নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ। অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ বলেই গণ্য় করা হয়। আর সেই অপরাধের মোকাবিলায় রাজ্যের কোন থানা এগিয়ে রয়েছে। বছর শেষে তারই হিসেব দিল রাজ্য পুলিশ।
রাজ্য পুলিশ রীতিমতো একাধিক মামলায় সাফল্যের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছে, বিদায়ী বছরে নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধের মোকাবিলায় অগ্রণী হল জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ।
রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে,
মহিলা ও শিশু সুরক্ষায় এবছর উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশের একাধিক থানা। বর্ষশেষে তারই কিছু নজির তুলে ধরেছে রাজ্য পুলিশ। সেই সঙ্গে একাধিক মামলায় কীভাবে সাফল্য এসেছিল সেটাও তুলে ধরা হয়েছে রাজ্য পুলিশের তরফে।
রাজ্য পুলিশের তরফে এনিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে বিস্তারিতভাবে লেখা হয়েছে।
১। নাগরাকাটা থানা, কেস নং ১৪৬, ৩.৯.২০১৪
২০১৪ সালের ৩০ অগস্ট ১৩ বছরের এক কিশোরীর উপর যৌন নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত হয় বলদেব কিস্কু, মামলায় তদন্ত করেন সাব-ইনসপেক্টর অনিন্দ্য ভট্টাচার্য। দীর্ঘ বিচারপর্বের শেষে এ বছরের ৪ ডিসেম্বর বলদেবের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা ঘোষণা করেন আদালত।
২। বানারহাট থানা, কেস নং ১৬৯, ২২.৯.২০১৯
নিউ চামুরচি চেকপোস্ট, পানিটাঙ্কি এলাকার ঘটনা, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯। সকাল ন'টা নাগাদ প্রতিবেশী শঙ্কর প্রধানের বাড়িতে যায় ১৫ বছরের এক কিশোরী। একা পেয়ে তাকে ধর্ষণ করে শঙ্কর। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে ঘটনা সবিস্তারে জানায় আতঙ্কিত মেয়েটি। তদন্তে নামেন সাব-ইনসপেক্টর পরীক্ষিৎ পাল। চলতি মাসের ১০ তারিখ পকসো আইনের অধীনে অভিযুক্তকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা ঘোষণা করেন বিশেষ পকসো আদালত।
৩। বানারহাট থানা, কেস নং ৯৭, ৮.৬.২০১৬
হলদিবাড়ি চা বাগানে কাজে ব্যস্ত মা, সেই সুযোগে তাঁর নাবালিকা মেয়েকে দুপুর বারোটা নাগাদ নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বন্ধ ঘরে যৌন নির্যাতন চালায় স্থানীয় বাসিন্দা রাজেন মুণ্ডা। গত ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত মামলার রায়ে রাজেনের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন বিশেষ পকসো আদালত। মামলায় তদন্তকারী অফিসার ছিলেন সাব-ইনসপেক্টর ক্ষীরোদরঞ্জন রায়।
৪। কোতোয়ালি থানা, কেস নং ১৩৫, ১৪.০৭.২০১৫
কোতোয়ালি থানার অন্তর্ভুক্ত পাহাড়পুর হাকিমপাড়ার এক বাসিন্দা অভিযোগ জানান, ২০১৫ সালের ১২ জুলাই সকাল এগারোটা নাগাদ তাঁর ও তাঁর স্বামীর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে তাঁদের নাবালিকা কন্যার উপর যৌন নির্যাতন করার চেষ্টা করে বাবলু রায়। তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন অ্যাডিশনাল সাব-ইনসপেক্টর অভিজিৎ দে সরকার। বিচারে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানার সাজা ঘোষণা করেছেন বিশেষ পকসো আদালত।
৫। ধূপগুড়ি থানা, কেস নং ৫০১, ২৯.১১.২০২১
মাগুরমারি এলাকার এক বাসিন্দা অভিযোগ জানান, বাড়িতে ঢুকে তাঁর নাবালিকা মেয়েকে জামাকাপড় খোলার হুকুম দেয় অভিযুক্ত রমজান আলি। মেয়েটি রাজি না হওয়ায় তাকে গায়ের জোরে কাবু করে, মুখ বেঁধে যৌন নির্যাতন করে রমজান, হুমকি দেয়, কাউকে জানালে ফল হবে মারাত্মক। তবে ঘটনাস্থলে মেয়েটির এক আত্মীয় এসে পড়ায় পালাতে বাধ্য হয় রমজান। মামলায় তদন্তের দায়িত্ব নেন সাব-ইনসপেক্টর শশধর সিংহ রায়, বিচারপর্ব শেষ হয় গত ১৮ ডিসেম্বর। বিচারে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে রমজান আলির।
৬। মহিলা/কোতোয়ালি থানা, কেস নং ২৭, ১৮.২.২০১৫
বিবেকানন্দ পল্লীর এক বাসিন্দা অভিযোগ দায়ের করেন, ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় বাসিন্দা বচ্চন জোরদারের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হয় তাঁর পাঁচ বছরের শিশুকন্যা। তদন্তভার গ্রহণ করেন সাব-ইনসপেক্টর কেলসাং শেরপা। মামলার রায় বেরোয় ২০ ডিসেম্বর, বিচারে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা ঘোষণা করেন বিশেষ পকসো আদালত, সঙ্গে নির্দেশ দেন শিশুটিকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ৪০ হাজার টাকা প্রদানের।
৭। কোতোয়ালি থানা, কেস নং ৫২৯, ১৬.৮.২০১৭
নিউ জলপাইগুড়ি থানা এলাকার হরিচরণভিটা বলরামের বাসিন্দা এক মহিলা অভিযোগ জানান, তাঁর ১৫ বছরের মেয়েকে আমবাড়ি এলাকায় ফুটবল খেলা দেখাতে নিয়ে যায় তার কয়েকজন বন্ধু। সেখান থেকে তারা যায় বড়াগঞ্জ মন্দির, যেখান থেকে কিশোরীকে জোর করে নিজের বাইকে তুলে নিয়ে যায় রবি রায়, এবং তার উপর যৌন নির্যাতন করে তাকে আমবাড়ি বাজারে নামিয়ে উধাও হয়ে যায়। মামলায় তদন্তভার ন্যস্ত হয় সাব-ইনসপেক্টর শিবু করের উপর, রায় প্রকাশিত হয় গত ২১ ডিসেম্বর। বিচারে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার সাজা ঘোষণা করেছেন বিশেষ পকসো আদালত।