Tollywood: ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!' ‘কাজ কাড়ার অভিযোগ মিথ্যে’, ফেডারেশনের পাশে হেয়ার স্টাইলিস্ট গিল্ড
4 মিনিটে পড়ুন . Updated: 25 Sep 2024, 03:01 PM IST
Share 
বাংলা নিউজ > বায়োস্কোপ > Tollywood: ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!' ‘কাজ কাড়ার অভিযোগ মিথ্যে’, ফেডারেশনের পাশে হেয়ার স্টাইলিস্ট গিল্ড
Share কেশসজ্জা শিল্পীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় টলিপাড়া এখন উত্তাল। কর্মক্ষেত্রে হয়রানির অভিযোগ এনেছেন ওই শিল্পী। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে টলিপাড়ায় থ্রেট কালচারের নানান অভিযোগ উঠছে। এবিষয়ে দু'দিন আগেই ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে 'থ্রেট কালচার' নিয়ে কড়া বার্তা দেয় ডিরেক্টরস গিল্ড। পাল্টা জবাব দিতে ছাড়েননি ফেডারেশনের সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস। আবার আজ বুধবার ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে লম্বা বিবৃতি জারি করেছে টেলি প্রযোজকদের সংগঠন WATP (The Welfare Association of Television Producers)। আর এবার ফেডারেশনের পাশে দাঁড়িয়ে বিবৃতি দিল সিনে অ্যান্ড ভিডিও হেয়ার স্টাইলিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ওরফে হেয়ার স্টাইলিস্ট গিল্ড (Cine & Video Hair Stylist Association)।
Federation of Cine Technicians and Workers of Eastern India-র ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করা সেই বিবৃতে মূলত ফেডারেশনের পাশে দাঁড়িয়ে মূলত নিন্দুকেদের জবাব দিয়েছে হেয়ার স্টাইলিস্ট গিল্ড। ঠিক কী লেখা হয়েছ তাদের বিবৃতিতে?
শুরুতেই ‘নমস্কার’ জানিয়ে সকলের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে, ‘এ রাজ্যের সকল সিনেমা, টেলিভিশন, ওটিটি, শর্ট ফিল্ম ও বিজ্ঞাপন নির্মাতাদের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত কলাকুশলী ও শিল্পীবৃন্দ ও আমাদের আপামর ভালোবাসার দর্শকবৃন্দ ও সাধারণ মানুষকে কিছু তথ্য জানানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। জল আমাদের মাথার উপর দিয়ে গড়িয়ে গিয়ে যখন প্রায় আমাদের মেরে ফেলেছিল সেই অবস্থায় আমরা সঙঘবদ্ধ হয়ে বাঁচার চেষ্টা করেছি। কিরকম আসুন একটু জানি।’
এরপর অভিযোগ করা হয়, ‘ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৬ টি গিল্ড এতদিন একসঙ্গে সঙঘবদ্ধভাবে কাজ করেছেন কিন্তু তার মধ্যে একটি গিল্ড সব সময় চেষ্টা করছে একপেশেভাবে তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার।’
কেশসজ্জাশিল্পীর আত্মহত্যার প্রসঙ্গ টেনে লেখা হয়, ‘কয়েকদিন আগে আমাদেরই এক সহকর্মী এক কেশসজ্জা শিল্পী আত্মহননের প্রচেষ্টা করেন। যা অত্যন্ত অনভিপ্রেত এবং দুঃখজনক। কিন্তু যে দাবি করা হচ্ছে যে তাকে তিন মাসের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছিল তা ঠিক নয়। এছাড়াও দাবি করা হয় তাকে কোনরকম কোন কাজ করতে দেওয়া হচ্ছিল না। কিন্তু আমরা প্রমানসহ বলতে পারি কি কি কাজ বর্তমানে তিনি করছিলেন। আমাদের কোন সহকর্মী যদি নিজের প্রচেষ্টায় কোন কাজ জোগাড় করেন তা কেড়ে নেওয়া আমাদের কাজ নয় বা এরকম আমরা করি না। আমরা সব সময় তাদেরকে জানাই যে আপনারা যদি আপনাদের সুরক্ষার বিষয়টা মাথায় রাখেন সেক্ষেত্রে আপনারা যেখানে কাজ করতে যাচ্ছেন সেটা গিল্ড এবং ফেডারেশনের জানা অত্যন্ত জরুরী। সেক্ষেত্রে পরবর্তীকালে আপনাদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত অথবা পারিশ্রমিক সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যায় আমরা যাতে এক হয়ে সেই সহকর্মীর হয়ে লড়তে পারি। কারণ আমরা এতদিন যাবৎ দেখেই এসেছি যারা এখন এত বড় বড় কথা বলছেন তাদের কোনদিনই কলাকুশলীরা সময়মতো পারিশ্রমিক পাচ্ছেন কিনা বা তারা কোন অমানবিক ঘটনার শিকার হচ্ছেন কিনা কোন কিছু নিয়েই কোন মাথাব্যথা ছিল না। নারী সুরক্ষা নিয়ে যদি এতই চিন্তা তাহলে আমাদের যারা মহিলা জুনিয়র আর্টিস্ট ও কো-আর্টিস্ট তাদের কথা কোনো দিন ভেবেছেন? Shooting spot এ তারা কোথায় বাথরুম ব্যবহার করেন, কোথায় পোশাক পরিবর্তন করেন কোনো দিন খোঁজ নিয়ে দেখেছেন? আমাদের hairstylist দের ব্যবহারের জন্য কোনো বাথরুম থাকে না। মেকআপ রুম থাকলেও সেখানে আমাদের বসতে পর্যন্ত দেওয়া হয় না। আমরা রোদে, বৃষ্টি তে বাইরে কি ভাবে সারাদিন থাকি কোনো দিন একটু খোঁজ নিয়েছেন? সবটাই আপনাদের কুমিরের কান্না। তারা সব সময় স্বার্থপর ভাবে শুধু নিজের টুকুই বুঝে নিতে ব্যস্ত থেকেছেন।’
বিবৃতিতে আরও লেখা হয়েছে, 'আপনারা প্রশ্ন তুলেছেন যে ফেডারেশন কি? ফেডারেশন তো শুধুমাত্র একটি ট্রেড ইউনিয়ন। আমরা বলছি ফেডারেশন আমাদের কাছে কি? ফেডারেশন আমাদের কাছে আমাদের শক্তি। আমাদের কাছে ইন্ডাস্ট্রিতে মাথা উঁচু করে কাজ করার চাবিকাঠি। দিনের পর দিন যে অমানবিক খাটুনি আমাদের দিয়ে করানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর স্তম্ভ। আমাদের আবেগ। কারণ আমরা জানি ফেডারেশন ছাড়া কেউ নেই যারা আমাদের কথা বলবে। তা এতদিনে প্রমাণিত।
আপনারাই প্রশ্ন তুলেছিলেন যে আমরা এতজন কলাকুশলী কেন ফেডারেশনকে মেনে চলি? তার একটাই উত্তর আমরাই ফেডারেশন। আমরা কোনো ব্যক্তি নই, আমরা সমষ্টি। আর আমাদের বর্তমান সভাপতি আমাদের পথপ্রদর্শক। আমরা জানি আমাদের কর্মপদ্ধতি গণতান্ত্রিক এবং আইন সম্মত।
আপনারা যে গায়ের জোরে, ক্ষমতার জোরে, বেআইনি উপায়ে আমাদের উপর জোর খাটানোর চেষ্টা করে চলেছিলেন আমরা শুধু তার প্রতিবাদ করতে চেয়েছি। আপনারা দীর্ঘদিন যাবৎ যে তুঘলকি কাজের কায়দা লাগু করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন আমরা তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চেয়েছি। যে দম বন্ধ করা, কুৎসিত, নিরাপত্তাহীন এবং হিংস্র পরিবেশ আপনারা আপনাদের ক্ষমতার জোরে কায়েম করে ইন্ডাস্ট্রিটাকে শেষ করে দিতে চাইছেন আমরা তার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছি। আপনাদের রূপ আমাদের কাছে স্পষ্ট এবং পরিস্কার।'
হেয়ার স্টাইলিস্ট গিল্ডের প্রশ্ন, 'তখন আপনারা কোথায় ছিলেন যখন আমাদের দিয়ে ২০ঘন্টা, ২২ঘন্টা, ২৬ঘন্টা একনাগাড়ে কাজ করানো হতো। যখন আপনাদের পারিশ্রমিক তো মিটিয়ে দিত কিন্তু আমাদের মতো কলাকুশলীদের পারিশ্রমিক আটকে দিত বা না দিয়ে পালিয়ে যেত। করোনা পরিস্থিতিতে যখন আমাদের সংসার চলছিল না। স্যার তখন আপনারা ছিলেন না। ছিল এই ফেডারেশন। আপনারা নিজেরাও তো নিজেদের সুপিরিয়োরিটি কমপ্লেক্সকে স্যাটিসফাই করার জন্য আমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। আমরা সেই অপমানগুলো ভুলিনি। আমরা ইন্ডাস্ট্রির সফট টার্গেট যাই হোক না কেন আমাদের উপর দাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ভুলে যাবেন না।আমরাও শ্রমের বিনিময়ে পারিশ্রমিক পাই তাই মাথা নীচু করে কাজ করার কোন প্রশ্নই আসে না।
আপনারা বলেছেন তুঘলকি কায়দা যে বেআইনি তা প্রমাণ করতে গোয়েন্দা লাগবে না তা সত্যি। গোয়েন্দা লাগেনি বরং আমরাই গোয়েন্দা হয়ে খুঁজে বের করেছি কোথায় কখন কিভাবে আপনারা বেআইনিভাবে এবং অমানবিকভাবে ২২ ঘন্টা,২৬ ঘন্টা কাজ করিয়েছেন, কোথায় আমাদের মহিলা সহকর্মীদের সুরক্ষার কথা না ভেবে মধ্যরাতে প্যাকআপের পর গাড়ি দিতে চাননি। আর তাতে আমাদের মাথার উপর ছিল ফেডারেশন। আর এই কারণেই ফেডারেশনকে কলুষিত করার আপনাদের এত প্রচেষ্টা। আপনাদের এত গাত্রদাহ।'
রবীন্দ্রনাথের 'দুই বিঘা জমি' উক্তি তুলে লেখা হয়, ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে!'
ফেডারেশন ভাঙতে চাওয়ার অভিযোগ তুলে লেখা হয়, 'শ্রেণীবিভেদ আর দুর্বলের উপর সবলের অনাচার-অবিচার সে আগেও ছিল আজও আছে। তবে এরপর আর যাতে না থাকে সেই বিষয়ে আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। আর একটা কথা মনে করিয়ে দিই আমরা সমস্ত কলাকুশলীরা এক ছিলাম এক আছি এবং এক থাকব। আমাদের প্ররোচনা দিয়ে লাভ হবে না। আপনাদের অভিসন্ধি আমরা ধরে ফেলেছি। স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নিজেদের গিল্ডের সন্মান নষ্ট করেছেন আর সাথে সাথে ফেডারেশন ভাঙার কাজে লিপ্ত রয়েছেন । ফেডারেশনের প্রায় সাড়ে আট হাজার সদস্যদের আবেগ ও ভালোবাসা আর বিশ্বাসে আঘাত করার চেষ্টা করেছেন।’
সবশেষে লেখা হয়, ‘আমরা চাই আমাদের কর্মক্ষেত্র সত্যি সত্যি ভয়হীন হোক। সত্যি সত্যি পক্ষপাতমুক্ত হোক এবং এই দুর্গোৎসবে আপনাদের শক্তির অপব্যবহারের এবং আপনাদের এই তুঘলকি শাসনের এবার সম্পূর্ণ বিনাশ হোক। শ্রমিক ঐক্য জিন্দাবাদ। ফেডারেশন জিন্দাবাদ।’
বায়োস্কোপ খবর
