এক সাংসদ তাঁকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। অপরজন আবার 'ছোটোবেলা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক' বলছেন। পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে এখনও দু'মুখো নীতি বজায় রাখল তৃণমূল।শনিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। সেখানে প্রত্যাশামতোই শুভেন্দু নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জবাবে কাকলি বলেন, 'শুভেন্দু অধিকারী সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের উচ্চপদে আসীন একজন কর্মকর্তা। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে সরকারের যে ক্যাবিনেট আছে, তাতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রী এবং ছোটোবেলা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক। এটুকু আপনাকে আমি উত্তর দিতে পারি।'অথচ কাকলির সেই মন্তব্যের ঘণ্টা চব্বিশ আগেই নাম না করে শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন। কাকলি অবশ্য দাবি করেন, কল্যাণ নাকি শুভেন্দুকে 'দলের ছেলে' বলেছেন। তাঁর অন্য কিছু জানা নেই। কিন্তু একই দলের দুই সাংসদের ভিন্ন অবস্থান কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু কাকলি নয়, শুভেন্দুর প্রতি নরম মনোভাব নিয়েছেন সুখেন্দুশেখর রায়, ব্রাত্য বসু, পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা। তাহলে কি কল্যাণ বেসুরো গাইছেন নাকি তার পিছনে অন্য কোনও চাল আছে?রাজনৈতিক মহলের একাংশের অভিমত, তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'অনুমোদন' ছাড়া এরকম লাগাতার আক্রমণ শানাতে পারতেন না কল্যাণ। একইসঙ্গে পার্থ, সুখেন্দুশেখরের মতো শীর্ষ নেতৃত্বও যে নরম সুর নিয়েছেন, তাও মমতার 'অনুমোদন' ছাড়া সম্ভব নয়। তাঁদের বক্তব্য, সম্ভবত শুভেন্দু নিয়ে আগে থেকে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে না তৃণমূল। শুভেন্দু ছাড়া পূর্ব মেদিনীপুরে যে তৃণমূল ধাক্কা খাবে, তা ভালোভাবেই জানেন ঘাসফুল শিবিরের শীর্ষনেতারা। তাই সমঝোতার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। আবার মূলত একদিকে থেকে কঠোর অবস্থান রেখে বজায় রেখে বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে 'অভিমান' হলেও দলের 'সিদ্ধান্ত' মানতেই হবে। ফলে দক্ষিণবঙ্গের যে সাংসদের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ শুভেন্দুর, তাতে ওই সাংসদ পিছু হটবেন না।শুভেন্দুও অবশ্য কম কিছু যান না। তিনিও কখনও ‘বড়’ ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। কখনও আবার জানাচ্ছেন, দল থেকে তাঁকে ‘তাড়ানো’ হয়নি বা তিনি নিজেও দল ‘ছাড়েননি’। তবে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করেননি শুভেন্দু।রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, দু'পক্ষই যেমন স্নায়ুর লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনই জল মাপা হচ্ছে। কেউই প্রথম ‘ধাক্কা’ দিতে চাইছে না। তাই শুভেন্দু-জল্পনা এখনই শেষ হচ্ছে না। বরং বুঝেশুনে এগোবে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের।