আইআইএম কলকাতায় ধর্ষণ মামলায় এবার জামিন পেল অভিযুক্ত। এর আগে একাধিকবার গোপন জবানবন্দির জন্যে আদালতে অভিযোগকারী তরুণীকে ডাকা হলেও তিনি যাননি। এই আবহে ১৯ জুলাই আলিপুর আদালত জামিন মঞ্জুর করেছে অভিযুক্তের। ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে জামিন মঞ্জুর করা হয়। এই নিয়ে অভিযুক্তের আইনজীবী বলেন, '১১ জুলাই ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত কোনও মেডিকো-লিগ্যাল পরীক্ষা হয়নি। তদন্তের গাফিলতি স্পষ্ট। একজন মেধাবী এমবিএ ছাত্রের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।'
গোটা ঘটনা নিয়ে অভিযুক্তের আইনজীবী বলেন, 'নির্যাতিতাকে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি একজন মনোবিদ। সমাজমাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পরে কাউন্সেলিং করাতে যান। তবে জোকা আইআইএম কোনও সাধারণ প্রতিষ্ঠান নয়, সেখানে যে কেউ ঢুকতে পারে না চাইলেই যাবে। অসুস্থ হলে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে ডাক্তার আসতে পারে। সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট করতে গেলেও অনুমতি নিতে হয়। অভিযোগপত্রে বলা হচ্ছে, নির্যাতিতা সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে ঢুকেছেন। আর সেখান তিনি বেরিয়েছেন রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে। তবে গেট এন্ট্রি কীভাবে হল সেটাও স্পষ্ট নয়। এরপর জোকা থেকে ৪.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত থানায় কীভাবে গেলেন অভিযোগকারী? এরপর বারবার তাঁকে ডাকা হয়েছে, কিন্তু তিনি আসেননি। কেন তিনি আসেননি, সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনও কিছু জানাননি অফিসার। তিনি ট্রমায় আছেন কি না, বা অসুস্থ কি না, সেই বিষয়ে পুলিশ কোনও কিছু বলেনি।'
উল্লেখ্য, আইএআইএম ধর্ষণ কাণ্ডে ক্রমেই ধোঁয়াশা বাড়ছিল। কারণ একাধিকবার ডাকা হলেও গোপন জবানবন্দি দিতে আদালতে যাননি নির্যাতিতা। ১৩, ১৫, ১৬ এবং ১৮ জুলাই ডাকা হয়েছিল নির্যাতিতাকে। তবে তিনি আসেননি। এর আগে নির্যাতিতার বাবা আবার দাবি করেছিলেন, মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়নি। এই সবের মাঝেই ১৯ জুলাই অভিযুক্ত পড়ুয়ার পুলিশ হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়। পুলিশ তাঁকে আদালতে পেশ করলে জামিনের আবেদন জানান অভিযুক্ত। এই আবহে তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কসবা গণধর্ষণের রেশ কাটতে না কাটতেই আইআইএম কলকাতায় ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ, কলেজের বয়েজ হস্টেলে ধর্ষণ করা হয় এক তরুণীকে। অভিযুক্ত দ্বিতীয় বর্ষের ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়াকে এরপর পুলিশ গ্রেফতারও করে। তবে অভিযোগকারীর বাবা দাবি করেন, মেয়ে ধর্ষণের শিকার হননি। যা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছিল। এদিকে এর আগে পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগে নির্যাতিতা দাবি করেছিলেন, ক্যাম্পাসিংয়ের নাম করে তাঁকে ডেকেছিলেন সেই অভিযুক্ত। এরপর 'অন্য কাজের' বাহানায় তাঁকে বয়েজ হস্টেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে তাঁকে খাবার খেতে দেওয়া হয়েছিল। তা খেয়েই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন সেই তরুণী। নির্যাতিতার অভিযোগ ছিল, আচ্ছন্ন অবস্থাতেই তাঁর ওপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছিল সেই পড়ুয়া। তাঁকে ধর্ষণ করে সে। পরে জ্ঞান ফিরলে সেই তরুণী দেখেন তিনি বয়েজ হস্টেলে। এই আবহে থানায় গিয়ে সেই পড়ুয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। নিরাপত্তারক্ষী ও কলেজের অন্যান্য কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হয়। তবে পুলিশি তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে এবার।