২০২৬ বিধানসভা ভোটের আগে সাংগঠনিক ভিত শক্ত করতে পূর্ব মেদিনীপুরে ব্যাপক রদবদল করল তৃণমূল কংগ্রেস। জেলার মোট ২৫টি ব্লকের মধ্যে ১৯টিতেই নতুন সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচটি শহর কমিটির শীর্ষ পদেও এসেছে নতুন মুখ। বৃহস্পতিবার রাতেই দলের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত হয় তালিকা। আর এর পরেই দলের অন্দরে বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়েছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ।
আরও পড়ুন: তৃণমূল কর্মীকে বাবা বানিয়ে ভুয়ো আধার ও ভোটার কার্ড তৈরি, গ্রেফতার বাংলাদেশি
সবচেয়ে বেশি বিতর্ক ঘিরে শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক। সেখানে সভাপতি করা হয়েছে বিভাস করকে। তিনি ২০২১ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। লোকসভা ভোটের আগে ফের তৃণমূলে ফেরা বিভাসকে সভাপতি করার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে ইতিমধ্যেই দুই অঞ্চল সভাপতি পদত্যাগ করেছেন। রঘুনাথপুর-১ এর রাজেন্দ্রপ্রসাদ জানা ও শান্তিপুর-২ এর বিশ্বজিৎ মাইতি লিখিত পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন জেলা সভাপতির কাছে। পাঁশকুড়া শহরে সভাপতি পদে বদলও তৈরি করেছে ক্ষোভ। সেখান থেকে সরে গিয়েছেন বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্রের স্ত্রী সুমনা মহাপাত্র। ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি বলেছেন, তাঁদের পরিবার বর্তমান রাজনীতির ধারা মানতে পারছেন না। তাঁরা তোলাবাজির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। আবার বিরোধীদের বিরুদ্ধে অশালীন ভাষা ব্যবহার করা তাঁদের ধাতে নেই।
তমলুক সাংগঠনিক জেলায় ১১টি ব্লক ও তিনটি পুরসভা রয়েছে। একমাত্র মহিষাদল বাদে বাকি সব জায়গাতেই নেতৃত্বে পরিবর্তন হয়েছে। হলদিয়া, সূতাহাটা ও কোলাঘাটে ফেরানো হয়েছে আগের সভাপতিদের অশোক মাইতি, তুষার মাইতি ও অসীম মাজিকে। তমলুক ব্লককে ভাগ করা হয়েছে তিন ভাগে, প্রতিটি অংশে আলাদা সভাপতি নিয়োগ করা হয়েছে। বর্তমান সভাপতি অর্ণব চক্রবর্তীকে সরিয়ে ফের দায়িত্বে ফিরেছেন প্রদ্যোৎ বর্মণ। নন্দীগ্রাম-১ ও ২ ব্লকে এখনও সভাপতি ঘোষণা হয়নি, সেখানে কোর কমিটি গঠন করা হতে পারে।
অন্যদিকে কাঁথি সাংগঠনিক জেলায় মোট ১৪টি ব্লক রয়েছে। ভগবানপুর-১, পটাশপুর-১ ও ২, রামনগর-১ এবং কাঁথি-৩ ছাড়া বাকি ন’টি ব্লকের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয়েছে। কাঁথি ও এগরা শহর কমিটিতেও এসেছে নতুন সভাপতি। এখানেও কিছু নিয়োগকে কেন্দ্র করে অন্দরমহলে অসন্তোষ। যেমন, চণ্ডীপুরে সভাপতি হয়েছেন স্নেহাংশুশেখর পণ্ডিত। তিনি প্রাক্তন বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্যের বিরোধী শিবিরের। সম্প্রতি বর্তমান বিধায়ক সোহম চক্রবর্তী তাঁকে প্রকাশ্যে আক্রমণ করেছিলেন। দেশপ্রাণ ব্লকে সভাপতি হয়েছেন দেবাশিস ভুঁইয়া, যিনি আবার দাপুটে নেতা তরুণ জানার বিরোধী শিবির থেকে উঠে এসেছেন।
এই ব্যাপক রদবদলকে ঘিরে জেলায় যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, তা স্বীকারও করেছেন তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজিত রায়। তাঁর কথায়, দু’-একটি জায়গায় ক্ষোভ আছে। তবে দলের ঐক্যের স্বার্থে খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে।