
Betvisa
6.88% Weekly Cashback on 2025 IPL Sports
(মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে মিডিয়া সায়েন্সের অধ্যাপক)
ভারতীয় সিনেমার জনক তথা ভারতের প্রথম ফিল্মনির্মাতা দাদাসাহেব ফালকে না হীরালাল সেন, তা নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে। হীরালাল সেনের তৈরি কোনও এখনও পর্যন্ত সিনেমা পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও ভারতের প্রথম ফিচার ফিল্ম নির্মাণের নেপথ্যে দাদাসাহেবের ফালকের গুরুত্ব কিন্তু অস্বীকার করা যায় না। ১৯১৩ সালে প্রথম ছবি ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ বানানোর বেশ কিছু দিন আগে থেকেই তিনি ফিল্ম নির্মাণ হাতেকলমে শেখা শুরু করে দিয়েছিলেন। তার এই গোটা প্রয়াসের সঙ্গে ভারতের স্বদেশি আন্দোলনের একটা নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। ফালকে নিজেও স্বদেশি ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর ছবির মধ্যে ভারতীয় মিথোলজি বা পুরাণের ব্যবহার সেই ধারণার একটা প্রতিফলন বলা চলে।
আরও পড়ুন - Pahalgam Terror Attack: ‘মোদী কা আদমি?’ শুনেই গুলি! বাবার জন্মদিনের প্ল্যানিং বাকি রয়ে গেল মেয়ের
ভারতীয় আইকনোগ্রাফির নিরিখে ফালকে অনেকটাই যুগোপযুগী দৃষ্টান্ত তৈরি করে গিয়েছেন। ফালকের ছবি বানানোর উৎসাহ অনেকটাই এসেছিল বিদেশি সিনেমা দেখে। শোনা যায়, ‘রাজা হরিশচন্দ্র’ তৈরির আগে তিনি যিশুকে নিয়ে তৈরি একটি সিনেমা দেখেছিলেন। ওই ছবিটি দেখে তার মনে হয়েছিল ভারতীয় ছবিতেও এভাবে দেবদেবীকে দেখানো যায়। বিভিন্ন চরিত্রের যে চিত্রায়ন বা আইকনোগ্রাফি আমরা দাদাসাহেব ফালকের সিনেমায় পাই, সেটি তিনি পেয়েছিলেন রাজা রবিবর্মার কাছ থেকে। ক্যালেন্ডার আর্টের অন্যতম পথিকৃৎ রবিবর্মাকে একভাবে ফালকের গুরু বলা চলে। রবিবর্মার সঙ্গে কাজ করতে করতেই ভারতীয় চরিত্রগুলি কেমন দেখতে হবে, সেই ধারণা পেয়েছিলেন দাদাসাহেব ফালকে। শুধু মিথোলজিকাল ফিগার বলে নয়, সেই সময় যারা জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে উঠছেন, যেমন ভারতমাতা, শিবাজী, তাঁরাও গুরুত্ব পেয়েছেন ফালকের সিনেমায়। আবার, ফালকে একাধারে ভালো টেকনিশিয়ানও ছিলেন। কীভাবে ফিল্ম করতে হয়, সিনেমার নানা প্রযুক্তিগত দিক নিয়ে তার ছোট ছোট শর্টস রয়েছে। এগুলো এখনও ফিল্মের ছাত্রদের কাছে শিখনের উপকরণ। এই যে বিজ্ঞানের প্রতি টান আবার ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রতি টান, একটা প্লুরাল নলেজের সমাহার, ফালকের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি খুব গুরুত্ববহ ছিল।
আরও পড়ুন - Pahalgam Terror Attack: কাশ্মীর যাওয়ার সখ ছিল বহু দিনের, ভূস্বর্গে রক্ত দিয়েই চিরনিদ্রায় কলকাতার বিতান
আজকের দিনে যখন অহরহ চারপাশে ‘জাতীয়তাবাদী’ হুঙ্কার দেখা যাচ্ছে, তখন দাদাসাহেব ফালকের সিনেমা জাতীয়তাবাদের আসল সংজ্ঞা ও চরিত্রটি বুঝতে সাহায্য করে। তাঁর সিনেমায় কখনও জাতীয়তাবাদের নামে হিংসা, দ্বেষ প্রধান হয়ে ওঠেনি। বরং তিনি দেখিয়ে গিয়েছেন, কীভাবে ভিন্ন ভাবনা, ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে উপকরণ আহরণ করে সিনেমায় ব্যবহার করতে হয়। কীভাবে সিনেমার মধ্যে দিয়ে নিজের দেশ ও জাতীয় অস্তিত্বকে চিনতে হয়। নিজেকে চেনার এই বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও ফালকের সিনেমায় এই চেনার প্রচেষ্টাকে অস্বীকার করা যায় না।
আসলে সেই সময় জাতীয়তাবাদের ধারণাটাই এভাবে গড়ে উঠেছিল। তখনকার জাতীয়তাবোধ অর্থাৎ স্বাধীনতার আগেকার ওই সময় জাতীয়তাবাদের নামে হিংসা, বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেওয়ার নজির ছিল না বললেই চলে। আমার মনে হয়, একটু লক্ষ করলে সেই সময় খুব কম পরিচালকই পাওয়া যাবে, যাদের সিনেমায় জাতীয়তাবাদের নামে যুদ্ধ, হিংসা ইত্যাদি দেখানো হচ্ছে। ফলত আজকের সঙ্গে এই ছবিটা আলাদা। জাতীয়তাবাদের নামে আজকাল যে সিনেমায় ঘন ঘন অন্যদের দমন পীড়নের দৃশ্য দেখানো হয়, এমনটা তখন ছিল না। তখনকার দিনে দেশ পরাধীন থাকলেও চিন্তাভাবনা এতটা পরাধীন ছিল না। দাদাসাহেব ফালকে সে চিন্তাধারারই এক অন্যতম প্রতিনিধি।
(অনুলিখন - সংকেত ধর)
6.88% Weekly Cashback on 2025 IPL Sports