্রী পড়াশোনা করেছেন পলিটিক্যাল সায়েন্স এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে। তবে অভিনয়কেই পেশা হিসাবে বেছে নেন। কেরিয়ারের মধ্যগগণে নিজের শর্তে বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। স্বামী নিউজিল্যান্ডে থাকার দরুণ এখন অনেকটা সময় বিদেশেই কাটান। ছোটোপর্দা থেকে বিরতি নিলেও ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে চলেছেন সমান তালে। 'ধানবাদ ব্লুজ', 'পাপ' এর পর সোলাঙ্কির তিন নম্বর ওয়েব সিরিজ 'মন্টু পাইলট'। কেরিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং চরিত্র নিয়ে HT Bangla-র সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় শোলাঙ্কি রায়।
এখন শুধুই ওয়েব সিরিজের মন দিয়েছো,কারণটা জানতে পারি?
ভালো ভালো ওয়েব সিরিজের অফার আসছে সেটাই প্রধান কারণ। এছাড়া এই মুহুর্তে আমার পক্ষে টেলিভিশনে কাজ করা সম্ভব নয়। টেলিভিশনে লম্বা একটা সময় দিতে হয়। আর আমি এই মুহুর্তে আমার পক্ষে সেই কমিটমেন্টটা করা সম্ভব নয়। আমি কিছু সময় নিউজিল্যান্ডে থাকি(স্বামীর সঙ্গে) আর বাকি সময়টা এখানে কাজের মাঝে।
ওয়েব সিরিজ কি তোমার কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ?
একদম, ওয়েব সিরিজ করতে ভালো লাগছে। নতুন চ্যালেঞ্জ। ওয়েব সিরিজে পরপর অনেকগুলো চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেক অভিনেতারই তো সেটা ভালো লাগে। এখানে একঘেঁয়েমির কোনও জায়গা নেই।

মন্টু পাইলটের ভ্রমর চরিত্রটা কি তোমার কেরিয়ারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ?
আজ পর্যন্ত আমি যতগুলো চরিত্রে অভিনয় করেছি। নিঃসন্দেহে এটা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। আমি এই ধরণের কাজ আগে করি নি। প্রায় পাঁচ ছ'খানা অ্যাবিউসের দৃশ্য রয়েছে, সেগুলো প্রচন্ড ভায়োলেন্ট। সবটা মিলিয়ে নিজের মনেই অনেক প্রশ্নচিহ্ন ছিল, তবে কাজটা করতে গিয়ে সেগুলো কেটে গেছে।

গোটা দেশে এখন মেয়েরা প্রতিদিন যে পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে সেটা কতখানি এই সিরিজে উঠে এসেছে?
দেখো, সিনেমা-নাটক, যে কোনও শিল্পই তো আসলে বাস্তবের প্রতিফলন। এখন যা সিচুয়েশন গোটা দেশে, বিশেষত মহিলাদের প্রতি যে সব ঘটনা ঘটে চলেছে -তার খুব একটা বাস্তব চিত্র মন্টু পাইলটে দেখা যাবে।দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা,নাটক,গান, কবিতা এমনকি মানুষের মনেও মহিলাদের ওয়েজটিফাই করার যে প্রবণতা তৈরি হয়ে এসেছে, সেটা থেকেই তো অ্যাবিউসের সূচনা হয়। সেটার একটা খুব সংবেদনশীলভাবে মন্টু পাইলটে পরিস্ফুট হয়েছে।
মেয়েদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইটা কেমন হওয়া উচিত বলে তুমি মনে করো?
মন্টু পাইলটে শেষমেষ কি হয় সেটা বলব না, তাহলে তো যারা এখন সিরিজটা দেখে নি, তাদের ইন্টারেস্ট থাকবে না। তবে বাস্তব জীবনের ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আইন করে অপরাধ কমানো যায় না। ওটা মানুষের মনে(অপরাধের মানসিকতা)। মানসিকতা না পাল্টালে সমাজে বদল আনা সম্ভব নয়। মেয়েদের পাশাপাশি আমাদের বাড়ির ছেলেদেরও সঠিক শিক্ষা দিতে হবে।ছোটো থেকেই তাদের মেয়েদের সম্মান করতে শেখাতে হবে। তবেই আমাদের দেশ বদলাবে, সমাজ বদলাবেআগামী দিনে আমরা কি সিনেমার পর্দায় শোলাঙ্কিকে দেখবো?
হয়ত শিগগিরই! কথাবার্তা চলছে-তবে এখনও কোনও পছন্দের চরিত্র পায় নি। সিনেমায় তো সবাই কাজ করতে চায়,আমিও চাই। দেখা যাক কতদূর কি হয়!
সবশেষে, মন্টু পাইলট দর্শকরা কেন দেখবে?
আমার মনে হয় মন্টু পাইলটের প্রেক্ষাপট নীলকুঠি পতিতালয় হলেও 'মন্টু পাইলট' আসলে মানুষের অনুভূতির গল্প বলে। মানুষের স্বপ্নের গল্প বলে, স্বপ্নভঙ্গের গল্প বলে- স্বপ্ন ভাঙার কষ্টটা তো সবার এক,হয়ত তার বহিঃপ্রকাশটা আলাদা হতে পারে। এই ইমোশনগুলোর মধ্যে দর্শক নিজেকে খুঁজে পাবে। এটা একটা জার্নির গল্প। অনেকগুলো মানুষের ওঠাপড়ার গল্প বলবে মন্টু পাইলট। আশা করছি দর্শকের মন্টু পাইলট ভালো লাগবে।
১৩ ডিসেম্বর থেকে বাংলা ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্ম হইচইতে স্ট্রিমিং শুরু হয়েছে মন্টু পাইলটের।