'আসলে আরএসএস-এর লোকেরাই তৃণমূলের জামা পরে বসে আছে!' সংবাদমাধ্যমে যাঁর মুখে এই মন্তব্য শোনা গিয়েছে, তিনি প্রবীণ সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। আর যাঁকে উদ্দেশ করে এই মন্তব্য করা হয়েছে, তিনি নবদ্বীপ পৌরসভার চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা বিমানকৃষ্ণ সাহা।আপাতত খবরে রয়েছেন এই বিমানকৃষ্ণ। নেপথ্যে রয়েছে তাঁর একটি ভিডিয়ো বার্তা। যেখানে তাঁকে নবদ্বীপের মানুষের উদ্দেশে বলতে শোনা গিয়েছে, 'নবদ্বীপবাসীর কাছে পুরসভার পক্ষ থেকে আবেদন রেখেছি ১৩-১৫ মার্চ পর্যন্ত, এই তিনদিন নিরামিষ খান। আমরা আবেদন রেখেছি। আইন নয়। আমার মনে হয়, আইনের মতোই মানুষ সেটা ধরে নেবে ও পালন করবে। এখানে চৈতন্যদেবের আর্বিভাব, যাঁকে আমরা ভগবান বলি। তাঁর আর্বিভাব তিথিতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত আসছেন এখানে। তাঁরা অধিকাংশই নিরামিষভোজী।'খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এই মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। কারণ, এক তো তিনি যে দলের সঙ্গে যুক্ত, সেই দলের সর্বোময় নেত্রী থেকে শুরু করে সকলস্তরের নেতা ও কর্মীরা সারাক্ষণই বলেন, কে কী খাবেন, কী পরবেন, সেটা একেবারেই সেই ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিষয়। যে কথা ষোলোয়ানা সঠিক। আমাদের দেশের সংবিধানও সেকথাই বলে। অথচ, সেই দলের সদস্য হয়েই বিমানকৃষ্ণ কার্যত ফতোয়া জারি করার চেষ্টা করেছেন, সহনাগরিকদের খাদ্যাভ্য়াসের উপর খবরদারি করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ। এই ধরনের আচরণ গেরুয়া শিবিরের নেতাদের মধ্যে দেখা গেলেও তৃণমূলে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে বিরল।উপরন্তু, বিমানকৃষ্ণ বলেছেন - তিনি 'পুরসভার তরফে' মানুষের কাছে এই 'আবেদন' করছেন, যা নাকি মানুষ 'আইন' হিসাবেই মান্য করবে! এক্ষেত্রে তাঁর এই মন্তব্য করার অধিকার ও এক্তিয়ার নিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে।তিনি ভারতের সংবিধান ও আইন অনুসারে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে একটি পদে বসেছেন। খাদ্যাভ্য়াস নিয়ে তিনি নিজে কী মানছেন, সেটা একেবারেই তাঁর নিজস্ব বিষয়। কিন্তু, পুরসভার মতো একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে এমন মন্তব্য করার, বলা ভালো ফতোয়া জারি করার অধিকার তাঁকে কি ভারতের সংবিধান দিয়েছে?ঠিক এই জায়গা থেকেই বিমানকৃষ্ণের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিকাশরঞ্জন। সংবাদমাধ্যমে তাঁর মন্তব্য উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, 'এঁরা তো আরএসএস। এঁরা তৃণমূলের জামা পরে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন। ওঁদের এক-একজন এক-এক রকমের কথা বলেন, একটা ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেন। এঁরা প্রকৃতপক্ষে আরএসএস-এর কর্মসূচি রূপায়িত করছেন।'বিকাশরঞ্জনের আরও অভিযোগ, এই ধরনের লোকজন ধর্মের প্রকৃত অর্থ নিয়ে মোটেও ওয়াকিবহাল নন। বদলে ধর্মকে হাতিয়ার করে এঁরা মানুষকে বিভ্রান্ত করেন। তাঁর কথায়, 'যে ভদ্রলোক বলেছেন, যে মাছ মাংস খাবেন না, তাঁকে অবিলম্বে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। সংবিধানবিরোধী কথা বলছেন। ভারতবর্ষে সংবিধান পরিচালিত শাসনব্যবস্থা রয়েছে। চৈতন্যদেবের কোন আদর্শের কথা তিনি বলছেন? চৈতন্যদেবের তো আদর্শ ছিল, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সর্বধর্ম সমন্বয়। ওঁরা এসব জানেন না। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে।'অন্যদিকে, বিজেপি নেতৃত্ব আবার এই ঘটনায় তাদের চিরাচরিত হিন্দু তাস নিয়ে খেলা শুরু করে দিয়েছে। তাদের বক্তব্য, হিন্দুরা জেগে উঠছে বলে তৃণমূল কংগ্রেস ভয় পেয়েছে। আর তাই দলের নেতাকে এমন সব মন্তব্য করতে হচ্ছে। তবে, খুব স্বাভাবিকভাবেই বিমানকৃষ্ণের মন্তব্যের বিরোধিতা করেনি তারা।