দক্ষিণ কলকাতার একটি ল কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা রাজ্যে। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে টিএমসিপির প্রাক্তন দাপুটে নেতা মনোজিৎ মিশ্র সহ তিনজন। গ্রেফতারের পরেই তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক অভিযোগ সামনে আসছে। কসবার গণধর্ষণ কাণ্ডে মনোজিৎ গ্রেফতার হওয়ার পরই মুখ খুলতে শুরু করেছেন আতঙ্কে থাকা বহু ছাত্রছাত্রী। (আরও পড়ুন: 'সরকারের ভূমিকা আছে', কসবা কাণ্ডে বিস্ফোরক আরজি করের নির্যাতিতার বাবা)
আরও পড়ুন: কসবা কলেজে গণধর্ষণকাণ্ডে রয়েছে সাক্ষী, দাবি নির্যাতিতার, কে সেই ব্যক্তি?
কলেজের এক সময়কার ছাত্রীদের অভিযোগ, মনোজিতের দাপটে দীর্ঘদিন ধরে কলেজে টিকেই থাকতে পারেননি অনেকে। হুমকি, মারধর, এমনকি অপহরণ পর্যন্ত সবই ছিল তাঁর রাজত্বে ‘স্বাভাবিক’ ঘটনা। শুধু ছাত্রছাত্রী নয়, শিক্ষকরাও ভয়ে চুপ করে থাকতেন বলে অভিযোগ। বিশেষ করে আরজি কর কাণ্ডের পর গত বছরের ১৪ অগস্ট ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন এই কলেজের কয়েকজন পড়ুয়া। আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার বেহাল অবস্থার বিরুদ্ধে সেই দিন প্রতিবাদে সামিল হন তাঁরা। ফেসবুক লাইভও করেন অনেকে। আর তখন থেকেই শুরু হয় ভয়ঙ্কর এক অধ্যায়। (আরও পড়ুন: কসবা গণধর্ষণ কাণ্ডে গ্রেফতার আরও এক, পুলিশের জালে এবার কে?)
আরও পড়ুন: গলায় কামড়, যৌনাঙ্গে ক্ষত, সামনে এল কসবা কাণ্ডে নির্যাতিতার মেডিক্যাল রিপোর্ট
অভিযোগ, মনোজিৎ ও তার অনুগামীরা ফেসবুক দেখে দেখে তালিকা তৈরি করেন যে কারা আন্দোলনে গিয়েছিলেন। এরপর একে একে ফোন করে কলেজে ডেকে পাঠানো হয় তাঁদের। কেউ না এলে হুমকি। কেউ প্রতিবাদ করলে মার। এক ছাত্র তো লেক মলের সামনে থেকে অপহৃত হয়ে মার খেয়ে রাস্তায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে ছিলেন।এমনও অভিযোগ উঠেছে। শুধু হুমকি-হামলা নয়, সেই সময় অপহরণ, মারধর-সহ একাধিক ধারায় মামলা হয় মনোজিতের বিরুদ্ধে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন একাধিক পড়ুয়া। এমনকি সূত্রের দাবি, তাঁর নামে অন্তত ২০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। ২০১৭ সালে কলেজে ভাঙচুর, সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙার মতো ঘটনাতেও নাম জড়িয়েছিল তাঁর। একবার প্রিন্সিপালের অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও বারবার বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এমনই অভিযোগ ছাত্রছাত্রীদের।
জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে ওই আইন কলেজে ভর্তি হন মনোজিৎ। পাশ না করায় ডিসকলেজিয়েট হয়ে যান। কিন্তু তাতেও ক্যাম্পাস ছেড়ে যাননি। বরং টিএমসিপি-র ইউনিট প্রেসিডেন্ট হয়ে দাপট আরও বাড়ে। পরে দক্ষিণ কলকাতার সাংগঠনিক দায়িত্বও পান বলে জানা যায়। যদিও ছাত্র পরিষদ নেতৃত্ব দাবি করেছে, তিনি কোনও পদেই ছিলেন না।
প্রাক্তন ছাত্রদের অভিযোগ, কেউ মনোজিতের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই ক্যাম্পাসের ভিতর ও বাইরে শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে হতো। এমনকি ছাত্রীরা অভিযোগ করলেও তাঁদের বাড়ি বা মেসে গুন্ডা পাঠিয়ে ভয় দেখানো হতো। এক প্রাক্তন ছাত্রের কথায়, রাত দখলে যাওয়া ছিল তাঁদের ‘অপরাধ’। সেই কারণেই অন্তত ১০-১২ জন ছাত্রছাত্রী এক বছর কলেজে ঢুকতে পারেননি। আর এক ছাত্র জানাচ্ছেন, ২০২৪ সালে মনোজিতকে কলেজের ‘ক্যাজুয়াল স্টাফ’ হিসেবে নেওয়া হবে শুনে তাঁরা প্রতিবাদ করেছিলেন, কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।
মনোজিতের দুই অনুগামী প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জইব আহমেদ গণধর্ষণের ঘটনায় তাঁর সঙ্গে অভিযুক্ত। প্রমিত দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, থাকে হাওড়ায়। জইব প্রথম বর্ষের বাড়ি তিলজলায়। অভিযোগ, কলেজে টাকা নিয়ে ভর্তি, মাদক সেবন, অশালীন ফেস্ট সবেতেই এই তিনজনের নাম ঘুরে ফিরে আসে। ধর্ষণের সময় ঘরের বাইরে পাহারা দিয়েছিল এই দু’জন। এমনটাই জানানো হয়েছে অভিযোগপত্র।