বছর ঘুরলেই বিধানসভার ভোট। তার আগে এক দিলীপ ঘোষ নিয়েই তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। দিঘায় জগন্নাথ ধামের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষের 'সহাবস্থান' নিয়ে সবথেকে বেশি হইচই করছে বিজেপি তথা গেরুয়া শিবিরই। যার যুৎসই জবাব দিতে কসুর করছেন না দিলীপ ঘোষও। পাশে পেয়েছেন তাঁর স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারকেও।
বস্তুত, আজীবন আরএসএস-এর ভাবাদর্শে দীক্ষিত দিলীপ ঘোষের আচমকা বিয়ে এবং তারপরই দিঘায় জগন্নাথ মন্দির দর্শন করতে গিয়ে 'রাজনৈতিক শত্রু' মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে সৌজন্যের হেতু বোধগম্য হচ্ছে না বিজেপিরই বড়, মেজো, সেজো, ছোট নেতাদের! এহেন প্রেক্ষাপটে দিলীপ ঘোষকে নিয়ে বেশ কিছু খবর সামনে এসেছে।
দ্য ওয়াল অনুসারে - দিলীপ ঘোষের দিঘা যাত্রার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা হয়েছে বিজেপি ও সংঘের একেবারে শীর্ষস্তরে। তাতে নাকি বেশ কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সংঘের এই পূর্ব প্রচারকের বিরুদ্ধে!
শোনা যাচ্ছে, দিলীপের আচরণে নাকি বেজায় চটেছে আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে গতকাল (শুক্রবার - ২ মে, ২০২৫) বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা ও আরএসএস-এর যৌথ সাধারণ সম্পাদক অরুণ কুমারের মধ্য়ে আলোচনা হয়। সেই বৈঠকে স্থির করা হয়েছে, আপাতত দিলীপ ঘোষকে বিজেপির কোনও বৈঠক বা কর্মসূচিতে ডাকা হবে না! একইভাবে দিলীপ ঘোষ কোনও কর্মসূচির আয়োজন করলে বিজেপির অন্যান্য নেতাকর্মীও তাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না! বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বের তরফে দলের সমস্তস্তরের নেতাকর্মীদের স্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, আগামী ৬ মে বিজেপির একটি রাজ্যস্তরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। যেখানে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন সুনীল বনশল। শোনা যাচ্ছে, সেই বৈঠকে দিলীপকে ডাকা হবে না। যদিও এই সমস্ত পদক্ষেপই করা হচ্ছে তলে তলে। প্রকাশ্যে এ নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করছেন না।
সূত্রের দাবি, দিলীপ ঘোষকে নিয়ে শুধুমাত্র বিজেপি নেতৃত্ব বা আরএসএস শীর্ষ নেতৃত্বই ক্ষুব্ধ নয়, তাঁকে নিয়ে বিব্রত বোধ করছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বাংলার নেতারাও। বাংলায় এই সংগঠনের প্রান্ত প্রচারক হলেন জলধর মাহাত। তিনিও আপাতত দিলীপ ঘোষের সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখারই পক্ষপাতী বলে শোনা যাচ্ছে! এ নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিজেপি ও সংঘ নেতৃত্বের কথাও হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, দিলীপ ঘোষ কিন্তু আছেন দিলীপ ঘোষেই। তাঁকে যাঁরা আক্রমণ করছেন, তাঁদের চাঁচাছোলা ভাষায় জবাব দিচ্ছেন তিনি। মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাংলা থেকে লোকসভায় সর্বাধিক ১৮টি আসন এবং বিধানসভায় সর্বোচ্চ ৭৭টি আসন বিজেপি সেই সময়েই জিতেছিল, যখন তিনি দলের রাজ্য সভাপতি ছিলেন।
এই তথ্য ঐতিহাসিকভাবে সত্যি হলেও বিজেপি নেতৃত্ব দিলীপের এই কৃতিত্ব লাভের চেষ্টাকেও সুনজরে দেখছে না বলেই জানা গিয়েছে। ফলত - আপাতত গেরুয়া শিবিরের অন্দরে দিলীপ ঘোষকে অঘোষিত বয়কটের মুখে পড়তে হবে বা 'একঘরে' হয়ে থাকতে হবে বলেই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলের। তাতে ভোট মরশুমের আগে বাংলায় রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি বাড়তে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে।