মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রটি মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ লোকসভা কেন্দ্র। ১৯৫১ সাল থেকেই এখানে ভোট হচ্ছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের আবু তাহের খান সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এই কেন্দ্র থেকে। এবারও তিনি আছেন লড়াইয়ে। বিপক্ষে ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী সিপিএমের মহম্মদ সেলিম। অন্যদিকে বিজেপির গৌরীশংকর ঘোষও প্রবল ভাবে আছেন লড়াইয়ে।
এই লোকসভা কেন্দ্রটি সাতটি বিধানসভা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত। কেন্দ্রগুলি হল যথাক্রমে ভগবানগোলা, রানীনগর, মুর্শিদাবাদ, হরিহরপাড়া, ডোমকল, জলঙ্গি এবং করিমপুর। এই নির্বাচনী ক্ষেত্রটি মুর্শিদাবাদ জেলার অন্তর্গত এবং কিছু ক্ষেত্রে নদীয়া জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। ২০১৯ সালের তথ্য বলছে ১৫ লক্ষ ১২ হাজার ৯৮ জন ভোটদাতা এই কেন্দ্রে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
যেসব কেন্দ্রে বাম প্রার্থী আছে, তার মধ্যে জেতার সবচেয়ে ভালো সুযোগ এখানেই বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যে সবচেয়ে বামদের প্রতিষ্ঠিত মুখের অন্যতম সুবক্তা সেলিম। অন্যদিকে মুর্শিদাবাদে তিনি পাচ্ছেন অধীর চৌধুরীর প্রত্যক্ষ সমর্থন। তাঁর মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনেও উপস্থিত ছিলেন অধীর। তাই আশা করা হচ্ছে যে বাম-কংগ্রেস ভোট ট্রান্সফার ভালো রকমই হবে। অন্যদিকে সংখ্যালঘু ভোটও ভালো পরিমাণই পাওয়ার আশায় আছে বামেরা। তবে আবু তাহের যে সহজে ময়দান ছাড়বেন না, তা বলাই বাহুল্য। তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁর জন্য প্রচার করেছে জোরালো ভাবে। কোনও ভাবে মুসলমান ভোট যদি ভাগ হয়, তাহলে লড়াইয়ে থাকতে পারে বিজেপি প্রার্থীও। তবে মোটের ওপর এখানে গেরুয়া দলের সম্ভাবনা খুব বেশি নয়।
আসুন জেনে নেওয়া যাক লোকসভা নির্বাচনের মুর্শিদাবাদ লোকসভার ফলাফল। ১৯৫২ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছিলেন জাতীয় কংগ্রেসের মোহাম্মদ খোদা বুক্স। ১৯৫৭ সালেও মোহাম্মদ খুদা বুক্স এই কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। তবে ১৯৬২ লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে জয়যুক্ত হন নির্দল প্রার্থী সৈয়দ বুদরুদ্দোজা। ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৫ হাজার ভোটে জয়যুক্ত হন সৈয়দ বুদরুদ্দোজা। ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী আবু তাহের চৌধুরী ২০ হাজারের অধিক ভোটে জয়যুক্ত হন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে। জরুরি অবস্থা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সালে নির্বাচনে রাজ্য জুড়ে ধরাশায়ী হয় কংগ্রেস। সারা দেশের সঙ্গে সঙ্গে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রেও ভালো ফলাফল করে ভারতীয় লোক দল। ভারতীয় লোক দলের সৈয়দ কাজিম আলী মির্জা ৩৬ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে।
১৯৮০ সালের নির্বাচনে অবশ্য কংগ্রেস তাদের পুরনো ভোট বেশ খানিকটা ফিরে পায়। তবে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে জয়যুক্ত হয় কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া মার্কসবাদী’র সৈয়দ মাসুদ আল হোসেন। তার জয়ের মার্জিন ছিল ৬৮ হাজার ৭৫৫ ভোট। ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সৈয়দ মাসুদ আল হোসেন জয়যুক্ত হলেও তার ভোটের ব্যবধান ছিল ৬,২৬২। পশ্চিমবাংলায় বামফ্রন্টের শাসনকালেও বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ভালো ফলাফল করে এসেছে এই সময়কালে। ১৯৮৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৬-এর লোকসভা নির্বাচনে পরপর জয়যুক্ত হন সৈয়দ মাসুদ আল হোসেন। ১৯৯৮ সালেও সিপিআইএম তাদের গড় ধরে রাখে। এবার সংসদ নির্বাচিত হন মইনুল হাসান। ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে মইনুল হাসান জয়যুক্ত হন। জয়ের মার্জিন ছিল প্রায় ১ লক্ষ ২৩ হাজার ভোট। তবে ২০০৪ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি সিপিআইএমের থেকে ছিনিয়ে নেয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। আব্দুল মান্নান হোসেন এই কেন্দ্র থেকে ১৫ হাজার ৪৮০ ভোটে জয়যুক্ত হন। ২০০৯ সালের নির্বাচনেও তিনি এই কেন্দ্র থেকে আব্দুল মান্নান হোসেন সাংসদ নির্বাচিত হন ৩৫ হাজার ৬৪৭টি ভোটে। ২০১৪ সালে বাংলায় সিপিআইএমের ভরাডুবির মাঝে বদরুদ্দোজা খান জয়ী হন। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবারের জন্য মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রটি জয়ের স্বাদ পায় তৃণমূল কংগ্রেস। আবু তাহের খান তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ২ লক্ষ ২৬ হাজার ৪১৭টি ভোটে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৯ সালের ভোটে ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তবে ২০১৪ সালে ৮৫ শতাংশ মানুষ এই নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন।